জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :-সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, স্বেচ্ছাসেবক, আপদামিত্র সহ সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে বন্যা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কাজ করেছে। সরকারি কর্মচারি থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, ক্লাব প্রতিষ্ঠান, পেনশনার্স সহ সকল স্তরের নাগরিক বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে দান করেছেন যা নিঃসন্দেহে আগামীদিনে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং প্রেক্ষাগৃহে অভয় মিশন এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে রাজ্যে যে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল তা আগে কখনো দেখা যায়নি। উদ্ভুত এই পরিস্থিতি উত্তরণে রাজ্যের জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন দপ্তর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, উদ্ভুত এই বন্যা পরিস্থিতির ফলে রাজ্যের ৮টি জেলাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারমধ্যে দক্ষিণ ত্রিপুরা, গোমতী এবং সিপাহীজলা জেলা বেশি ক্ষতি হয়েছিল। বন্যার কারণে ১৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ৪ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ স্থানে এবং ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যে মোট ৮৮৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল, তাতে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই বন্যায় ৩৮ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৫৮ হাজার ৬৮৭টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের উদ্ভুত বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও কথা হয়। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি সাথে সাথে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় হেলিকপ্টার, এনডিআরএফ টিম পাঠিয়েছিলেন। পাশাপাশি এয়ার লিফট করে বন্যা দুর্গতদের জন্য খাদ্য সামগ্রী বিতরনের ব্যবস্থা করা হয়। কেন্দ্রীয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলও দু’বার রাজ্যে এসে বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। এই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী ত্রান তহবিলের পাশাপাশি রাজ্য বাজেট থেকেও ৫৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্য নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্যারামিটারে পারফর্মার রাজ্য হয়ে উঠেছে। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলাও এখন যথেষ্ট উন্নত। বহিরাজ্যের বিনিয়োগকারীগণ ত্রিপুরায় বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের কাছে ৮৭ জন উদ্যোগপতি বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে মৌ স্বাক্ষর করেছেন। বিনিয়োগের পরিমান প্রায় ৩,৭০০ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন রাজ্য সরকার যেকোন দুর্যোগ বা উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবসময় তৎপর থাকেন। রাজ্য সরকার মানুষের সমস্যা সমাধানে সদা সচেষ্ট। প্রসঙ্গক্রমে মণিপুরে সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের অক্ষত অবস্থায় সরকারি খরচায় রাজ্যে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী অভয় মিশন এবং এমরিকেয়ার্স ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন-এর বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরনের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলা শাসক ও সমাহর্তা ড. বিশাল কুমার। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সদর মহকুমা শাসক মানিক লাল দাস, ত্রিপুরা অভয় মিশনের সভাপতি নির্মল দেব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা অভয় মিশনের সম্পাদক সুস্মিতা দে। অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রতীকি হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত অতিথিগণ ১০ জন বন্যা দুর্গতের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন।
Leave feedback about this