জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- সারাদেশেই মহা ধুমধামে পালিত হচ্ছে বিশ্বকর্মা পূজা বা বিশ্বকর্মা জয়ন্তী। রাজ্যেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহ বাড়ি ঘরে আয়োজন করা হয়েছে পুজোর। বিশ্বকর্মা পূজা বা বিশ্বকর্মা জয়ন্তী হচ্ছে একটি হিন্দুধর্মীয় উৎসব। হিন্দু স্থাপত্য দেবতা বিশ্বকর্মার সন্তুষ্টি লাভের আশায় এই পূজা করা হয়। তাকে স্বয়ম্ভু এবং বিশ্বের স্রষ্টা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পুরাণে কথিত আছে তিনি দেবতা কৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা শহরটি নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি রামায়ণে বর্ণিত লঙ্কা নগরী, পাণ্ডবদের মায়া সভা, রামায়ণে উল্লিখিত ব্রহ্মার পুষ্পক রথ, দেবতাদের বিভিন্ন গমনাগমনের জন্য বিভিন্ন বাহন, দেবপুরী এবং বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিব এর ত্রিশূল, কুবের এর অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের শক্তি সহ দেবতাদের জন্য বহু কল্পিত অস্ত্রের স্রষ্টা। বিশ্বকর্মার ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে তিনি এই বিশ্বের সব কর্মের সম্পাদক। তিনি সব ধরনের শিল্পের প্রকাশক। শিল্পবিদ্যায় বিশ্বকর্মার রয়েছে একচ্ছত্র অধিকার। তিনি নিজেই চতুঃষষ্টিকলা, স্থাপত্যবেদ এবং উপবেদ এর প্রকাশক। কথিত আছে, পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথমূর্তিও তিনিই নির্মাণ করেন। তাকে স্বর্গীয় সূত্রধরও বলা হয়।বিশ্বকর্মা পূজা মূলত কারখানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পালন করা হয়। প্রায়ই দোকানের মেঝেতে পূজার আয়োজন করা হয়। কখনো কখনো বিশ্বকর্মার মূর্তি স্থাপন করে কিংবা কখনও কখনও পটে আঁকা চিত্র সামনে রেখে তার পূজা করা হয়। এসময় দোকান কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মী একসাথে এক জায়গায় জড়ো হয়ে তার পূজা করে।বিশ্বকর্মার সন্তুষ্টি অর্জন ও তার প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে কেবল প্রকৌশলী কিংবা স্থপতি সম্প্রদায় নয়, সব ধরনের কারিগর, সূতার, মিস্ত্রি, কামার-কুমার, স্বর্ণকার, শিল্প কর্মী, কারখানার শ্রমিক, ঢালাইকর সহ অনেক ধরনের পেশার মানুষ এদিন তাঁর পূজা করে। তারা আরও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য, নিরাপদ কাজের পরিস্থিতি এবং নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বোপরি নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করে। আবার শ্রমিকেরা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রার্থনা করে। কখনো কখনো কারিগরেরা এসব যন্ত্রপাতি বিশ্বকর্মার নামে সমর্পন করে এবং ওই সময় সেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারে বিরত থাকে। আধুনিক ইলেকট্রনিক সার্ভারগুলিও যাতে সুষ্ঠুভাবে কাজ করে সে জন্যও কেউ কেউ তার উপাসনা করে। বিশ্বকর্মা পূজার দিন প্রত্যেকের ঘরে ঘরে বিশেষ খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা হয় এবং পূজার পরে কোনও কোনও এলাকায় সমবেতভাবে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। রাজধানীতে পুজোর আয়োজন করেছে আর কে নগর টিএসআর সেকেন্ড ব্যাটেলিয়ানের জোয়ানরা। এদিন তাদের সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র যানবাহন গুলিকে পূজা করা হয়। পাশাপাশি সমস্ত কর্মীদের সুস্বাস্থ্য কামনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে টিএসআর জোয়ানরা।এদিকে বিভিন্ন সংগঠন, ক্লাব ও ছোট বড় প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানাগুলোতেও পূজোর আয়োজন করা হয়েছে মহা ধুমধামে। অনেক স্থানেই গরিব-দুঃখী ও সাধারণ পথচারীদের জন্য নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। করছে প্রসাদ বিতরণও। বিভিন্ন পেশার লোকেরা নিজ নিজ বাড়ি ঘরেও আয়োজন করেছে দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা পুজো। বাড়িঘর গুলিতে পুজোর পাশাপাশি আয়োজন করেছে ভুরিভোজের। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব প্রত্যেকের সম্মিলিত উপস্থিতিতে রীতিমতো মিলন উৎসবে পরিণত হচ্ছে প্রতিটি বাড়িঘর।
Leave feedback about this