জনতার কলম আগরতলা প্রতিনিধি :-আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হলো তিপ্রা মথা পার্টি আহ্বান করা বহুল প্রতীক্ষিত ‘ওয়ান নর্থ ইস্ট’ সমাবেশ। উত্তর–পূর্ব জুড়ে একটি সর্বআঞ্চলিক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার ঘোষণার পর এই সমাবেশকে আঞ্চলিক শক্তি প্রদর্শন ও আত্মপরিচয়ের দাবি তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। 
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তিপ্রা মথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মন, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা, অসম পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল লাংথাছা, নাগাল্যান্ডের বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ম্মহনলুমো কিকন, ইন্ডিয়ান গোর্খা জনশক্তি ফ্রন্টের অজয় এডওয়ার্ডসসহ উত্তর–পূর্বের বিভিন্ন প্রান্তের আঞ্চলিক নেতারা। 
প্রদ্যোত দেববর্মন অভিযোগ করেন, জাতীয় দলগুলো সহজেই আগরতলায় সভা–সমাবেশ করতে পারলেও তার দলকে শুরু থেকেই নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন,
“৭ নভেম্বর এই সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমরা অপেক্ষা করেছি, আজ অনুমতি নিয়ে করছি। এই সফলতা এসেছে থানসা— ঐক্যের কারণে।”
‘গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড’ দাবিকে ব্যঙ্গ করার প্রবণতা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রদ্যোত। তার কথায়,
“অনেকে হাসে, কটাক্ষ করে। কিন্তু যত আঘাত পাব, ততই আমরা আরও শক্ত হয়ে ফিরব। আজ না হলে কাল, একদিন গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড আমরা আদায় করে নেব— যদি নিজেদের মধ্যে ঐক্য রাখি।” 
তিনি আরও অভিযোগ করেন, জাতীয় দলগুলো আঞ্চলিক দলগুলিকে দুর্বল করতে নিয়মিত নানা কৌশল নেয়।
“দিল্লিতে জাতীয় দলের নেতার সঙ্গে দেখা করতে মুখ্যমন্ত্রীরাও কখনও–কখনও দশ দিন অপেক্ষা করেন। এটাই হল সম্মান!”— মন্তব্য তার।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বলেন, উত্তর–পূর্বের বিভিন্ন পাহাড় থেকে আসলেও সকলের পরিচয় একই— আদিবাসী বা স্বদেশী পরিচয়।
“আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা অভ্যন্তরীণ বিভাজন। ঐক্য না থাকায় আমরা আমাদের শক্তি দেখাতে পারিনি,”— বলেন সাংমা।
তিনি বৈষম্য–বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ‘ওয়ান নর্থ ইস্ট’-কে স্বদেশী কণ্ঠস্বর তুলে ধরার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আখ্যা দেন। সাংমার বক্তব্যে প্রদ্যোতের প্রতি বিশেষ সৌহার্দ্য প্রকাশ পায়, যা অনেকের কাছে আগামী নির্বাচনে তিপ্রা মথার মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে প্রদ্যোতকে ইঙ্গিত করার বার্তা হিসেবেও ধরা পড়েছে। 
ত্রিপুরার বনমন্ত্রী ও তিপ্রা মথার শীর্ষ নেতা আনিমেষ দেববর্মা বলেন, জাতীয় দলগুলো আঞ্চলিক দলগুলোকে কেবল ‘অস্থায়ী ফুট সোলজার’ হিসেবে দেখে। বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল নির্বাচনের উদাহরণ তুলে তিনি অভিযোগ করেন— জাতীয় দল আগে এক আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোটে লড়েছিল, পরে জেতা দলের সঙ্গেই হাত মিলিয়ে আগের জোটসঙ্গীকে বাদ দিয়েছিল।
অসমের ড্যানিয়েল লাংথাছা আবেগপ্রবণ হয়ে তার বাবার হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন— ঘৃণা ও বিভাজনই উত্তর–পূর্বের সবচেয়ে বড় শত্রু।
নাগাল্যান্ডের কিকন বক্তব্যে ভাষা–সংস্কৃতি রক্ষার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “নিজের ভাষায় শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া মানে আমাদের অস্তিত্ব আঘাত করা। যাদের একসময় আমরা আশ্রয় দিয়েছি, আজ তারাই আমাদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।”
তিপ্রা মথা এখনও ত্রিপুরায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে থাকলেও এই সমাবেশের পর রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন— আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিপ্রা মথা হয়তো একক ভাবেই লড়বে এবং ‘ওয়ান নর্থ ইস্ট’কে পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে রূপ দেবে।

Leave feedback about this