জনতার কলম,ত্রিপুরা,তেলিয়ামুড়া,প্রতিনিধি :-আর ঠিক এমনটাই চলছে পার্বত্যময় সবুজ বনানীতে ঘেরা আমাদের এই ক্ষুদ্র ত্রিপুরা রাজ্যে । আমাদের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি গিরি এলাকাজুড়ে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট বর্তমানে তেমন কোন নতুন কথা বা ঘটনা নয় । এই ধারা যেন দীর্ঘ ২৫ বছরের বাম আমল থেকেই নদী গতি স্রোতের প্রবাহে চলে আসছে, যা বর্তমানে ৩ বছরের রাম আমলেও এই স্রোতধারা অব্যহত রয়েছে । তবে পাহাড়ের অন্দরে বসবাসরত সহজ সরল এই গিরিবাসীদের জল সংকটের সমাধান ও পাহাড়ের জঙ্গলাকীর্ণ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করার দোহাই দিয়েই কিন্তু বছরের পর বছর আসন্ন যে কোন নির্বাচনে গ্রাম বাসীদের কাছ থেকে ভোট আদায় করে একে একে ভোট বৈতরণী পার হচ্ছে রাজনৈতিক নেতা আমলারা । উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৫ বছরের বাম শাসনাধীনেও পাহাড়ের উপজাতি বসতি গিরি এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট ও রাস্তাঘাটের দুর্ভোগ থেকে বিন্দুমাত্রও রেহাই পায় নি ওই সমস্ত গিরিবাসীরা । “যেমন ছিল বামে ঠিক তেমনই আছে রামেও” । যদিও ৩ বছরের বিজেপি আইপিএফটি জোট শাসনাধীনে একমাত্র “আমলা” বাদে কোন “কামলা”র-ই ভাগ্য বদলায় নি । তবে ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে যখন রাজ্যে নতুন করে পালা বদল হয়েছিল, ঠিক এর পূর্বেই নির্বাচনের সময় কতই না মায়া কান্না করে পার্বত্যময় গিরিবাসীদের জন্য দীর্ঘদিনের বিশুদ্ধ পানীয় জলের সমস্যা ও রাস্তাঘাটের সমস্যার সমাধান করবে বলে “গাল-ভড়া” এক ঘর প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছিল বর্তমান নব জোট সরকারের এক একজন রতি মহারতি নেতাগণ । কিন্তু রাজ্যে পালা বদলের নতুন করে জোট সরকারের ৩ বছর গড়াতে চললেও আজও গিরি ও অন্দর এলাকার বসবাসরত সহজ সরল মানুষজন এখনও পরিশ্রুত পানীয় জলের বিন্দুমাত্র স্বাদ ভোগ করতে পারে নি, সেইসাথে জঙ্গলাকীর্ণ রাস্তাঘাটের ও কোন পরিবর্তন হয় নি । ফলে স্বাধীন ভারতের ৭৪ বছর পরেও আজও “ছড়া-পাথর চুষা” নোংরা ঘোলাটে জলেই পানীয় জলের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় কাজেও এই নোংরা অপরিশোধিত জল তাদের আজও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের দরুণ ব্যবহার করতে হচ্ছে । এমনই একটি জ্বলন্ত ছবি ও অভিযোগ উঠে আসলো আমাদের সবুজ শহর তেলিয়ামুড়া থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বড়মুড়া পাহাড়ের মধ্যে উপজাতি অধ্যুষিত মান্দাই ব্লকের অধীন উপজাতি স্ব-শাসিত জেলা পরিষদের অন্তর্গত “ADC” ভিলেজের নিউ খামতিং বাড়ি এলাকা থেকে । বিবরণে জানা যায়, বড়মুড়া পাহাড়ের ওই নিউ খামতিং বাড়ি এলাকায় মোট ২০০-র মতো জনজাতি পরিবারের স্থায়ী বসবাস । উল্লেখ্য, এই নিউ খামতিং বাড়ি এলাকায় বসবাসকারী উপজাতি অংশের মানুষজনরা দীর্ঘদিন ধরেই পরিশ্রুত বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকটে ভুকছে, সেইসাথে জঙ্গলাকীর্ণ রাস্তাঘাটের চলাচলের সমস্যা তো আছেই । যদিও তেলিয়ামুড়া শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরবর্তী এই নিউ খামতিং বাড়ি বস্তিতে ২০২০-এ রাম আমলে দাঁড়িয়েও বিভিন্ন “চড়াই-উৎরাই” পার হয়েই পৌছুতে হয় আজও। জানা যায়, ওই বস্তিতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের এতোটাই সংকট যে, কি বর্ষা আর কি শুখা-মরশুম সারা বছরেই তাদেরকে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড় অতিক্রম করে ও কোন কোন সময় পাহাড়ের নিচে গিয়েও গর্ত করে পরিস্রুত পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয় । যদিও এখানেই শেষ নয়, শুখা মরসুমে এই জলের উৎস গুলো প্রায় শুকিয়ে যাবার কারণে আবার ভিন্ন কোন এক জায়গায় গিয়ে সেই পানীয় জলের সন্ধান করতে হচ্ছে তাদের কখনো কখনো হয়তো বা । যদিও এই সামান্যটুকু পরিমাণ জল দিয়েই তাদের পানীয় জল থেকে শুরু করে, তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত যাবতীয় কাজকর্মে সীমাবদ্ধ থাকতে হয় ও দিনযাপন করতে হয় । ফলে এই নোংরা এবং দূষিত ঘোলাটে জল প্রতিনিয়ত ব্যবহার করার ফলে তাঁদেরকে আজ একদিকে যেমন নানা অজানা ও কঠিন ব্যধিতে ভুগতে হচ্ছে, ঠিক তেমনই অন্যদিকে অনেক সময়ই কোন কোন গিরিবাসীকে এই নোংরা ও অপরিশোধিত পানীয় জলের কারনে মৃত্যুপথযাত্রীও হতে হচ্ছে । তবে বলা যেতেই পারে বিগত ২৫ বছরের বাম সরকারের শেষ লগ্নে “DWS” থেকে সরকারী ভাবে গাড়ি করে ওই এলাকায় জল দেওয়া শুরু করলেও, হঠাৎ রাজ্যে পালা বদলে নতুন করে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের আমলে বর্তমানে “ONGC”-র দপ্তর থেকে গাড়িতে করে ৫০ থেকে ৭০ টাকার বিনিময়ে স্বল্প পরিসরে সমানুপাতে বস্তির সকলকে জল সরবরাহ করা হচ্ছে যদিও । ফলে তাতেও কোন সুফল বা পানীয় জলের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না । এই জল সরবরাহ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই এই জলের পাত্রে দেখা মেলে জলের পাত্রের নীচে লাল বর্ণের আয়রন জমে রয়েছে । যদিও কোনরকম সু-পথ না পেয়ে বাধ্য হয়েই এই আয়রন যুক্ত লাল বর্ণের ঘোলাটে জল পানীয় জল হিসেবে আজও ব্যবহার করতে হচ্ছে ওই এলাকার গিরি বাসীদের । এখন সেটাই দেখার বিষয় যে, আসন্ন রাজ্য “ADC” নির্বাচনের আগে রাজ্যের সমস্ত পাহাড়ি প্রত্যন্তময় অঞলে বসবাসরত সকল গিরিবাসীদের দীর্ঘদিনের যে একটা মূল সমস্যা রয়েছে “বিশুদ্ধ পানীয় জল”-র সমস্যার সুরাহা করা সেটা আদৌ পূরণ হয় কিনা – নাকি আজও পূর্বের মতোই আমলা নেতা মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতির সুতোঁতেই ফের একবার বাঁধা পড়ে থাকবে !
রাজ্য
“ভোট আসে ভোট যায় প্রতিশ্রুতি থাকে প্রতিশ্রুতির জায়গায়” প্রসঙ্গ : পাহাড়ের পানীয়জল
- by janatar kalam
- 2020-11-11
- 0 Comments
- Less than a minute
- 4 years ago
Leave feedback about this