janatar kalam Home রাজ্য ২৬শে জুন থেকে শুরু রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী খার্চি উৎসব ও মেলা
রাজ্য

২৬শে জুন থেকে শুরু রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী খার্চি উৎসব ও মেলা

জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :-
প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হচ্ছে রাজ্যের জাতি উপজাতি অংশের মানুষের ঐতিহ্যবাহী খার্চি উৎসব ও মেলা। উৎসবস্থল আগরতলার চতুর্দশ দেবতা মন্দিরে এখন প্রস্তুতির কার্যক্রম চলছে। চিরাচরিত ঐতিহ্যমেনে আগামী ২৬ শে জুন থেকে শুরু হবে এই উৎসব। আগরতলা শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খয়েরপুরের পুরানো হাভেলিতে শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী এই খার্চি উৎসব ও মেলা। মেলা কে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর করে তোলার জন্য চলছে শেষ প্রস্তুতির কাজ। মন্দির প্রাঙ্গনের সমস্ত মন্দির নতুন সাজে সাজিয়ে তোলার কাজ চলছে এখন। শেষ তুলির টানে মন্দির প্রাঙ্গণ দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠছে। পূজা ও মেলা কে সর্বাঙ্গীন সফল করে তুলতে ইতিমধ্যেই স্থানীয় বিধায়ক রতন চক্রবর্তীকে চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয়েছে প্রশাসনিকভাবে প্রস্তুতি কমিটি। এবছর মেলা ও উৎসব আনন্দ মুখর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রস্তুতি কমিটি ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।রাজন্য আমলে শুরু হওয়া এই মেলা উত্তরপূর্ব ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন মেলা। প্রতি বছরই মেলায় লোক সমাগম বাড়ছে। রাজ্যের পাশাপাশি আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় জড়ো হয় মানুষ।এ বছর এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আগরতলা শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরের এই পুরাতন আগরতলা এক সময় এখানকার রাজধানী ছিল, যার অপর নাম পুরাতন হাভেলী। সেখানে স্থাপন করা হয়েছিল তাদের ১৪ জন কুল দেবতাকে। তাই এর নাম চতুর্দশ দেবতা বাড়ি। পরবর্তী রাজারা রাজধানী স্থানান্তর করে বর্তমান আগরতলায় নিয়ে এলেও তাদের কুলদেবতারা সেখানে রয়ে যায়।এই ১৪ জন দেবতার মধ্যে সারাবছর মাত্র তিনজন দেবতার পূজা হয়। বাকিদের মন্দিরে সিন্ধুকের ভেতরে রাখা হয়। শুধুমাত্র খার্চি উৎসবের সাতদিন মোট ১৪ জন দেবতার পূজা হয় ও পূণ্যার্থীদের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে এই মন্দিরের পূজা থেকে শুরু করে উৎসবের যাবতীয় খরচ আসে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে।এর পেছনেও একটি সুন্দর ইতিহাস রয়েছে। ভারতের স্বাধীনতার সময় ত্রিপুরা ছিল রাজন্য শাসিত স্বাধীন দেশীয় রাজ্য। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ত্রিপুরা ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে যোগ দেয়।রাজতন্ত্রের অবসান ও গণতন্ত্রের সূচনায় রাজ্যের মানুষের দায়িত্ব চলে যায় ভারত সরকারের ওপর। তখন একটি প্রশ্ন সামনে আসে জনগণের দায়িত্ব তো নিয়ে নিলো দেশের সরকার। কিন্তু রাজকোষ থেকে যে সব মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে তার দায়িত্ব কে নেবে? তখন সিদ্ধান্ত হয় যে রাজকোষ থেকে পরিচালিত সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেবে ত্রিপুরা সরকার। সেই থেকে এখনও এই রীতি চলে আসছে। মন্দিরের নিত্য পূজা থেকে উৎসবের যাবতীয় খরচ বহন করে রাজ্য সরকার।সপ্তাহব্যাপী খার্চি পূজা ও উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। মন্দির প্রাঙ্গণের সমস্ত মন্দিরগুলি নতুন সাজে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে খার্চি পূজা ও মেলাকে ঘিরে হাভেলি চত্বরে চলছে এখন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ। অপরদিকে পূর্নার্থীরাও যেন প্রতীক্ষায় রয়েছেন পূজা ও মেলায় নিজেদের উপস্থিতির জানান দিতে। এদিকে বৃহস্পতিবার খার্চি পূজা ও মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখলেন মেলা কমিটির চেয়ারম্যান বিধায়ক রতন চক্রবর্তী। এদিন মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে তিনি জানান এবছর মেলার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা। উপস্থিত থাকবেন খাদ্যমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী মেয়র দীপক মজুমদার সহ আরো বিশিষ্টজনেরা। মেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে থাকবেন সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক সহ আরো অনেকে। মেলার একদিন মুক্ত মঞ্চে প্রথমবারের মত দিবাঙ্গদের সম্মান প্রদর্শন ও কৃতি সম্বর্ধনা প্রদান করা হবে বলেও জানান শ্রী চক্রবর্তী।

Exit mobile version