জনতার কলম আগরতলা প্রতিনিধি :-ভবিষ্যতের প্রজন্মের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাসহ মৌলিক পরিষেবা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের ১৪টি উন্নয়নমূলক প্রকল্প উদ্বোধন এবং কর্মজীবি মহিলাদের জন্য পাঁচটি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা এই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি আগরতলা ডায়েটের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বালকদের হোস্টেলেরও উদ্বোধন করা হয়। এই সব উদ্যোগ ভার্চুয়ালি সম্পন্ন করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে সর্বক্ষেত্রে উন্নত করার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে রাজ্য সরকারও উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করে কাজ করছে। বর্তমানে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বের মধ্যে উন্নয়নের দিক দিয়ে প্রথম এবং দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, উন্নয়ন কখনোই পর্যাপ্ত নয়, বরং এটি সামগ্রিক ও অবিচ্ছিন্ন হতে হবে। সেই উদ্দেশ্যেই রাজ্য সরকার উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্যভাবে পশ্চিম ত্রিপুরার বিভিন্ন মহকুমায় ৯টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, নরসিংগড় ও অভয়নগরে দুটি চাইন্ড কেয়ার ইনস্টিটিউট পার্ক, অভয়নগরে মেয়েদের জন্য আফটার কেয়ার হোম, চাইন্ড কেয়ার ইনস্টিটিউট ও অনাথ শিশুদের জন্য স্পেশালাইজড অ্যাডপশন এজেন্সি উদ্বোধন করা হয়। একই সাথে অভয়নগর, এডিনগর, বোধজংনগর, সাব্রুম ও বিলোনীয়ায় কর্মজীবি মহিলাদের জন্য হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এই প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬১ কোটি টাকা। আর আগরতলা ডায়েটে শিশুদের হোস্টেলের জন্য খরচ হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা। এ বছরের শুরু থেকেই প্রায় ৮০০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে পোষণ অভিযানের আওতায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও আইসিডিএস সুপারভাইজারদের জন্য ১১,১৩০টি স্মার্টফোন বিতরণ কার্যক্রমও শুরু করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মাঠ পর্যায়ে রিয়েল টাইম তথ্য সংগ্রহের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য মোট ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ১২ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা।
প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা আরও জানান, রাজ্যে বর্তমানে কর্মজীবি মহিলাদের জন্য মাত্র ১টি হোস্টেল রয়েছে। রাজ্য সরকার আরও ১০টি হোস্টেল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই আমবাসা, ধর্মনগর ও কৈলাসহরে হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দিনে উদয়পুর ও কুমারঘাটে আরও হোস্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রত্যেক হোস্টেল নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। হোস্টেলগুলোতে জিম, বিনোদন কেন্দ্র, খেলাধুলার সুবিধা ও শিশুদের যত্ন ব্যবস্থা থাকবে।
এই বছরের মধ্যে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে প্রায় ৪ লক্ষ সুবিধাভোগীকে সামাজিক ভাতা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ওয়ানস্টপ সেন্টার কার্যক্রম চলছে, যেখানে এখন পর্যন্ত ২৬১ জন মহিলাকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনা আওতায় প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার গর্ভবতী মহিলা ও প্রসূতি মাকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। মাতৃপুষ্টি উপহার প্রকল্পে ৪৩,৬৬৪ জন গর্ভবতী মহিলাকে প্রায় ৮ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। পোষণ অভিযানে ৯,১৮৮ জন শিশুকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এপ্রিলে ২০২৩ থেকে এই পর্যন্ত ১,৪০২ জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও ১,৬১৫ জন অঙ্গনওয়াড়ি সহায়ক নিয়োগ করা হয়েছে।
সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী টিসু রায় বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নাগরিকের সেবা নিশ্চিত করতে সমাজকল্যাণ দপ্তর সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে রাজ্যে মোট ১০,২৭৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে ০-৬ বছরের ২ লক্ষ ৮২ হাজার শিশুর নাম নথিভুক্ত। ভবিষ্যতে আরও ৩৪৫টি কেন্দ্র চালু করা হবে। এছাড়া ১০০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ইংরেজি মাধ্যমে পরিচালনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুজোর আগে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য মোবাইল বিল বাবদ এককালীন ২ হাজার টাকা এবং শাড়ি বাবদ ১ হাজার টাকা প্রদান করা হবে বলেও তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তুলে ধরতে স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পাশাপাশি প্রতীকীভাবে সুবিধাভোগীদের হাতে পোষণ কিট ও মোবাইল ফোন তুলে দেওয়া হয়।
Leave feedback about this