জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- আজ থেকে অর্থ্যাৎ ২৭ আগস্ট ২০২৫ থেকে ভারত থেকে আমেরিকায় আমদানি হওয়া শ্রমনির্ভর পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ভারতীয় রপ্তানির প্রায় অর্ধেক অংশে গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে মোট ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের একটি বড় অংশই এই ধরনের শ্রমনির্ভর পণ্যের ওপর নির্ভরশীল।
প্রধানত চিংড়ি, তৈরি পোশাক, চামড়া এবং গহনার মতো খাতগুলোতে এই বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে। তবে ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স ও পেট্রোলিয়ামের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত এই বাড়তি চাপ থেকে মুক্ত থাকবে। এখন পর্যন্ত আমেরিকায় রপ্তানির ওপর ২৫% শুল্ক আরোপিত ছিল। এবার রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার অভিযোগে তার সঙ্গে অতিরিক্ত ২৫% যুক্ত হচ্ছে।
রপ্তানিকারকরা এই পদক্ষেপকে “অত্যন্ত সীমাবদ্ধতামূলক” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের মতে, এর ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে কমে যাবে। বিপরীতে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলি তুলনামূলক কম শুল্কের কারণে সুবিধা পাবে।
জুলাই মাসে অনেক ভারতীয় সংস্থা দ্রুত রপ্তানি বাড়িয়েছে। ফলে আমেরিকায় ভারতীয় রপ্তানি প্রায় ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আমদানি বেড়েছে ১৪%। এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১.৬%। তবে শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন ট্যারিফ কার্যকর হওয়ার পর চিত্র পাল্টে যাবে।
চামড়া ও ফুটওয়্যার শিল্পের প্রতিনিধিরা সতর্ক করেছেন যে এই ট্যারিফের কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং কর্মীদের ছাঁটাই অনিবার্য হবে। একইভাবে, গহনা শিল্পের রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, আমেরিকা যেহেতু সবচেয়ে বড় বাজার, তাই কর্মসংস্থান সংকট অনিবার্য। তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি কৌশল, সুদের ভর্তুকি, ব্যবসা সহজীকরণ, দ্রুত জিএসটি রিফান্ড এবং এসইজেড আইন সংস্কারের মতো পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল-এর মহাসচিব মিথিলেশ্বর ঠাকুর জানিয়েছেন, ১০.৩ বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় টেক্সটাইল রপ্তানি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২৫% শুল্ক শিল্প সামলাতে পারলেও অতিরিক্ত ২৫% চাপ কার্যত মার্কিন বাজার থেকে ভারতীয় পোশাককে সরিয়ে দিচ্ছে।
অর্থনৈতিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক GTRI-এর হিসাব অনুযায়ী, আমেরিকার নতুন নীতি ভারতের ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির প্রায় ৬৬% অংশকে প্রভাবিত করবে। প্রায় ৬০.২ বিলিয়ন ডলারের শ্রমনির্ভর পণ্য যেমন পোশাক, গহনা ও চিংড়ির ওপর ৫০% শুল্ক কার্যকর হবে।
GTRI-র প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য এক বিরাট বাণিজ্যিক ধাক্কা। এতে শ্রমনির্ভর শিল্পের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা এবং কর্মসংস্থান দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আমেরিকায় ভারতের রপ্তানি ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। যেখানে ৩০% রপ্তানিতে কোনো ট্যারিফ থাকবে না, ৪% রপ্তানিতে ২৫% ট্যারিফ এবং ৬৬% রপ্তানিতে ৫০% ট্যারিফ বসবে। ফলে এসব খাতে রপ্তানি ৭০% পর্যন্ত কমতে পারে, যার ফলে মোট রপ্তানি প্রায় ৪৩% হ্রাস পাবে এবং লাখো মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি শুধু মার্কিন বাজারে ভারতের অবস্থানকে দুর্বল করবে না, বরং বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে ভারতের অংশগ্রহণেও বড় আঘাত হানবে।
Leave feedback about this