আগরতলা প্রতিনিধি :- জনতার কলম ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশে নবনিযুক্ত কনস্টেবলদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে জনস্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা। রাজ্য সরকারের স্বচ্ছ নিয়োগনীতি এবং চাকরি প্রাপকদের কঠোর পরিশ্রমের ফলেই তারা আজ অফার পেয়েছেন ও তাদের স্বপ্ন সফল হয়েছে। আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ত্রিপুরা পুলিশের কনস্টেবল পদে নবনিযুক্ত চাকরি প্রাপকদের নিয়োগপত্র প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।
আজ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে মোট ৯৭৫ জনকে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৬৪৩ জন পুরুষ এবং ৩৩২ জন মহিলা রয়েছেন। অনুষ্ঠানমঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত অতিথিবর্গ চাকরি প্রাপক কয়েকজনের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি চাকরি প্রাপকদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। চাকরি প্রাপকদের মধ্যে হয়ত কেউ কেউ পরিবারের প্রথম সরকারি চাকরি প্রাপক। ফলে তাদের পরিবারে নিঃসন্দেহে একটি নতুন আশা সঞ্চারিত হবে। প্রকৃতপক্ষে রাজ্যের যুবাদের কর্মসংস্থানে আজকের এই দিনটি একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক বলা যায়। তিনি বলেন, প্রশাসনে স্বচ্ছতা এবং গতি আনতে বিভিন্ন দপ্তরে নতুন পদ সৃষ্টি সহ পুরোনো পদগুলি পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যে পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি সহ অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে শক্তিশালী করতে সরকারের নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া জারি রেখে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এবছর মার্চ মাস পর্যন্ত ডাই-ইন হারনেস সহ মোট ১৭ হাজার ৫৫৪ জনকে সরকারি চাকরি দিয়েছে। শুধুমাত্র ২০২৫ সালেই এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৯৯ জন সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আজ ৩৩২ জন মহিলাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। এরফলে মহিলারা স্বাবলম্বী এবং অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই আরও ৯১৬ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। সরকার অনুমোদিত ২১৮ জন সাব-ইন্সপেক্টরের নিয়োগ প্রক্রিয়াও শীঘ্রই শুরু হবে। তাছাড়া ৬০৬৭ জন স্পেশাল এক্সকিউটিভদের তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়ার কাজ চলছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের কাজে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ না করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ত্রিপুরা পুলিশ নিরন্তর কাজ করে চলেছে। এরফলে সামগ্রিক অপরাধের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে সর্বনিম্ন দিক থেকে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং ক্রাইম এগেইনস্ট বডি এর ক্ষেত্রে ত্রিপুরা ২৮টি রাজ্যের মধ্যে সর্বনিম্ন দিক থেকে অষ্টম স্থানে রয়েছে। সম্পত্তি বিষয়ক অপরাধে ত্রিপুরা ২৮-টি রাজ্যের মধ্যে সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে।
২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সামগ্রিক অপরাধ ১৯.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে প্রথম ৪ মাসে সামগ্রিক অপরাধের হার পুনরায় আরও ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশন ত্রিপুরা পুলিশ এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রশংসা করেছে। মহিলা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রতিটি থানায় ২৪x৭ মহিলা হেল্প ডেস্ক চালু রয়েছে। মহিলাদের সুরক্ষায় ১০৯১ মহিলা হেল্প লাইন চালু রয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ১টি করে মোট ৯টি মহিলা থানা রয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রাজ্য পুলিশের বিশেষ অভিযানের কথাও মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালে ত্রিপুরা পুলিশের ৯ হাজারেরও বেশি প্রয়াস কর্মসূচিতে ২ লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন। নতুন ফৌজদারি আইন সম্পর্কেও রাজ্য পুলিশকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথাও তিনি উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা ত্রিপুরা পুলিশে যোগ দিচ্ছেন তাদের জন্য এক নতুন অধ্যায় শুরু হল। তাদের ইতিবাচক ভাবনা সমাজের কাছে দপ্তরের ভাবমূর্তি বাড়িয়ে তুলবে। মানুষের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চাকুরিপ্রাপকগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য্য বলেন, সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজ্য পুলিশ অগ্রনী ভূমিকা নিচ্ছে। পুলিশ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের নিরাপত্তায় নিরন্তর কাজ করে চলেছে। অনুষ্ঠানে পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, শ্রম দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায়, জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের দপ্তরের মন্ত্রী সুধাংশু দাস, সমবায় দপ্তরের মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন ডিজিপি ইন্টেলিজেন্স অনুরাগ ধ্যানকর।
Leave feedback about this