2025-07-13
Ramnagar, Agartala,Tripura
পর্যটন রাজ্য

পর্যটন শিল্পের বিকাশে রাজ্য সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে: মুখ্যমন্ত্রী

জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- আজকের দিনটি ত্রিপুরাবাসীর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। উদয়পুরের মাতাবাড়ির বনদুয়ারে গড়ে উঠবে বিশ্ববিখ্যাত আধ্যাত্মিক পর্যটন কেন্দ্র ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক। দেশ বিদেশের ভক্তপ্রাণ মানুষ এই পার্কের আকর্ষণে এখানে ভ্রমণ করতে আসবেন। আজ বনদুয়ারে ৫১ শক্তিপীঠ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। এ উপলক্ষ্যে ভূমি পূজনেরও আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পৌরাণিক মতে দক্ষ কন্যা ও শিব জায়া মা সতীর খন্ডিত দেহাবশেষ পড়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশের ৫১টি স্থানে। এই স্থানগুলিতে গড়ে উঠেছে ৫১টি পবিত্র শক্তিপীঠ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রচেষ্টায় বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে ৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম মা ত্রিপুরাসুন্দরীর আশীর্বাদ ধন্য মাতাবাড়ির বনদুয়ারে গড়ে উঠতে যাচ্ছে ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক। উল্লেখ্য, এই পার্কে থাকবে ৫১টি শক্তিপীঠের প্রতিরূপ। পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে নির্মাণ করা হবে এই ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক। এজন্য ব্যয় হবে প্রায় ৯৭.৭০ কোটি টাকা।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণায় বনদুয়ারে ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মুখ্যমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান। একজন মানুষের পক্ষে পুরো জীবনে সতীর ৫১টি শক্তিপীঠ দর্শন করা সম্ভব নয়। কিন্তু উদয়পুর বনদুয়ারে আসলে তা সম্ভব হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে রাজ্য সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এই শিল্পের প্রসার ও বিকাশে রাজ্যের আর্থসামাজিক মান উন্নয়নে গতি আসবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। রাজ্যের জি.ডি.পি. বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রার আগমনও বৃদ্ধি পাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পরিবহণ। ফলে পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদেরও আর্থসামাজিক মানোন্নয়ন ঘটবে। রাজ্যে উৎপাদিত হস্ত ও কারু শিল্প সামগ্রীর বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই পার্ক রাজ্যের জাতি-জনজাতি গোষ্ঠীর শিল্প, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, একদিন ৫১ শক্তিপীঠ পার্কের জন্য বনদুয়ারের নাম সারা দেশের সঙ্গে বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়বে। বনদুয়ার হয়ে উঠবে মহামিলন ক্ষেত্র। এই পার্কে স্থাপিত হবে ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় নটরাজ মূর্তি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। বিমানপথ, রেলপথ এবং সড়কপথে রাজ্যের সঙ্গে বহিরাজ্যের যোগাযোগ এখন খুবই উন্নত। ফলে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য এখন কোনও অসুবিধায় পড়তে হয় না।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্যই হলো উন্নয়ন। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৬৭৪ কোটি টাকার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পানীয়জল, গ্রামোন্নয়ন প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। মহিলাদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য স্বসহায়ক দল কাজ করছে। বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ৫৬ হাজার স্বসহায়ক দল রয়েছে। এরফলে মহিলারা স্বনির্ভর হচ্ছেন। কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার ইকো ট্যুরিজমের উপর জোর দিয়েছে। এই লক্ষ্যে রোয়া, তৃষ্ণা, সিপাহীজলা অভয়ারণ্যের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। টেপানিয়া ইকো পার্ক, নারকেলকুঞ্জ, ছবিমুড়ায় পর্যটকদের থাকার জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধাযুক্ত লগহাট নির্মাণ করা হয়েছে। রাজ্যে বিদেশি পর্যটকদের আগমন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কসবা কালীবাড়ি মন্দির, অমরপুর চন্ডিবাড়ি মন্দির, চতুর্দশ দেবতা মন্দির, সাক্রমের মহামুনি পেগোডা, প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন কেন্দ্রগুলির উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামীদিনে স্বদেশ দর্শন প্রকল্পে রাজ্যে আরও ৫১টি লগহাট নির্মাণ করা হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, ত্রিপুরার পর্যটন মানচিত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে উদয়পুরের বনদুয়ারে পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে গড়ে উঠছে ৫১টি শক্তিপীঠের প্রতিরূপ। আগামীদিনে এই তীর্থস্থান ত্রিপুরাকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। এই তীর্থস্থান হয়ে উঠবে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক চেতনার এক মিলনক্ষেত্র। এখানে দেশ বিদেশের বহু ধর্মপ্রাণ মানুষের আগমন ঘটবে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এই শক্তিপীঠ পার্ক বনদুয়ার এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থসামাজিক মান উন্নয়নেও ভূমিকা নেবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, সনাতন ধর্ম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম। হিন্দু ধর্মের প্রসার ও বিকাশে ৫১ শক্তিপীঠ স্থাপন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পর্যটন শিল্পের প্রসার ও বিকাশের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার কাজ চলছে। ত্রিপুরার পর্যটন ক্ষেত্রগুলি একদিন বিশ্বের দরবারে পরিচিতি লাভ করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক অভিষেক দেবরায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা প্রশান্ত বাদল নেগী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাতাবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন শিল্পী দাস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোমতী জিলা পরিষদের সভাধিপতি দেবল দেবরায়, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার, গোমতী জেলার জেলাশাসক রিঙ্কু লাখের, পুলিশ সুপার বিজয় দেববর্মা প্রমুখ।

    Leave feedback about this

    • Quality
    • Price
    • Service