2025-02-08
Ramnagar, Agartala,Tripura
রাজ্য

প্রাকৃতিক সম্পদকে ভিত্তি করে রাজ্যে শিল্প স্থাপনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- ত্রিপুরা রাবার, বাঁশ, প্রাকৃতিক গ্যাস, চা সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এই প্রাকৃতিক সম্পদকে ভিত্তি করে রাজ্যে শিল্প স্থাপনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের রাজ্যে শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই বিভিন্ন নীতি নির্দেশিকাও চালু করেছে। আজ হোটেল পোলো টাওয়ারে ২ দিনব্যাপী ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা-ল্যান্ড অব অপরচুনিটিজ: বিজনেস কনক্লেভ-২০২৫ এর সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এই কনক্লেভের উদ্দেশ্য হল শিল্পোদ্যোগী ও বিনিয়োগকারীদের পারস্পারিক সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজ্যে একটি শিল্প সহায়ক পরিবেশ তৈরী করা। রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং রাজ্য সরকারের শিল্প বান্ধব নীতিগুলোর সহায়তায় বিনিয়োগকারীরা রাজ্যে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বদাই উত্তর পূর্বাঞ্চলকে অষ্ঠলক্ষ্মী বলে অভিহিত করে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজ্যের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে রাবার। রাবার উৎপাদনে ত্রিপুরা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। রাজ্যে রাবার ভিত্তিক শিল্প স্থাপনে রাজ্য সরকার রাবার পার্ক তৈরী করা সহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ করছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা রাজ্যে রাবার ভিত্তিক শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাঁশ রাজ্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। বাঁশভিত্তিক শিল্প স্থাপনেও রাজ্য সরকার বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। রাজ্যে বাঁশ চাষের উন্নয়নে ব্যাম্বু মিশনও চালু করা হয়েছে। রাজ্যের অন্যতম ফল আনারসকে ভিত্তি করে রাজ্যে ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনেও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই রাজ্য সরকার রাজ্যের ইকো-ট্যুরিজম, ধর্মীয় ট্যুরিজমকে উন্নয়ন করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের প্রসারে হোটেল স্থাপনেও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। রাজ্যে আগর শিল্পের প্রসারে আগর পলিসি চালু করা হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে নন-ফরেস্টের ২ হাজার হেক্টর এলাকায় ৫ মিলিয়ন আগর গাছ রয়েছে। দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীরাও রাজ্যে আগর শিল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

কনক্লেভে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা একটি অন্যতম শান্তিপূর্ণ রাজ্য। ত্রিপুরার অর্থনীতি মূলত কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট শিল্পের উপর নির্ভরশীল। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজাগুলির মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নের সূচকে ত্রিপুরা অগ্রনী স্থানে রয়েছে। রাজ্যের গড় মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ লক্ষ ৭৭হাজার ৭২৩ টাকা হয়েছে যা ২০১২ সালের তুলনায় দ্বিগুণ থেকেও বেশী। রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ৮.৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে আরও বিনিয়োগ করার লক্ষো বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। রাজ্যে শিল্প স্থাপন প্রক্রিয়াকে সহজতর করার লক্ষ্যে সিঙ্গেল উইন্ডো ‘স্বাগত’ পোর্টাল চালু সহ নানা পলিসি চালু করা হয়েছে, ফলে ত্রিপুরা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের জন্য আদর্শ গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী সান্তনা চাকমা বলেন, রাজ্যে শিল্প স্থাপনে এই কনক্লেভ ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে। রাজ্য সরকার রাজ্যে শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গঠনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, ছোট রাজ্য হলেও ত্রিপুরায় শিল্প স্থাপনে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যে আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন সহ শিল্প স্থাপনের অনুকুল পরিবেশও রয়েছে। অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে বলেন, গত কয়েক বছরে রাজ্যে বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের কনক্লেভে বিনিয়োগকারীগণ বিভিন্ন দপ্তরের সাথে ৮৭টি মউ স্বাক্ষর করেছেন। প্রায় ৩৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগকারীরা রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা ‘ল্যান্ড ব্যাংক সিস্টেম’ এবং ‘ইনসেনটিভ ক্যালকুলেটর’ এই দুটি পোর্টালের সূচনা করেন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্য বন সংরক্ষক আর কে সামল, ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান নবাদল বণিক প্রমুখ।

    Leave feedback about this

    • Quality
    • Price
    • Service