2025-06-26
Ramnagar, Agartala,Tripura
রাজ্য স্বাস্থ্য

জিবি হাসপাতালে রাজ্যে প্রথম খাদ্যনালীর জটিল অস্ত্রোপচার

জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :-রাবার প্রসেসিং এর অ্যাসিড খেয়ে খাদ্যনালী নষ্ট হয়ে যাওয়া মধুপুরের কৈয়াঢেপার নিবাসী এক যুবকের সফল অস্ত্রোপচার গত ৫ জুন জিবি হাসপাতালে করা হয়েছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতই যুবকটির নষ্ট হয়ে যাওয়া ইসোভাগাস’র পরিবর্তে বৃহদন্ত্রের একটি অংশ কেটে নিয়ে খাদ্যনালীর জায়গায় বুকের ভেতর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গেস্ট্রোসার্জারি, কার্ডিওথোরাসিক ভাসকুলার সার্জারি (সিটিভিএস) এবং এনাসথোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা এই অস্ত্রোপচার করেন।

দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারের পর রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়ার পথে। আজ আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের কাউন্সিল হলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকগণ তাদের সাফল্যের কাহিনী তুলে ধরেন। তারা জানান, ত্রিপুরায় প্রথম এই ধরণের জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আয়ুষ্মান কার্ড থাকায় এই জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীর পরিবারকে কোন অর্থ ব্যয় করতে হয়নি। বহি:রাজ্যের যেকোন বেসরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার করতে হলে রোগীর পরিবারকে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা দিতে হত।

জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডা. শঙ্কর চক্রবর্তী, ডেপুটি সুপার ডা. অভিজিৎ সরকার, জিবি হাসপাতালের সিটিভিএস বিভাগের ইনচার্জ ডা. কনক নারায়ণ ভট্টাচার্য, গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট ডা. মৃণাল দেববর্মা, ডা. দীপঙ্কর শঙ্কর মিত্র প্রমুখ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

পরিবারের তথ্য অনুযায়ী সিপাহীজলার কৈয়াডেপা মধুপুরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দাস (২৩) গত বছর মার্চ মাসে তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে তার ঘরে থাকা রাবার প্রসেসিং অ্যাসিড (ফরমিক অ্যাসিড) খেয়ে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মধুপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেখা যায় অ্যাসিড খাওয়ার পর তার খাদ্যনালী জ্বলে যাওয়াতে খাদ্যনালী শুকিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। গত দেড় বছর ধরে সে ঠিক ভাবে ভাত ও জল খেতে পারছিল না। গত ৩ জুন বাড়ির লোক তাকে চিকিৎসার জন্য জিবিপি হাসপাতালে নিয়ে আসে।

গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট ডা. মৃণাল দেববর্মা ও ডা. শুভদীপ পাল তার এন্ডোস্কোপি করে খাদ্যনালীর স্ট্রিকচার সনাক্ত করেন। পরে বারবার খাদ্যনালীর ডাইলেটেশন করানো হয়। প্রত্যেক তিন সপ্তাহে একবার এই প্রক্রিয়া করতে হতো। ফলে সাময়িকভাবে রোগী কিছু তরল জাতীয় খেতে পারতো। কিন্তু কিছুদিন পর এই ডাইলেটেসন কাজ বন্ধ করে দেয়। আপাতত, পেটের অন্ত্রে ফুটো করে লিকুইড খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। তারপর তাকে গ্যাস্ট্রোসার্জারি ডিপার্টমেন্টে ডা. দীপঙ্কর শংকর মিত্রের কাছে চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়।

ডা. মিত্র এই জটিল রোগীর ব্যাপারে হাসপাতালের কার্ডিওথোরসিক সার্জন, ডা. কনক নারায়ণ ভট্টাচার্যের সাথে আলোচনা করেন। সিদ্ধান্ত হয় রোগীর শুকিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া খাদ্যনালীর বিকল্প পথ তৈরি করা হবে। সে অনুযায়ী রোগীর ইসোফেজিয়েল বাইপাস সার্জারি করার সিদ্ধান্ত হয়। এতে বৃহদন্ত্রের একটি অংশ কেটে নিয়ে খাদ্যনালীর জায়গায় বুকের ভেতর প্রতিস্থাপিত করা হয়ে থাকে।

 

এই অপারেশন জিবি হাসপাতাল তথা ত্রিপুরা রাজ্যে প্রথমবার করা হয়। সেই অনুসারে, ডা. মিত্র এবং ডা. ভট্টাচার্যের একটি জয়েন্ট টিম পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জিবি হাসপাতালের সিটিভিএস বিভাগের আপারেশন থিয়েটারে গত ৫ জুন সফলভাবে রোগীর খাদ্যনালীতে বৃহদন্ত্র প্রতিস্থাপন করেন। দীর্ঘ সাতঘন্টা ব্যাপী এই অপারেশন ডা. দীপঙ্কর শংকর মিত্র (গ্যাস্ট্রো সার্জন) ডা. কনক নারায়ণ ভট্টাচার্যের (কার্ডিওথোরাসিক সার্জন) সঙ্গে ছিলেন ডা. কিশোর, ডা. কিরণ ও ডা. অভিনব, অ্যানেস্থেসলজিস্ট ডা. মণিময় দেববর্মা ও ডা. সুরজিৎ পাল। অন্যান্য ওটি এইম সদস্য ছিলেন সুদীপ্ত মন্ডল-ফিজিশিয়ান এসিস্ট্যান্ট, ওটি অ্যাসিস্ট্যান্ট জয়দীপ চক্রবর্তী ও রতন মন্ডল, ওটি নার্স সৌরভ শীল, মৌসুমী দেবনাথ ও আন্না বাহাদুর জমাতিয়া। এই ধরণের জটিল অপারেশনে রোগীর বৃহদন্ত্রের এক অংশকে কেটে বুকের ভেতর হার্টের সামনে দিয়ে গলায় অক্ষত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ। খেয়াল রাখতে হয় যাতে বৃহদন্ত্রের রক্ত চলাচল অক্ষুন্ন থাকে এবং পরবর্তীতে সেই নতুন অঙ্গ খাদ্যনালীর কাজ করে। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল, সুস্থ হওয়ার পথে। ধীরে ধীরে একটু একটু করে রোগী তরল খাদ্য খেতে পারছেন। তার বেরিয়াম সিটি স্ক্যান হবে এবং সে এখন ছুটির অপেক্ষায়। এ ধরণের অপারেশন জিবিপি হাসপাতালে প্রথম ও সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট রোগীর পরিবারের লোকজন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সবাই খুশি।

    Leave feedback about this

    • Quality
    • Price
    • Service