জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা রাজ্যের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষ করে রাজ্যে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে উত্তরপূর্বাঞ্চল উন্নয়ন (ডোনার) মন্ত্রকের মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আজ ডোনার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সভাপতিত্বে উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন (ডোনার) মন্ত্রকের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজাকে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস উৎপাদনে স্বয়ম্ভর করে তোলার লক্ষ্যে দ্বিতীয় উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সচিবালয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী, পরিকল্পনা দপ্তরের সচিব এল টি দার্লং, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধিকর্তা নীরজ কুমার চঞ্চল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আলোচনাকালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মৎস্য ও পশুপালন ক্ষেত্র ত্রিপুরার অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং মানুষের পুষ্টি ও চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজ্যে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসের গড় মাথাপিছু চাহিদা, প্রাপ্যতা এবং ঘাটতির তথ্য তুলে ধরে আলোচনা করেন। তিনি রাজ্যে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন, কৃত্তিম প্রজনন (সেক্স সর্টেট সিমেন) পদ্ধতির প্রয়োগ, দুগ্ধ সমবায়গুলিকে শক্তিশালী করা, মুখ্যমন্ত্রী প্রাণীসম্পদ বিকাশ যোজনায় মহিলা প্রাণীপালকদের হাঁস-মোরগ পালনে সহায়তা, এনএলএম প্রকল্পে পশুপালনে উদ্যোগীদের সহায়তা প্রদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রাজ্যে দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের পাশাপাশি উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলিরও চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে ৪৩১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজাগুলির পাশাপাশি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রপ্তানীর লক্ষ্যে রাজ্যে উচ্চ উৎপাদনশীল শূকর প্রজাতির প্রজননের একটি শূকর প্রজনন খামার এবং প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট গড়ে তোলার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী। দিন দিন গবাদি পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পশু খাদ্যের চাহিদাও বাড়ছে। তাই স্থানীয় উৎস থেকে পশু খাদ্য উৎপাদনে পিপিপি মডেলে বিনিয়োগ আকর্ষিত করার কথা বলেন তিনি। ত্রিপুরা রাজ্য তিন দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বারা পরিবেষ্ঠিত হওয়ায় সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সর্বদাই থাকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে একটি আধুনিক প্রাণী রোগ অনুসন্ধান ল্যাব স্থাপন করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, রাজ্যে মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা এবং মুখ্যমন্ত্রী মৎস্য বিকাশ যোজনায় জলাশয় সম্প্রসারণ এবং সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। গত ৫ বছরে মৎস্যচাষের বিকাশে রাজ্য বাজেট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার তহবিল থেকে ৭৬.৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়া রাজ্যকে মাছ উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতার পাশাপাশি উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ৮১৬ কোটি ৫ লক্ষ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ত্রিপুরা মাছের পোনা উৎপাদনে উদ্বৃত্ত। উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যে বিপননের লক্ষ্যে উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব ভারতে রাজ্যগুলির মধ্যে মাছের পোনার চাহিদা খতিয়ে দেখতে উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের সহায়তা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মাছের পোনা উৎপাদন ও বিপননের জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন পাইকারি ও খুচরো মাছের পোনার বাজার স্থাপন, রাজ্যে শুকনো মাছের ভ্যালু চেইন এর উন্নতিকরণ, মাছের খাদ্য উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আজকের দ্বিতীয় উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়ালি সভায় ডোনার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি রাজ্যে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস এবং পোল্ট্রি উৎপাদন ক্ষমতা, চাহিদা, উদ্বৃত্ত এবং ঘাটতি খতিয়ে দেখে উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান রাখেন। পাশাপাশি উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস এবং পোল্ট্রি উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের পাশাপাশি উদ্বৃত্ত পণ্য পার্শ্ববর্তী দেশে রপ্তানী করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সভায় এছাড়াও আলোচনা করেন অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু, নাগাল্যান্ডের ডেপুটি সিএম টি জেলিয়াং প্রমুখ।
Leave feedback about this