2025-09-08
Ramnagar, Agartala,Tripura
দেশ

ভূপেন হাজারিকার জন্মজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শ্রদ্ধাঞ্জলি

জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- অসমের কিংবদন্তি শিল্পী ভূপেন হাজারিকার জন্মজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হাজারিকাকে “ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠস্বর” হিসেবে অভিহিত করে তাঁর সঙ্গীত, সংস্কৃতি ও সমাজ সচেতনতায় অনন্য অবদান স্মরণ করেন।

১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সাদিয়া, অসমে জন্মগ্রহণ করেন ভূপেন হাজারিকা, যিনি ‘সুধাকণ্ঠ’ (ব্রহ্মপুত্রের কবি) হিসেবে খ্যাত। তাঁর সৃষ্টি করা কালজয়ী গানের কথা আজও অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। শুধু সঙ্গীতে নয়, ভূপেন হাজারিকা অসম বিধানসভায় নির্বাচিত সদস্য হিসেবেও সামাজিক অঙ্গনে ভূমিকা রেখেছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি বিশেষ ব্লগ পোস্টে লেখেন, “এই বছর ভূপেন হাজারিকার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সূচনা। এটি আমাদের জন্য একটি অনন্য মুহূর্ত, যাতে আমরা তাঁর অসামান্য অবদানের প্রতিফলন করতে পারি।” তিনি বলেন, “প্রজন্ম পর প্রজন্ম ভূপেন হাজারিকার গান শুনে বড় হয়েছে, যেখানে প্রত্যেকটি শব্দ ভরে আছে সদয়তা, সামাজিক ন্যায়, ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, পাঁচ বছর বয়সে ভূপেন হাজারিকা প্রথমবারের মতো সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং অসমের সাহিত্য পীঠস্থান লাক্ষ্মীনাথ বেজবৰুৱার নজরে আসেন। কিশোর বয়সে তাঁর প্রথম গান রেকর্ড হয়। কটন কলেজ, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সময় ভূপেন হাজারিকা বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যার মধ্যে ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকান গায়ক-সক্রিয়িস্ট পল রবসন। রবসনের “Ol’ Man River” গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সৃষ্টি করেন বিখ্যাত গান “বিস্তীর্ণ পাৰৰে”।

প্রধানমন্ত্রী মোদি স্মরণ করেন, হাজারিকা সঙ্গীত ও সামাজিক সচেতনতাকে একত্রিত করে অসংখ্য গান রচনা করেছেন। তাঁর সুরে ছিল দারিদ্র্য বিমোচন, নারী শক্তি, গ্রামীন সশক্তি ও জনসাধারণের জীবন সংগ্রামের কথা। তিনি বলেছিলেন, “রেডিও, থিয়েটার, চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারির মাধ্যমে ভূপেন হাজারিকা আমাদের জন্য আধুনিকতার আয়না হয়ে ওঠেন।”

তাঁর সঙ্গীত ভারতের একতা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বহুদূরে পৌঁছে দিয়েছে। অসমীয়া, বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রে গান রচনা করে ভূপেন হাজারিকা দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে তুলে ধরেছেন। ১৯৬৭ সালে অসমের নাওবোইচা থেকে স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে বিধায়ক নির্বাচিত হন, যা জনগণের প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা প্রতিফলিত করে।

ভূপেন হাজারিকা পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ ও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ২০১৯ সালে তাঁর অবদান স্মরণীয় করে ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদি লেখেন, “সঙ্গীত যখন সত্যের মূল থেকে গঠিত হয়, তা সমস্ত বাধা অতিক্রম করে।”

২০১১ সালে ভূপেন হাজারিকার প্রয়াণের সময় লক্ষাধিক মানুষ তাঁর অন্তিম যাত্রায় সান্নিধ্য হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন, “জলুকবাড়ি টিলায় ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছিল – যেই নদী হাজারিকার সঙ্গীতের প্রাণশক্তি ছিল।”

ভূপেন হাজারিকার ঐতিহ্য সংরক্ষণে অসম সরকার “ভূপেন হাজারিকা কালচারাল ট্রাস্ট” গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “তাঁর সঙ্গীত আমাদের করুণাময় ও সাহসী হতে শেখায়। নদী, শ্রমজীবী, চা বাগান কর্মী, নারী ও যুব শক্তির গুরুত্বের বার্তা প্রদান করে।”

প্রধানমন্ত্রী শেষ করেন, “ভূপেন হাজারিকার জীবন এক নমুনা – দয়া, সহানুভূতি ও সংহতির। তার শতবর্ষে আমরা তাঁর বার্তাকে আরও দূর প্রসারিত করি। যেমন তাঁর সুর মানুষকে সংযুক্ত করেছে, তেমনই ধোলা–সাদিয়া সেতু তাঁর নামাঙ্কিত হয়ে মানুষের সংযোগ নিশ্চিত করছে।” এই জন্মশতবর্ষিকী উপলক্ষে ভূপেন হাজারিকার সঙ্গীত ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির অবিস্মরণীয় স্মৃতিতে আমাদের দেশ গর্বিত।

    Leave feedback about this

    • Quality
    • Price
    • Service