জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সুফলগুলির প্রচার ও প্রসার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবসের রাজ্যস্তরীয় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। এবছর বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবসের ভাবনা হচ্ছে ‘অধ্যয়ন-শিক্ষাদান-গবেষণা’। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জনক চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিমেনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এদিবসটি উদযাপন করা হয়।
রাজ্য আয়ুষ মিশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিমেনের হাত ধরেই বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু হয়। দীর্ঘদিন ধরেই এই চিকিৎসায় অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বিশদভাবে জানতে প্রতিবন্ধকতাগুলির গভীর অধ্যয়ন, শিক্ষাদান ও গবেষণা প্রয়োজন। এক সময় পশ্চিমবঙ্গ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। সেখানে খ্যাতনামা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকগণ সুনামের সাথে কাজ করতেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার বিস্তার ঘটে। রাজ্যেও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়ন ও প্রসারে মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা রয়েছে।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। তাই এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি আরও বেশি করে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এছাড়া তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের কাজ করার জন্য পরামর্শ দেন। সেক্ষেত্রে উন্নত পরিষেবা প্রদানে গবেষণা ভিত্তিক চিকিৎসার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরনো চিকিৎসা পদ্ধতির সুফলগুলিকেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিক নির্দেশনায় আয়ুর্বেদ, যোগা, ইউনানী, সিদ্ধা এবং হোমিওপ্যাথি (আয়ুষ) চিকিৎসার প্রসারে আয়ুষ মন্ত্রনালয় গঠন করা হয়েছে। রাজ্যে বর্তমান সরকারও আয়ুষ পরিষেবা প্রদানে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। সম্প্রতি ৭টি আয়ুষ আরোগ্য মন্দির ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর হসপিটাল (এনএবিএইচ)-এর স্বীকৃতি লাভ করেছে।
১৭৩ জন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক এবং আয়ুষ কমিউনিটি হেলথ অফিসার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দিরে রোগীদের পরিষেবায় নিয়োজিত রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ২ লক্ষ ৮০ হাজার রোগী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা লাভ করেছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ২ লক্ষ ২২ হাজার রোগী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষেবা নিয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে হোমিওপ্যাথি ফার্মাসিস্টও রয়েছেন। কৈলাসহর ও উদয়পুরের মতো সাব্রুমেও একটি ইন্টিগ্রেটেড আয়ুষ হাসপাতাল শীঘ্রই চালু করা হবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে রাজ্যে ডেন্টাল কলেজ এবং নার্সিং কলেজ চালু রয়েছে।
আগামীদিনে রাজ্যে একটি হোমিওপ্যাথি কলেজ স্থাপন করারও পরিকল্পনা রয়েছে। চিকিৎসা পরিষেবা সম্প্রসারণে আগামী দিনে আরও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এবারের রাজ্য বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে জিবিপি হাসপাতালে ৯টি সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসা পরিষেবা চালু রয়েছে। রাজ্যে সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে। লিভার প্রতিস্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। আগামীদিনে রাজ্যে সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা সম্প্রসারণে সরকারের পরিকল্পনার কথাও ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে বলেন, রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পঞ্চকর্ম সেন্টার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. তপন মজুমদার। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব রাজীব দত্ত, পরিবার কল্যাণ এবং রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের অধিকর্তা ডা. অঞ্জন দাস, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা প্রফেসর (ডা.) এইচ পি শর্মা, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের যুগ্ম মিশন অধিকর্তা অরূপ দেব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন রাজ্য আয়ুষ মিশনের শাখা অধিকারিক ডা. সুব্রত দেব।
উল্লেখ্য অনুষ্ঠানে একটি সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে রাজ্যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষেবার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এছাড়া চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানে উৎকর্ষতার জন্য অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. রতন সাহা এবং ডা প্রদীপ দাস-কে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়া এনএবিএইচ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৭টি আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দিরে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ অফিসারকেও পুরস্কৃত করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী তাদের হাতে পুরস্কার ও স্মারক উপহার তুলে দেন।
Leave feedback about this