জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের বন্যা রাজ্যের জন্য একটি অনাকাঙ্খিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়। রাজ্য সরকার, ত্রাণ সংস্থা ও সর্বোপরি জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গত আগস্ট মাসে রাজ্যের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। বন্যার ফলে সারা রাজ্যে ৫৮ হাজার ৭৮০টি ঘরবাড়ি ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি মেরামতি ও পুনর্নির্মাণের জন্য ৫৩,৮৩০টি পরিবারকে এখন পর্যন্ত ৫৮ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বাসনপত্র ও পরিধানের কাপড় বাবদ ৬ কোটি ৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। বন্যা ও ভূমিধসের কারণে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে মোট ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে সরাসরি ৩১ জন মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আজ বিধানসভায় জনস্বার্থে আনা একটি বেসরকারি প্রস্তাবের উপর আলোচনায় একথা জানান মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তীর আনা বেসরকারি প্রস্তাবটি ছিলো ‘এই বিধানসভা প্রস্তাব করছে যে গত বছরের আগস্ট মাসে রাজ্যে ভয়াবহ বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত পরিবারকে অবিলম্বে পর্যাপ্ত সরকারি সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হোক’।
এই বিষয়ে অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনা করেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ, বিধায়ক গোপাল রায়, বিধায়ক দীপঙ্কর সেন, বিধায়ক রঞ্জিত দাস, বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার, বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা। বেসরকারি প্রস্তাবটির উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ১৯ থেকে ২৩ আগস্ট ভারী এবং অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে ত্রিপুরা অভূতপূর্ব বন্যার সম্মুখীন হয়েছিলো।রাজ্যের ১২টি নদীর মধ্যে উত্তর ত্রিপুরা জুরি নদী ছাড়া ১১টি নদীর জল বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। বন্যায় ১৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ প্রায় ৪ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ স্থানে এবং ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিলো।
সারা রাজ্যে ৮৮৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিলো৷ তাতে ২ লক্ষ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। বন্যা ও ভূমিধসে ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রাথমিক হিসেবে রাজ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও উদ্যান বিভাগে। যার পরিমাণ ৩,২৫২ কোটি টাকা৷ জলসম্পদ দপ্তরের ক্ষতির পরিমাণ ৩,০৮৩ কোটি টাকা। গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের ৩,০০৯ কোটি, পূর্ত দপ্তরে (রাস্তা এবং সেতু) ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৯০০ কোটি, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের ক্ষতির পরিমাণ ১,৫৪৩ কোটি টাকা।
বন্যার সময় এসডিআরএফ-এর ৩২টি দল, এনডিআরএফ-এর ১১টি দল, ১০০০ প্রশিক্ষিত সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবক, ৯০০ আপদামিত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং ৫৪টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল সারা রাজ্যে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নিযুক্ত ছিল। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য বন্যার পর আন্তমন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় দল দু’বার রাজ্য সফর করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় দলের সফরের পর অতিরিক্ত ত্রাণ তহবিলের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৭,০৮১ কোটি টাকার একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। যা বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। অবিলম্বে ত্রাণ পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠনের জন্য রাজ্য সরকার ৫৬৪ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বিভিন্ন রাজ্য এবং জনসাধারণ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা দান করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, বন্যায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর ১৪,৮৩৭৯ জন কৃষককে ১০০০ টাকা করে ১,৪৮৩.৭৯ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। তাছাড়া দপ্তরের পক্ষ থেকে ১৬.২১ লক্ষ টাকার বীজ, চারা এবং সার প্রদান করা হয়েছে। উদ্যান ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ দপ্তরের থেকে ৪৫,৩৪৯ জন কৃষককে ৯৪৬.৫২ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে এবং ১২১৪০৯৮ সংখ্যক বিভিন্ন ধরনের সব্জির চারা প্রদান করেছে। প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের উদ্যোগে ২৮৪২ জন সুবিধাভোগীকে ৩৪১.২১ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে এবং ৪২.১১ লক্ষ টাকার পশু খাবার, ঔষধ এবং টিকা প্রদান করা হয়েছে।
মৎস্য দপ্তর থেকে মোট ১৪,৪৫১ জন সুবিধাভোগীকে ৭৮৪.১৯ লক্ষ টাকার সহায়তা প্রদান করেছে, তারমধ্যে ২২৬৪ জনকে ১৫৪.৯০ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা এবং ১২, ১৮৭ জনকে ৬২৯.২৯ লক্ষ টাকার অন্যান্য সহায়তা প্রদান করেছে। শ্রম দপ্তর থেকে ৩৬,৩৮৯ জন সুবিধাভোগীকে ১,৪৫৫.৫৬ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
Leave feedback about this