জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- অপারেশন সিঁদুর আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে, শেষ করা হয়নি। পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা ফের মাথাচাড়া দিলে প্রয়োজনে আবার গুড়িয়ে দেওয়া হবে জঙ্গিঘাঁটি। সোমবার অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদে বিশেষ আলোচনা চলাকালীন এমনই হুঁশিয়ারি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর। পাশাপাশি কোনও তৃতীয়পক্ষের চাপ নয়, পাকিস্তানের কাতর আকুতিতেই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানালেন তিনি।
রাজনাথ সিং জানান, পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে থাকা জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরই পাকিস্তানের DGMO কে পুরো ঘটনা জানান ভারতের DGMO। যদিও এরপরেই ভারতের একাধিক জায়গা টার্গেট করে মিসাইল, ড্রোন হামলা চালানোর চেষ্টা করে পাকিস্তান। যা রুখে দেয় দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সংসদে রাজনাথ বলেন, পহেলগাঁও হামলার বদলায় মাত্র ২২ মিনিটে জঙ্গিদের ঘরে ঢুকে মেরেছে সেনা।
অপারেশন সিঁদুরে ঘাবড়ে গিয়ে হামলা চালায় পাকিস্তান। ১০ মে রাতে পাকিস্তান মিসাইল ছোঁড়ে। পাল্টা হামলায় ভারত পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস করে দেয়। যদিও ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কোনও ক্ষতি হয়নি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বদ্ধপরিকর ভারত। এরপরেই নাম না করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি ওড়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, কারও চাপে অপারেশেন সিঁদুর স্থগতি হয়নি। ভারতীয় সেনার মার খেয়ে পাকিস্তান যুদ্ধ থামানোর অনুরোধ করেছিল। ১২ মে দুই দেশের DGMO-র মধ্যে কথা হয়। এর আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশ যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়।
ভারতের ক’টা বিমান ধ্বংস হল সেটা জানতে চাইছেন কেন? সংসদে দাঁড়িয়ে এভাবেই বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। বিরোধীদের বিঁধে তিনি বলেন, বিরোধীদের প্রশ্নগুলি মোটেই জাতীয় স্বার্থকে প্রতিফলিত করে না। কত অস্ত্র বা কত বিমান ধ্বংস হল, সেই প্রশ্ন না করে বিরোধীদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল জঙ্গিঘাঁটিগুলো সফলভাবে ধ্বংস করা গিয়েছে কিনা। অর্থাৎ ক্ষয়ক্ষতি জানতে চেয়ে বিরোধীদের প্রশ্নকে কার্যত অবান্তর প্রমাণিত করলেন রাজনাথ। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সোমবার আলোচনা শুরু হল সংসদে।
পাক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার এই অপারেশনে ভারতের কতখানি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেই নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। ভারতীয় সেনার তরফে ক্ষয়ক্ষতি মেনে নেওয়া হলেও তার পরিমাণ স্পষ্ট করা হয়নি। সেই একই পথে হাঁটলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, আমাদের কয়েকজন বিরোধী সদস্য জানতে চাইছেন, ভারতের কত যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। আমার মনে হয়। এই প্রশ্নটা আমাদের জাতীয় মানসিকতাকে প্রতিফলিত করে না। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, বিরোধীরা তো জানতে চাননি যে শত্রুদের ক’টা যুদ্ধবিমান আমরা ধ্বংস করেছি? যদি প্রশ্ন করতে হয় তাহলে জিজ্ঞাসা করুন, ভারত জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে কিনা।
উত্তর হল হ্যাঁ জিজ্ঞাসা করুন, এই অপারেশনে আমাদের বীর সেনার কোনও ক্ষতি হয়েছে কিনা, উত্তর হল না, আমাদের কোনও সেনার ক্ষতি হয়নি। জিজ্ঞাসা করুন, অপারেশন সিঁদুর সফল হয়েছে কিনা। উত্তর হল হ্যাঁ। অপারেশন সিঁদুর সফল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলে কেউ জিজ্ঞাসা করে না, পরীক্ষাকেন্দ্রে তার কলম ভেঙে গিয়েছিল কিনা। তাই ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের খতিয়ান চাওয়া আদতে খুব একটা যুক্তিসঙ্গত নয় বলেই ইঙ্গিত করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
আমাদের সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অসংখ্য প্রচেষ্টা করেছে। সোমবার লোকসভায় এমনটাই জানালেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, কিন্তু পরবর্তীতে, ২০১৬ সালের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, ২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হামলা এবং ২০২৫ সালের অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে, আমরা শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি ভিন্ন পথ গ্রহণ করেছি। নরেন্দ্র মোদি সরকারের অবস্থান স্পষ্ট-আলোচনা এবং সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং আরও বলেছেন, আমরা ভগবান কৃষ্ণের কাছ থেকে শিখেছি, শেষ পর্যন্ত, ‘ধর্ম’ রক্ষা করার জন্য সুদর্শন চক্র বেছে নিতে হয়। আমরা ২০০৬ সালের সংসদ হামলা, ২০০৮ সালের মুম্বই হামলা দেখেছি-এবং এখন আমরা বলেছি যে যথেষ্ট হয়েছে এবং সুদর্শন চক্র বেছে নিয়েছি। রাজনাথ আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, যখন আপনার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসবাদকে একটি কৌশল করে ফেলে এবং সংলাপের ভাষা বোঝে না, তখন দৃঢ় থাকা এবং সিদ্ধান্তমূলক হওয়াই একমাত্র বিকল্প।
রাজনাথের কথায়, সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনকারীদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, ভারত মাতৃভূমিকে রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আসুন আমরা সকলেই দলীয় মতভেদের উর্ধ্বে উঠে একসাথে দাঁড়াই। পাকিস্তানের সমালোচনা করে রাজনাথ বলেছেন, সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশগুলির সঙ্গে সংলাপ করা যেতে পারে। কিন্তু যে দেশে ভারতের বিরুদ্ধে কেবল ধর্মীয় উগ্রতা এবং ঘৃণা রয়েছে, তাদের সাথে সংলাপ হতে পারে না সন্ত্রাসবাদের ভাষা ভয়, রক্ত এবং ঘৃণা, সংলাপ নয়।
গুলির শব্দে সংলাপের কণ্ঠস্বর দমন করা হয়। যেখানে রক্তপাত হয় সেখানে আলোচনা হতে পারে না। পাকিস্তান নিজের ফাঁদে আটকা পড়েছে, পাকিস্তানের উদ্দেশ্য এবং নীতি সম্পর্কে কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। পাকিস্তান সরকার সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শেষকৃত্যের আয়োজন করে এবং সেনা কর্মকর্তারা তাতে অংশগ্রহণ করে।
Leave feedback about this