2025-07-22
Ramnagar, Agartala,Tripura
দেশ রাজনৈতিক

‘আমরা মেরুদণ্ড বিক্রি করব না, গলা কেটে দিলেও জয় বাংলা বেরোবে: অভিষেক

জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- কলকাতার ধর্মতলায় শহিদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী ২১ জুলাইয়ের জনসভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক ঝাঁঝালো রাজনৈতিক বক্তব্যে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিলেন যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপিকে দিয়েই ‘জয় বাংলা’ বলানো হবে। এদিন তাঁর মাত্র সতেরো মিনিটের বক্তৃতাতেই জনসমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে, আর তাঁর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় আত্মবিশ্বাসী চ্যালেঞ্জ- ‘পদ্মফুল উপড়ে ফেলা হবে।’

বক্তব্যের শুরুতেই অভিষেক দাবি করেন, এই বছরের শহিদ দিবসের সভা আগের বছরের থেকেও বড় হয়েছে এবং তা প্রমাণ করে যে বাংলার মানুষ কোন পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, বিজেপির হাতে কেন্দ্রীয় সংস্থা, অর্থবল, প্রযুক্তি-সবকিছুই থাকলেও তারা বাংলার মাটিতে এক পাও জমি করতে পারেনি, কারণ এই বাংলা কারও দয়ায় চলে না। পেগাসাসের মাধ্যমে তাঁর ফোনে নজরদারি চালানো হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবুও তিনি দৃঢ় কণ্ঠে জানান, ‘আমরা মেরুদণ্ড বিক্রি করব না। গলা কেটে দিলেও জয় বাংলা বেরোবে।’

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বঙ্গ সফরের সময় ‘জয় শ্রীরাম’ বাদ দিয়ে ‘জয় মা দুর্গা’ ও ‘জয় মা কালী’ বলার প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক কটাক্ষ করেন, “আগে বলত জয় শ্রীরাম,

এখন বলছে জয় মা দুর্গা, জয় মা কালী। ২০২৬ সালের পর বিজেপিকেই জয় বাংলা বলাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটাই ১২ কোটি বাঙালির জয় হবে।’ ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে যেভাবে ‘খেলা হবে’ স্লোগান তুলে তৃণমূল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, এবার তার থেকেও জোরালো বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই রাজ্যে পদ্মফুলকে শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। বাংলার মাটি থেকে বিজেপিকে শূন্য করে ছাড়তে হবে।’

অসমে বাংলাভাষীদের এনআরসি নোটিশ পাঠানোর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘অসম সরকার বাংলার রাজবংশীয় মানুষদের বাংলাদেশি তকমা দিচ্ছে। বাংলায় কথা বললে বিজেপির গাত্রদাহ হয়। আমরা ১০০ বার বলেছি, এবার ৫০০ বার বলব-বাংলায় গর্ব করে কথা বলব, সংসদেও বাংলায় বলব। দেখি কার গায়ে জ্বালা ধরে!’ অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, ‘বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি বলার পরও কেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ করা হয়নি?’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না। বিজেপি চাইছে বাংলার মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাতে। আমরা ছাব্বিশের পর ওদেরই সেই ক্যাম্পে পাঠাব।’

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও এদিন কড়া প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। তিনি দাবি করেন, ‘ভোটার তালিকা থেকে প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, বিদেশে থাকা নামগুলো রাখা হচ্ছে।

ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’ ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে ১৩ জন শহিদের আত্মবলিদানকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আজ যদি ২০২৫ সালে নির্বাচন কমিশনের কারচুপি রুখতে কর্মীদের রাস্তায় নামতে হয়, প্রাণ দিতে হয়, তাহলেও আমরা পিছপা হব না। প্রয়োজনে দলনেত্রীর অনুমতি নিয়ে দিল্লিতে গিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’

তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করে অভিষেক বলেন, ‘বিজেপির কাছে অর্থবল, পেগাসাস, কেন্দ্রীয় সংস্থা, বিচারব্যবস্থার একাংশ সবই রয়েছে। কিন্তু বাংলায় একজনও তৃণমূলের মতো কর্মী নেই ওদের।’ তিনি দাবি করেন, তৃণমূলই প্রথম বিজেপিকে ‘বাংলাবিরোধী’ বলেছিল এবং এখন গোটা বাংলা সেই স্লোগানে গর্জে উঠছে। বিজেপির সংস্কৃতি বিরোধী চরিত্রের অভিযোগ তুলে

তিনি বলেন, ‘যে বিজেপি ঈশ্বরচন্দ্রের মূর্তি ভাঙে, রবীন্দ্রনাথকে অপমান করে, বাংলার সংস্কৃতিকে তাচ্ছিল্য করে-তাদের একটাই পরিচয়, তারা বাংলাবিরোধী। জনতার গর্জন, বিসর্জন-এটা বাংলাবিরোধীদের শুধুই স্লোগান নয়, এটা বিজেপির আসল চেহারা।’

বক্তব্যের একদম শেষে অভিষেক জনতাকে আহ্বান জানান, এমন ‘জয় বাংলা’র আওয়াজ তুলতে যাতে সেই গর্জন দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছায়। সভাস্থলে উপস্থিত জনতা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে মুখর করে তোলে গোটা ধর্মতলা চত্বর। অভিষেকের দৃপ্ত বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তৃণমূল কংগ্রেস এখন থেকেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কোমর বেঁধে নেমেছে। রাজ্যের স্বার্থ, বাঙালিয়ানা এবং সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নে দল যে আপসহীন থাকবে, সেই বার্তাই গর্জে উঠে পৌঁছে গেল গোটা বাংলায়।

    Leave feedback about this

    • Quality
    • Price
    • Service