জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- বৃহস্পতিবার দুপুরে জিরানীয়া মহকুমা শাসক অফিসের কনফারেন্স হলঘরে জিরানীয়া মহকুমার অন্তর্গত বিভিন্ন লাইন ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে এক উচ্চস্তরীয় পর্যালোচনা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন ত্রিপুরা সরকারের খাদ্য জনসংভরণ ও ক্রেতা স্বার্থ বিষয়ক তথা পরিবহণ ও পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। বৈঠকে তিনি উপস্থিত আধিকারিকদের মাধ্যমে জিরানীয়া মহকুমার অধীন জিরানীয়া নগর পঞ্চায়েত, রাণীরবাজার পুর-পরিষদ, জিরানীয়া ব্লক সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত,ভিলেজ কমিটি এলাকায় সক্রিয় বিভিন্ন দপ্তরের চলমান কাজের অগ্রগতি ও সমস্যা সম্পর্কে অবগত হন।
পর্যালোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, জিরানীয়া মহকুমার অধীন বিভিন্ন ব্লক- নগর পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলোকে আরো দ্রুতগতিতে ত্বরান্বিত করার জন্য সকল স্তরের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের আধিকারিকদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে জনগণের জন্য কাজ করে যেতে হবে। চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলো যথাসময়ে সম্পাদনে যাতে কোন গাফিলতি না থাকে তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
গোটা জিরানীয়া মহকুমায় আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সরকারের তরফ থেকে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুততার সাথে কাজ করার জন্য তিনি পর্যালোচনা বৈঠকে উপস্থিত আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ প্রদান করেন।
পর্যালোচনা বৈঠকে মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জিরানীয়া মহকুমার সার্বিক পরিস্থিতি সহ সামষ্টিক অর্থনীতির চিত্র, জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং সাফল্য অর্জিত হয়েছে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্প ও যোজনা বাস্তবায়নে যেসব খাতে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে তার বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত আধিকারিকদের কাছ থেকে অবগত হন।
বৈঠকে উপস্থিত আধিকারিকদের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন,আমি আপনাদের সকলকে এই আহ্বান জানাবো যে মানুষের পাশে যান মানুষের জন্য কাজ করুন। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি হবে জনগণকে কেন্দ্র করে। স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, জ্ঞান ভিত্তিক ও কল্যাণমুখী দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন আমরা গড়ে তুলতে চাই। যাতে জনগণ উন্নত এবং মানসম্মত সেবা পায়। আমাদের সরকার ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই কাজটা আপনাদেরই করতে হবে।
তিনি বলেন, আমার কথা খুব স্পষ্ট। আমরা ২০১৮ এবং ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছি। আমরা কিন্তু জনগণের সম্মুখে এই নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়ার মধ্য দিয়ে একটা অঙ্গীকার করে আসি। আর সেই ইশতেহার বাস্তবায়নের মধ্যদিয়েই আজকের ত্রিপুরা রাজ্যটা কিন্তু বদলে গেছে। প্রতিটি বাজেটে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারটা অনুসরণ করি বলেই এই পরিবর্তনটা করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আমাদের সরকারের একটা ধারাবাহিকতা আছে যে কারণে উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। সুফলটা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
তিনি আরও বলেন, আগামী দিন কয়েকের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট জারী হয়ে যাবে। নির্বাচন ঘোষণার পর সরকারের জনকল্যাণমুখী চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে যাহাতে কোন ধরনের স্থবিরতা না আসে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধিকে সম্মান জানিয়ে এবং সমস্ত ধরনের আইন মেনে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ যাতে সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হয়, সে ব্যাপারে সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।
জনকল্যাণমুখী সকল প্রকল্পগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। যেকোনো ধরনের জনকল্যাণমুখী কাজের গুণগতমান বজায় রেখে যাতে সঠিকভাবে সকল কাজের বাস্তবায়ন হয় সেজন্য তদারকি বাড়াতে হবে। নিজেদের কাজের মাধ্যমে সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার জনগণের সরকার। জনগণের সঠিক সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। কম কথা বলে কাজ বেশি করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। এ ছাড়া আজকের বৈঠকে মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী যেকোনো সরকারি কাজে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রতি ঘরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
এদিন পর্যালোচনা বৈঠকে পূর্ত দপ্তরের বিভিন্ন সড়ক ও অন্যান্য কাজের অগ্রগতি, জাতীয় সড়ক প্রশস্তিকরণ নিয়েও আলোচনা হয় এবং দপ্তরের অসমাপ্ত কাজগুলো যাতে দ্রুত সমাপ্ত করা হয় তারজন্য মন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করেন করেন। বিদ্যুৎ দপ্তরের কাজকর্ম পর্যালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন,বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদানের জন্য আরও সচেতন থাকতে হবে।
বৈঠকে পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় ও মজলিশপুর সহ গোটা জিরানীয়া মহকুমায় জলজীবন মিশন প্রকল্পে অসমাপ্ত কাজের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। গোটা মহকুমায় জনগণের পানীয় জলের যাতে কোন ধরনের সমস্যা না থাকে তার উপর পর্যালোচনা বৈঠকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তিনি বলেন,নাগরিকদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল সরবরাহ করা আমাদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। গণবন্টন ব্যবস্থা সম্পর্কেও সভায় আলোচনা করা হয়।
গণবন্টন ব্যবস্থা যাতে সুষ্ঠুভাবে বজায় থাকে তার জন্য খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকদের তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। বৈঠকে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়।
আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জিরানীয়া মহকুমার মহকুমা শাসক শান্তি রঞ্জন চাকমা, অতিরিক্ত মহাকুমা শাসক অনিমেষ ধর, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কমল কৃষ্ণ কলই, জিরানীয়া মহকুমার কৃষি তত্বাবধায়ক সৌমেন কুমার দাস, পূর্ত দপ্তরের জিরানীয়া ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সত্যনারায়ণ সরকার, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের জিরানীয়া ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার প্রদীপ দেববর্মা, পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের জিরানীয়া ডিভিশনের নির্বাহী ও সহকারী বাস্তুকার, রাণীরবাজার পুর পরিষদের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, জিরানীয়া নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান রতন কুমার দাস, রাণীরবাজার পুর-পরিষদের চেয়ারপার্সন অপর্ণা শুক্ল দাস, ভাইস-চেয়ারপার্সন প্রবীর কুমার দাস, জিরানীয়া পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন মঞ্জু দাস, ভাইস-চেয়ারপার্সন প্রীতম দেবনাথ, বিশিষ্ট সমাজসেবী গৌরাঙ্গ ভৌমিক,পার্থ সারথি সাহা, জিরানীয়া ব্লক এডভাইজারি কমিটির চেয়ারম্যান শুভমণি দেববর্মা,জিরানীয়া ব্লকের বিডিও মোহম্মদ তুষার আলোক, মান্দাই মহকুমা বন আধিকারিক,পূর্ত দপ্তরের সহকারী বাস্তুকার, ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক,তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর,জল সম্পদ দপ্তর, ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, সিনিয়র ম্যানেজার, সমাজ কল্যাণ দপ্তরের সিডিপিও, শিক্ষা দপ্তরের অধীন জিরানীয়ার বিদ্যালয় পরিদর্শক, জিরানীয়া কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারের এমওআইসি, প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তর, হর্টিকালচার দপ্তর, অগ্নিনির্বাপক দপ্তর, জিরানীয়া ও রাণীরবাজার থানার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার-ইন-চার্জ গণ সহ বিভিন্ন লাইন ডিপার্টমেন্টের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা।
Leave feedback about this