জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- আজ থেকে এক বছর আগের ঘটনা, প্রয়াত হন দেশের প্রথম সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত। জেনারেল রাওয়াত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২৭তম প্রধানও ছিলেন। গোটা দেশ প্রয়াত জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ করছেন এবং তাঁকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। জেনারেল রাওয়াত, তার স্ত্রী মধুলিকা এবং ১২ জন সশস্ত্র আধিকারিক ও কর্মীরা ৮ ডিসেম্বর, ২০২১-এ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান। উইং কমান্ডার পৃথ্বী সিং যে, হেলিকপ্টারটি উড্ডয়ন করছিলেন সেটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। সুলুর সেনা ঘাঁটি ছেড়ে হেলিকপ্টারটি জেনারেল রাওয়াতদের নিয়ে ওয়েলিংটন সামরিক ঘাঁটির দিকে যাচ্ছিল এবং সুলুর থেকে প্রায় ৯৪ কিলোমিটার দূরে হেলিকপ্টারটি হঠাত্ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়।ভারতীয় সেনাবাহিনীতে তাঁর চার দশকের চাকরি সর্বদাই অসাধারণ সাহসিকতায় পরিপূর্ণ ছিল এবং সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়ানোর জন্য তিনি সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন এবং শত্রু দেশকে তাদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর সুরে সতর্ক করতে গিয়ে তিনি একবার বলেছিলেন, ‘প্রথম বুলেট আমাদের হবে না, কিন্তু তারপরে আমরা বুলেট গণনা করব না।’ ১৬ মার্চ ১৯৫৮ সালে পাউরি গাড়ওয়ালের একটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বিপিন রাওয়াতের বাবা লক্ষ্মণ সিং রাওয়াতও একজন সেনা অফিসার ছিলেন, যিনি ১৯৮৮ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসাবে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।বিপিন রাওয়াত ১৯৭৮ সালে সেনাবাহিনীর ১১তম গোর্খা রাইফেলসের ৫তম ব্যাটালিয়নের সাথে তার সামরিক কেরিয়ার শুরু করেছিলেন এবং তারপর থেকে তার পুরো ক্যারিয়ার সাফল্যে পূর্ণ। ২০১১ সালে, তিনি চৌ চরণ সিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিলিটারি মিডিয়া স্টাডিজে পিএইচডি করেছেন। তিনি উত্তম যুদ্ধ সেবা পদক, অতি বিশেষ সেবা পদক, যুদ্ধ সেবা পদক, সেনা পদক, দেশ সেবা পদক ইত্যাদির মতো অনেক পদক পেয়েছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সাথে কার্গিল যুদ্ধে অংশ নেন। এছাড়াও তিনি কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নেতৃত্ব দেন এবং সেই সময়ে তিনি একটি বহুজাতিক ব্রিগেডেরও নেতৃত্ব দেন।১ সেপ্টেম্বর ২০১৬-এ, তিনি সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিযুক্ত হন এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬-এ তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ড গ্রহণ করেন। তিনি সামরিক চাকরির সময় LOC, চীন সীমান্ত এবং উত্তর-পূর্বে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। পূর্ব সেক্টরের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা, কাশ্মীর উপত্যকা এবং উত্তর-পূর্বে সহ অশান্ত এলাকায় কাজ করার দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতা ছিল তার। ২০১৬ সালে উরিতে সেনা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলার পর, বিপিন রাওয়াতের নেতৃত্বে, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে, পাকিস্তানে সন্ত্রাসী শিবিরগুলি ধ্বংস করার জন্য একটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হয়েছিল। তিনি উচ্চ পর্বত যুদ্ধ এবং বিদ্রোহ বিরোধী অভিযানে একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯-এ, সেনাপ্রধানের পদ থেকে অবসর নেওয়ার এক দিন আগে, সরকার তাকে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) করার ঘোষণা দেয় এবং ১ জানুয়ারী ২০২০-এ, তিনি ভারতের প্রথম CDS হন।
সিডিএস হিসাবে তাঁর নিয়োগের মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনটি পরিষেবার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো। প্রকৃতপক্ষে, সারা বিশ্বের সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তির কারণে যুদ্ধের প্রকৃতি এবং প্রস্তুতিতে একটি বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে খুবই জরুরি ছিল দেশের নিরাপত্তার জন্য তিন বাহিনীর সমগ্র শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কারণ তিন বাহিনীই ভিন্ন চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজকরতে পারে না। শত্রুর আক্রমণ নস্যাত্ করতে সেনাবাহিনীর তিনটি অংশের মধ্যে সমন্বয় থাকা খুবই জরুরি। সেনাবাহিনীর জন্য কৌশল তৈরি করার পাশাপাশি, সিডিএস বিপিন রাওয়াতের সামরিক অফিসার এবং জওয়ানদের মধ্যে আস্থা বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল এবং তাঁর সামরিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, তিনি এই সমস্ত দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করেছিলেন। প্রথম সিডিএস হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিরক্ষা সংস্কার, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছেন, সিডিএস হিসাবে তাঁর মেয়াদকালে সশস্ত্র বাহিনী এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে তাঁর অবদান সর্বদা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
Leave feedback about this