জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- ৩৫তম ত্রিপুরা শিল্প ও বাণিজ্য মেলা আজ সমাপ্ত হয়। হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে গত ২৯ জানুয়ারি ১৫ দিনব্যাপী এই মেলার সূচনা হয়েছিল। আজ সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ত্রিপুরা শিল্প ও বাণিজ্য মেলার কলেবর এই বছর অনেকটাই বেড়েছে। অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের মেলায় অধিক সংখ্যক স্টলের পাশাপাশি রেকর্ড পরিমাণে লোক সমাগমও ঘটেছে। যার ফলে এবারের শিল্প মেলায় সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৫ কোটি টাকার বেশি সামগ্রী বিক্রয় হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তার ফলে গত প্রায় ৭ বছরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক সংস্থা রাজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরা শিল্প ও বাণিজ্য মেলা উপলক্ষ্যে বিজনেস কনক্লেভ-২০২৫ আয়োজন করা হয়েছিল। এতে বিভিন্ন দপ্তরের সাথে বিনিয়োগকারীদের ৮-৭টি মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। আগামীদিনে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৩,৮০০ কোটি টাকা রাজ্যে বিনিয়োগ করবেন।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। যার ফলে বহিরাজ্যের বিনিয়োগকারীগণ রাজ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই রাজ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নয়নের জন্য ডাবল লাইন ব্যবস্থা করারও সদর্থক সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, রাজ্য সরকার রাবার, চা, আগরভিত্তিক শিল্প স্থাপনে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছেন তার সুফল রাজ্য এবং রাজ্যবাসী পাচ্ছেন বলেও অর্থমন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা বলেন, এবারকার কেন্দ্রীয় বাজেটে এমএসএমই-এর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারও সেই দিশায় কাজ করছে। তিনি ৩৫তম ত্রিপুরা শিল্প ও বাণিজ্য মেলা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, রাজ্যে এখন ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার যুব সমাজ আত্মনির্ভরতার মানসিকতায় এগিয়ে যেতে চাইছে। তিনি বলেন, স্বসহায়ক দলের মহিলাদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত সামগ্রীর গুণগতমান বৃদ্ধি ও বাজারজাতকরণের কৌশল শেখানোর প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। যার ফলে সদ্য সমাপ্ত সরস মেলায় প্রায় ৪ কোটি টাকার বেশি সামগ্রী বিক্রি হয়েছে। ক্রীড়ামন্ত্রী আরও বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে রাজ্যে ব্যবসার প্রবল সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, জল জীবন মিশনের মতো সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়নের মাধ্যমেও রাজ্যে প্রভূত ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, এবারের মেলায় মোট ৫৭৬টি স্টল খোলা হয়েছে। এরমধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীগণ ৩৫৪টি স্টল খুলেছেন। আফগানিস্তান, তুরস্ক এবং দুবাই থেকেও মেলায় স্টল খোলা হয়েছে। তাছাড়া ১৭টি বিভিন্ন রাজ্যের ব্যবসায়ীগণও তাদের পসরা নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছেন। এবারের মেলার মূল ভাবনা হলো ‘ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা-ল্যান্ড অব অপরচুনিটিস’।
আজকের এই সমাপ্তি অনুষ্ঠানে স্থানীয়ভাবে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য মেসার্স তারাশংকর ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড এবং রাজ্যে সর্বাধিক বিনিয়োগের জন্য মেসার্স হোটেল নোয়া স্পায়ারকে আউটস্যান্ডিং এন্টারপ্রেনিউর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। তাছাড়া পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার মেসার্স কানুপ হ্যাচারি এবং গোমতী জেলার মেসার্স নিউ বণিক মডার্ন রোলার ফ্লাওয়ার মিলকে উইমেন এন্টারপ্রেনিউর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। মেলায় সর্বাধিক বিক্রির জন্য কাশ্মীর শাল ফ্যাক্টরিকে পুরস্কৃত করা হয়। তাছাড়া জেলাভিত্তিক ভাইবেন্ট ইউনিট অ্যাওয়ার্ডও সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রদান করা হয়। মেলায় সর্বাপেক্ষা দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনী মন্ডপের জন্য সরকারি স্টল হিসেবে ত্রিপুরা ব্যাম্বো মিশন ও ৬৯ ব্যাটেলিয়ন বিএসএফ, গকুলনগর এবং বেসরকারি স্টল হিসেবে রাধাকৃষ্ণ জুয়েলারিকে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান নবাদল বণিক। অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মীনা রাণী সরকার, বিধায়ক কিশোর বর্মন, ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সমীর রঞ্জন ঘোষ এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা ডা. বিশাল কুমার।
Leave feedback about this