জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- সরস্বতী পূজা হিন্দু বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠেয় একটি অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব।মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে দেবীর পূজা হয়। এই বিশেষ তিথিটিকে ‘শ্রীপঞ্চমী’ বলা হয়। সরস্বতীর পূজা সাধারণ পূজার নিয়মানুসারেই হয়। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপাচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। যেমন, অভ্রআবীর, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শিস। বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলও প্রয়োজন হয়। লোকাচার অনুসারে, ছাত্রছাত্রীরা পূজার আগেও কুল খায় না। পূজার দিন কিছু লেখাও নিষিদ্ধ। যথাবিহিত পূজার পর লক্ষ্মী, নারায়ণ, দোয়াত-কলম, পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রেরও পূজা করার প্রথা প্রচলিত আছে।
প্রতিবছর কোয়াশা ভরা সকালে উঠে পূজার জন্যে বাগান থেকে ফুল তোলা, এরপর স্নান সেরে স্বরস্বতী মায়ের আরাধনার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটা নতুন কোনো ব্যাপার নয়, যুগ যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। এই পুজো শুধু পুজো নয়, এর সাথে ছাত্রদের রয়েছে এক আবেগময় সম্পর্ক। স্কুল কলেজের পুজোয় সকল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উৎসাহের কখনো কোনো কমতি দেখা যায় না, কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা নিয়ে আসার কাজ থেকে শুরু করে প্রসাদের খিচুড়ি রান্নার কাজ অবধি সবটাই ছাত্ররা মিলে সামলে নিতে পারে।
ছোট বেলায় আমাদের অনেকেরই আঁকাবাঁকা হাতে অ আ ক খ-তে হাতেখড়ি হয়েছে কোনও এক সরস্বতী পূজার সকালেই। সরস্বতী বন্দনার সঙ্গে মিশে গিয়েছে বই খাতা মায়ের পায়ে জমা দিয়ে ভালো রেজাল্ট প্রার্থনা করা। সরস্বতী পুজো মানেই হল পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া শেষ করে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এবং অন্যান্য স্কুল কলেজের প্রতিমা দর্শন করা। অনেকে আবার কোথাও না গিয়ে নিজের স্কুলে বা কলেজেও সময় কাটাতে পছন্দ করে। পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়।
সকাল থেকেই রংবেরঙের শাড়ি আর পাজামা-পাঞ্জাবীর ভিড়ে ঠাসা থাকে স্কুল কলেজের সরস্বতী পুজো। হলুদ শাড়ি পরে কচিকাচাদের অঞ্জলি দেওয়ার ধুম চলে সারা সকাল জুড়ে। তাছাড়া স্কুলের রোজকার “ইউনিফর্ম ”এই দিনই সুযোগ হয় রঙবেরঙের জামা পড়ে স্কুলে যাওয়ার। অন্যদিকে যে স্কুলগুলোতে বছরের অন্যান্য দিনগুলো যাওয়া যায়না, সেই স্কুলেও ঢোকার সুযোগ হয় এই বিশেষ দিনটিতেই।
ঠাকুর দেখার চলে স্কুল কলেজে ঘুরতে যাওয়ার মাধ্যমেই মজায় মশগুল হয় কিশোর থেকে তরুণ প্রজন্ম। আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দিন বাকি। তারপরেই হবে সরস্বতী পুজো। এদিকে কুমোরটুলিতে দেবী স্বরস্বতীর প্রতিমা নির্মাণ করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন থিমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হচ্ছে এক একটি মূর্তি। আবার চিরাচরিত প্রতিমার স্বরূপে নির্মিত হচ্ছে বেশ কিছু মূর্তি। তবে অনেক ঠাকুর এখনও পর্যন্ত বায়না না হওয়ার জেরে তীব্র আশঙ্কা প্রকাশ করছেন মৃৎ শিল্পীরা।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহত ধর্মীয় উত্সব সরস্বতী পুজো। প্রতিবছরের মতো এবারও জ্ঞানের আলো ছড়াতে মর্ত্যে আসছেন দেবী শুক্লা। মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত প্রতিমা তৈরিতে। ইতিমধ্যেই বাঁশ, খড় ও কাঁদামাটি দিয়ে প্রতিমার কাঠামো তৈরি ও প্রলেপ দেওয়ার প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে রাত দিন এক করেই চলছে প্রতিমার সাজ সজ্জার কাজ। ক্রেতাদের ফরমাইশ অনুসারে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে দেবীকে।
Leave feedback about this