জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে ইসলামাবাদের কাতর আর্জিতে সাড়া দিচ্ছে না দিল্লি। বৃহস্পতিবার বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, ‘সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠা হচ্ছে না। পাকিস্তান যতদিন সীমান্তে সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়া বন্ধ করছে, ততদিন জল চুক্তি স্থগিত থাকবে।’
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকার এক রিসর্টে অতর্কিতে হানা দিয়ে নিরীহ পর্যটকদের উপরে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীরা। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান ২৬ পর্যটক সহ ২৮ জন। পাকিস্তানের মদতপুষ্ঠ জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ জড়িত। যদিও পরে ওই সংগঠন হামলার দায় অস্বীকার করেছে। ওই হামলার পর গত ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রীগোষ্ঠীর (সিসিএস) বিশেষ বৈঠক বসে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল সহ শীর্ষ আমলারা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দু’ঘন্টা ধরে চলে বৈঠক। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রাখা হবে। পাশাপাশি পাক নাগরিকদের আর কোনও ভিসা দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে যে ভিসা রয়েছে তা বাতিল করা হবে।
সিন্ধুর জল বন্ধ করা হলে রক্ত নদীর ধারা বইয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো। এমনকি পাকিস্তানের অন্যান্য নেতা-মন্ত্রীরাও একই রকমের হুঙ্কার ছেড়েছিলেন। যদিও তাতে লাভ হয়নি। পহেলগাঁও হামলার পরে গত তিন সপ্তাহে একাধিক নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে থাকা জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। আর তাতে গোঁসা হয় পাক সেনার। পাল্টা হামলা চালাতে শুরু করে ভারতে। যোগ্য জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনা। শেষ পর্যন্ত ৮৭ ঘন্টার লড়াই শেষে দুই দেশই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।
‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে গত সোমবার (১২ মে) রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘টেরর’ ও ‘টক’ (সন্ত্রাস এবং আলোচনা) একসঙ্গে চলতে পারে না। ‘টেরর’ ও ‘ট্রেড; (সন্ত্রাস ও বাণিজ্য) একসঙ্গে চলতে পারে না। জল এবং রক্ত একই সঙ্গে বইতে পারে না।’ পাকিস্তানের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও পাক অধিকৃত কাশ্মীর ছাড়া অন্য কোনও বিষয় নিয়ে কোনও আলোচনা নয় বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন মোদি।
গত মঙ্গলবার পঞ্জাবের আদমপুরে বায়ুসেনার ঘাঁটিতে গিয়েও ফের একবার সিন্ধু নদের জল পাকিস্তানকে না দেওয়ার কথা জোর গলায় ঘোষণা করেন। আর তার পরেই সিঁদুরে মেঘ দেখে সরাসরি চিঠি লিখে সিন্ধু চুক্তি স্থগিত না রাখার অনুরোধ জানাল ইসলামাবাদ। ভারতের জলশক্তি মন্ত্রকের সচিব দেবশ্রী মুখোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রকের সচিব সৈয়দ আলী মুর্তজা এক চিঠি পাঠিয়ে কাতর অনুরোধ জানিয়েছেন, দিল্লি যেন সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রাখার মতো কঠিন প্রয়োজনীয় পানীয় জলও পাবে না। করুণ পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়াবে গোটা পাকিস্তানের। ভারত সরকার যেন মানবিক কারণেই সিন্ধুর জল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়।’
Leave feedback about this