জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- রাজ্যের সার্বিক বিকাশে বর্তমান রাজ্য সরকার বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। যেভাবে রাজ্যের উন্নয়নে সরকার কাজ করছে তাতে ত্রিপুরার অগ্রগতি কেউ রোধ করতে পারবেনা। রাজ্যের গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে মাথাপিছু গড় আয়ে ত্রিপুরা বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আজ সন্ধ্যায় হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে ৩৫তম শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য হল রাজ্যে কি ধরণের পণ্য উৎপাদন হচ্ছে তা প্রদর্শন করা। মানুষ কি ধরণের পণ্য চায় তা জানা। তিনি বলেন, আগের তুলনায় রাজ্যে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের গুণমান অনেক বেড়েছে। শিল্পোদ্যোগীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বলেছেন, আমরাও পারি এই আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে। রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে বাইরে থেকে শিল্পোদ্যোগীরা আমাদের রাজ্যে শিল্প গড়ে তুলুক।
রাজ্যের মানুষও যেন শিল্পমুখী হন। রাজ্যের মানুষও আগের তুলনায় অনেক বেশি উদ্যোগী হয়েছেন। এই মানসিকতা আগে ছিলনা। আমিও করতে পারি এই আত্মবিশ্বাস তৈরী হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কর্মপ্রত্যাশী নয়, কর্মসংস্থানকারী হতে হবে। স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য রাজ্য সরকার যুবক যুবতীদের নানাভাবে সাহায্য করছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৫৬ হাজার স্বসহায়ক দল তৈরী হয়েছে। সরস মেলায় দেখা গেছে তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুণমান আগের তুলনায় অনেক ভাল হয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বর্হিরাজ্যেও বিক্রি হচ্ছে। তাতে তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরা দ্রুত অগ্রবর্তী রাজ্য হয়ে উঠেছে। তিনি এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত এবং এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন এবং শিল্প ও বাণিজ্য মেলার সাফল্য কামনা করেন।
হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে ১৫ দিনব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় ৫৭৬টি স্টল খোলা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় স্টল হল ৩৫৪টি, বর্হিরাজ্যের স্টল ১৪৪টি। আফগানিস্থান, তুর্কি এবং দুবাই থেকেও স্টল খোলা হয়েছে। এবার মেলায় ১৭টি রাজ্য থেকে স্টল খোলা হয়েছে। এবারের মেলার মূল ভাবনা হল ‘ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা-ল্যান্ড অব অপরচুনিটিস’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা বলেন, রাজ্যে শিল্প স্থাপনের জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। রাবার, বাঁশ-বেত সহ রাজ্যে যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে তাকে ভিত্তি করে শিল্প কারখানা গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে নতুন শিল্পনীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন সবার সহযোগিতায় শিল্প ও বাণিজ্য মেলা আরও আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে এবং আরও বেশি বাণিজ্য হবে।
শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বৃষকেতু দেববর্মা বলেন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে, শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করতে এধরণের মেলার আয়োজন করা হয়। রাজ্য সরকার চাইছে যুবক যুবতীরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যাম্বো মিশনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ধূপকাঠি শিল্পে সারা দেশে যত ধূপকাঠির শলা প্রয়োজন তা প্রায় ৬০ শতাংশ আমাদের রাজ্য থেকে রপ্তানী করা হয়। তিনি ১৫ দিনব্যাপী এই মেলার সাফল্য কামনা করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি বলাই গোস্বামী, ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, বিধায়ক মিনা রাণী সরকার, টিআইডিসি’র চেয়ারম্যান নবাদল বণিক, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে। শিল্প ও বাণিজ্য মেলা প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
Leave feedback about this