2025-07-22
Ramnagar, Agartala,Tripura
দেশ

আচমকাই উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিলেন জগদীপ ধনকড়

জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- দেশজুড়ে তীব্র রাজনৈতিক জল্পনা ছড়িয়ে আচমকাই উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিলেন জগদীপ ধনকড়। রবিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে একটি সংক্ষিপ্ত চিঠি পাঠিয়ে তিনি তাঁর ইস্তফার সিদ্ধান্ত জানান। সেই চিঠিতে তিনি ‘স্বাস্থ্যের কারণেই’ এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, বিষয়টি শুধুই স্বাস্থ্যগত নয়, এর পেছনে আরও গভীর কোনও রাজনৈতিক সমীকরণ থাকতে পারে। রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে ধনকড় জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যের কারণে চিকিৎসকদের পরামর্শেই উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সাংসদদের ধন্যবাদ জানান। ৭৪ বছর বয়সি ধনকড় আরও জানান, দায়িত্বপালন করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছেন। উপরাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি ভারতের অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছেন।

রাজস্থান থেকে উঠে আসা ধনকড় ২০২২ সালের আগস্টে দেশের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তার আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে ছিলেন। বিজেপি ঘনিষ্ঠ এই প্রবীণ আইনজীবী রাজনীতির পাশাপাশি বিচারব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলার প্রশ্নে বরাবরই স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। রাজ্যসভায় চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশংসা যেমন হয়েছে, তেমনই বিরোধীদের সঙ্গে তাঁর একাধিক বার একরোখা অবস্থানও নজরে এসেছে। ধনকড়ের ইস্তফার পরবর্তীতে সাংবিধানিকভাবে রাজ্যসভার কার্যনির্বাহী দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহ। তবে প্রশ্ন উঠেছে, দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ সাংবিধানিক পদে বসা একজন ব্যক্তির এমন আকস্মিক পদত্যাগ কি শুধুই শরীর-সঙ্কটের ফল? নাকি এর পেছনে কেন্দ্রীয় সরকারের অভ্যন্তরীণ কোনও চাপ বা মতপার্থক্য কাজ করেছে? এদিন রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি মনোনীত তিন সদস্য ও নির্বাচিত দুই সদস্যকে শপথবাক্য পাঠ করান তিনি। অবশ্য কিছুদিন আগেই হিমাচল প্রদেশে একটি অনুষ্ঠানে ভাষণের পরই জ্ঞান হারান ধনকড়। গত মার্চেই তাঁকে দিল্লির এইমসে ভর্তি হতে হয়েছিল।

উচ্চ পর্যায়ের সরকারি সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্ট নয়, সংসদই সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান-এই বার্তাই বারবার তুলে ধরতে চেয়েছেন ধনকড়। সাম্প্রতিককালে, বিভিন্ন মঞ্চে তিনি সেই বার্তা দিচ্ছিলেন। বাদল অধিবেশনে এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বার্মার অপসারণের প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করেই সরকার পক্ষের সঙ্গে তীব্র মতানৈক্য তৈরি হয় ধনকড়ের। বিচারপতি অপসারণের প্রক্রিয়া ঘিরে সরাসরি সুপ্রিম কোর্ট ও বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংঘাতের রাস্তায় হাঁটতে চাইছিলেন ধনকড়। কিন্তু সরকার পক্ষ রাজি হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট ও বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাওয়ার উপযুক্ত সময় এখন নয় বলেই মত সরকারের। সুত্র মারফত খবর, এদিন দুপুরের পর থেকে বিষয়টা নিয়ে সরকারের সঙ্গে ধনকড়ের মতানৈক্য প্রকট হয়। এরপরেই সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমসারির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, ধনকড়ের ইস্তফার বিষয়টি সামনে এসেছে।

বিরোধীরা ইতিমধ্যেই এই ইস্তফা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, ধনকড় গত সপ্তাহেও বেশ সক্রিয় ছিলেন, হঠাৎ কী এমন হল যে পদত্যাগ করতে হল? তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুনেছি শারীরিক কারণে তিনি পদত্যাগ করছেন। যদি পদত্যাগের কারণ শারীরিক হয় তাহলে তাঁর সুস্থতা কামনা করছি।” তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ফেসবুকে লেখেন, ‘শুধু স্বাস্থই কারণ? যদি হয়, সুস্থ হয়ে উঠুন। অন্যথায়, কৌতূহল থাকল।’ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের মন্তব্য, “এই সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত পদত্যাগের পিছনে আরও কিছু বিষয় রয়েছে-এটা স্পষ্ট। যদিও এখন জল্পনার সময় নয়।” এদিন রাতে নির্দল সাংসদ পাপ্পু যাদব একটি মন্তব্য করেন যাতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পাপ্পুর দাবি, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে কিছুটা চাপে ফেলতেই এই ইস্তফা। ধনকড়ের জায়গায় উত্তরপ্রদেশের উপ মুখ্যমন্ত্রী মনোজ সিনহাকে নিয়ে আসার চেষ্টা করতেই ধনকড়কে সরিয়ে দেওয়া হল বলে মন্তব্য তাঁর। পাপ্পুর দাবি এটা পুরোপরি রাজনৈতিক কারণে পদত্যাগ।

    Leave feedback about this

    • Quality
    • Price
    • Service