জনতার কলম আগরতলা প্রতিনিধি :- মহারাজা বীরবিক্রম ছিলেন এক দূরদর্শী রাজা। তিনি তাঁর রাজত্বকালে রাজ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ সর্বক্ষেত্রেই উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করে গেছেন। তিনি আগরতলা শহরকে উন্নত শহরের আদলে গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। আজকের আগরতলার রাস্তাঘাটের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা তাঁর আমলেই শুরু হয়। জন্ম হলে মৃত্যু হবেই। জন্ম-মৃত্যুর মধ্য সময়ে সমাজের জন্য দৃষ্টান্তমূলক কিছু করে যেতে হবে। মহারাজা বীরবিক্রম তাঁর জীবিত অবস্থায় সেই দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন বলেই আজ আমরা তাঁকে স্মরণ করি। আজ বীরবিক্রম মেমোরিয়াল কলেজের সুর্বণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে ভাষণ রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানের আগে কলেজ প্রাঙ্গণে মহারাজা বীরবিক্রমের স্থাপিত মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন।
মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ রাখতে গিয়ে বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার তাঁর চিন্তাভাবনাগুলিকে আধুনিক রূপ দিয়ে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য একজন বিদ্যানুরাগী ছিলেন। তিনি বিদ্যাপত্তন নামে একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে আগরতলায় নতুন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। বর্তমান রাজ্য সরকার তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজ্যের বিমানবন্দরের নামকরণ তাঁর নামে করেছে। হয়েছে তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয়। আগরতলার কামান চৌমুহনিতে বসানো হয়েছে তাঁর মূর্তি। রাজ্যে অন্য কোনও সরকারই তাদের কাজের মধ্য দিয়ে মহারাজা বীরবিক্রমের প্রতি কোনও দিন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেনি। বর্তমান রাজ্য সরকার তার কাজের মধ্য দিয়ে মহারাজা বীরবিক্রমের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি শুধু রাজাই ছিলেন না, ছিলেন আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার।
অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বি.বি.এম. কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রী দেশ ও বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের শুধু ভালো ফলাফল করে পাশ করলেই হবে না। প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। তাগিদ থাকতে হবে সমাজের জন্য ভালো কিছু করার। বাস্তব জগতের সাথে তাল মিলিয়ে নিজের জীবনকে গড়তে হবে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার রাজ্যকে নেশামুক্ত রাজ্য গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়তে ছাত্রছাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে। নিজে সচেতন হয়ে অন্যকে সচেতন করার দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক নতুন ও আত্মনির্ভর ভারত গড়ার প্রয়াস নিয়েছেন। রাজ্য সরকারও তাঁর পথ অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছে। এ কাজে ছাত্র যুবাদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী কিশোর বর্মন বলেন, মহারাজা বীরবিক্রম তাঁর জীবনের ৩৯ বছরে রাজ্যের জন্য অনেক কিছু করে গেছেন। আজকের তাঁর ১১৭তম জন্মদিনটি রাজ্যের জাতি-জনজাতি প্রতিটি মানুষের কাছে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, মহারাজার বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ও ইচ্ছায় ত্রিপুরা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহারাজা বীরবিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলার ড. বিভাস দেব ও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা অনিমেষ দেববর্মা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বি.বি.এম. কলেজের প্রফেসর ড. রূপক দাস। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন বি.বি.এম. কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মৃণাল দাসগুপ্ত। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ কলেজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে একটি স্মরণিকা ও অ্যানুয়েল রিপোর্টের আবরণ উন্মোচন করেন। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী, উচ্চশিক্ষামন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের ১৮টি স্টল ঘুরে দেখেন।
Leave feedback about this