2024-11-15
agartala,tripura
রাজ্য শিক্ষা

রাজ্যে এখন শান্তি ও সম্প্রীতির বাতাবরণ রয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী 

জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হচ্ছে শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাজ্যে এখন শান্তি ও সম্প্রীতির বাতাবরণ রয়েছে। শান্তির এই বাতাবরণ অক্ষুন্ন রাখতে পারলেই রাজ্যের সার্বিক বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যকে বহুজাতিক বাণিজ্য ও লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়েতোলার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ ও মৈত্রী সেতু চালু হয়ে গেলে ত্রিপুরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশ দ্বার হয়ে উঠবে৷ এতে বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। আগামীদিনে ত্রিপুরার জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে রাজ্যে বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে রাজ্যের পরিকাঠামো, যোগাযোগ, জনজাতি কল্যাণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প, ক্রীড়া, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও সহজতর করার সদিচ্ছার দরুণ আজ রাজ্যের সাধারন জনগণ বিশেষভাবে উপকৃত। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর শাসনভার গ্রহণ করার পর যে দুর্বার গতিতে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা নিয়ে আগামীদিনে গবেষণার অবকাশ থাকবে। ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতনলাল নাথ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এবং ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায়৷ অনুষ্ঠানে অতিথিগণ রাজ্যের উন্নয়নের তথ্য সম্বলিত একটি ফোল্ডারের আবরণ উন্মোচন করেন।

তাছাড়া প্রদর্শিত হয় একটি তথ্যচিত্রও। অনুষ্ঠানে ৫টি নাগরিক পুরস্কার ও ১০টি পূর্ণরাজ্য দিবস পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা রাজন্য আমল থেকে গণতান্ত্রিক ত্রিপুরার উত্তরণের চিত্র তুলে ধরে বলেন, রাজন্য আমলে ত্রিপুরার মহারাজারা এই রাজ্য ও জনগণের কল্যাণে যেসব কাজ করে গেছেন তা বিগত সরকারের আমলে উপেক্ষা করা হয়েছিল। বর্তমান সরকারের সময়েই এই রাজ্যের মহারাজাদের সঠিক মূল্যায়ণ করে প্রয়োজনীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন,

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রতিটি মানুষের সার্বিক উন্নয়নে চিন্তা করেন। তারই ফলশ্রুতিতে বিগত ১০ বছর ধরে দেশবাসী পেয়েছে একের পর এক জনমুখী প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আয়তনে ছোট রাজ্য হলেও সারা দেশের বিচারে ত্রিপুরার উন্নয়নের গতি অভাবনীয়। দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও গতিশীল প্রশাসন পরিচালনার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে ই-ক্যাবিনেট ও ই-অফিস ব্যবস্থা। রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে সরকারি চাকরি প্রদানের পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে এখন ৬টি জাতীয় সড়ক রয়েছে। আরও ৪টি সড়ককে নীতিগতভাবে জাতীয় সড়ক ঘোষণা করা হয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ২,২৭৫ কোটি টাকায় রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবার মানোন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ন করা হচ্ছে। জল জীবন মিশনে ৫ লক্ষ ৫১ হাজার বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ, ১লক্ষ ২০ হাজার ৬২৪ হেক্টর জমি জল সেচের আওতায় আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় শহর ও গ্রামীণ এলাকায় ৬২,৩২৭টি এবং ৭৪ হাজার আবাস নির্মাণ করা হয়েছে। ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯৩৬ জনকে সামাজিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়াও প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় ১৩ লক্ষের বেশি মানুষকে আয়ুষ্মান কার্ড দেওয়া হয়েছে। ৮১২টি বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাস চালু করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধিতে এখন পর্যন্ত ২,৪৬,৩৩৯ জন কৃষকের অ্যাকাউন্টে ১৫টি কিস্তিতে ৬৪০ কোটি টাকার বেশি জমা পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় এসেছেন ১২ লক্ষের বেশি কৃষক। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের জনজাতিদের আর্থিক বিকাশে ১২টি অ্যাসপিরেশনাল ব্লক সহ ২৩টি জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ‘ত্রিপুরা রুরাল ইকনমিক গ্রোথ এন্ড সাস্টেনেবল সার্ভিস ডেলিভারি’ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহায়তায় ১,৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, মৎস্যচাষ উন্নয়ন, তপশিলিজাতি ও ওবিসি উন্নয়ন, পর্যটন ইত্যাদি বিষয়ের উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা আয়ত্বে রেখে জাতি, জনজাতিদের মধ্যে শান্তি সম্প্রীতির বাতাবরণ বজায় রাখতে পারলে রাজ্যের প্রভূত উন্নয়ন অসম্ভব নয়। তাই প্রশাসন ও জনগণকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে আলোচনায় মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, সদ্য সমাপ্ত উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের প্ল্যানারি অধিবেশনেও দেখা গেছে ত্রিপুরা রাজ্য উত্তর পূর্বাঞ্চলের অনেক রাজ্য থেকে উন্নয়নের নিরিখে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। বক্তব্যে রাজ্য পুলিশ মহানির্দেশক বলেন, উন্নয়নের প্রাথমিক শর্ত নিয়ন্ত্রিত আইন শৃঙ্খলা। এক্ষেত্রে আরক্ষা প্রশাসনও নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে চলছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সচিব অপূর্ব রায়। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য।

Leave feedback about this

  • Quality
  • Price
  • Service