জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার প্রকৃত স্থান। ছাত্রছাত্রীরা হচ্ছে নরম মাটির মতো। তাদের যেভাবে গড়ে তোলা হবে তারা সেভাবেই গড়ে উঠবে। তাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঠিক মার্গদর্শন ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আজ আগরতলার রামনগরস্থিত বাণী বিদ্যাপীঠ উচ্চতর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে আয়োজিত জাতীয় সেবা প্রকল্পে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ শিবিরের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে এই শিবিরের অঙ্গ হিসেবে অনুষ্ঠিত রক্তদান শিবির ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জাতীয় সেবা প্রকল্পের কর্মসূচি ছাত্রছাত্রীদের দেশাত্ববোধের ভাবনায় বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে৷ জাতীয় সেবা প্রকল্পের শিবিরে আলোচিত কর্মসূচিগুলির তাৎপর্য ছাত্রছাত্রীদের হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করা উচিত। এনএসএস শিরিগুলিতে মূলত দেশের উন্নয়নে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের কি কি কাজ করতে হবে সেই বিষয়গুলি সর্বাধিক প্রাধানা পায়। মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সর্বক্ষেত্রে নিজের সেরাটা উজার করে দিতে হবে। আমরা যা শিখবো তার গভীরে যেতে হবে। তবেই ভবিষ্যতে পরিপূর্ণতার বিষয়টি উঠে আসবে। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় প্রচুর সংখ্যায় এনএসএস ইউনিট রয়েছে। সর্বভারতীয় স্তরে রাজ্যের এনএসএস ছাত্রছাত্রীরা সুনামের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কার অর্জন করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে বিভিন্ন স্কুলে স্মার্ট ক্লাসরুম চালু রয়েছে। তবে বই পড়ার অভ্যাস বজায় রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের বই পোকা নয়, খেলাধুলা সহ সামাজিক বিভিন্ন কাজেও নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে। এরফলে ছাত্রছাত্রীরা সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। আগামী দিনে দেশ ও রাজ্যের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠবে। মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে বলেন, গতানুগতিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলিকেও বিদ্যালয়ের পাঠদানে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষক শিক্ষিকাদের শিক্ষা ও উপদেশ শিক্ষার্থীদের মনের গভীরে রেখাপাত তৈরি করে, যা তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথকে সুগম করে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে নেশামুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আপোষহীন নীতি নিয়ে কাজ করছে। নেশামুক্ত ত্রিপুরা গঠনে রাজা সরকারের পাশে থেকে এনএসএস স্বেচ্ছাসেবীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি ‘প্লাস্টিক মুক্ত ত্রিপুরা অভিযান’ এবং বাল্য বিবাহ রোধেও মুখ্যমন্ত্রী এনএসএস স্বেচ্ছাসেবীদের ভূমিকা নিতে বলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহিত করতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম ১০০ জন ছাত্রীকে বিনামূল্যে স্কুটি প্রদান করার সংস্থান রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতবছর ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। এবছর ‘মেরি মাটি মেরা দেশ’ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসমস্ত কর্মসূচিতে দেশপ্রেম ভাবনারই প্রতিফলন ঘটে।
অনুষ্ঠানে আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার বলেন, এনএসএস কর্মসূচিগুলি বর্তমানে সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয়। নিজেকে তৈরি করার পাশাপাশি অন্যের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে এনএসএস বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। তিনি বলেন, রক্তদান মহৎ দান। রক্তদানের মাধ্যমে একজন মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচানোর পাশাপাশি নিজেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। বর্তমান রাজ্য সরকার গুণগত শিক্ষা সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা চাদনী চন্দ্রন, ত্রিপুরা স্টেট এনএসএস’র লিয়াসন অফিসার তথা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. চিত্রজিং ভৌমিক, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাণী বিদ্যাপীঠ উচ্চতর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এনএসএস প্রোগ্রাম অফিসার শ্যামল দে। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা যশোদা রিয়াং। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা সংগীত ও লোকনৃত্য পরিবেশন করেন।
Leave feedback about this