Site icon janatar kalam

রাজ্যের ২ হাজার হেক্টর জমিতে মিলেট চাষের উদ্যোগ

জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :-
রাজ্যের ২ হাজার হেক্টর জমিতে মিলেট চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছোট দানাদার খাদ্যশস্য মিলেটের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে কৃষি ও উদ্যান দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্যে রূপায়িত কৃষক কল্যাণকর বিভিন্ন কর্মসূচির অগ্রগতি ও বর্তমান অবস্থার তথ্য তুলে ধরে একথা জানান কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়। কৃষি সচিব জানান, রাজ্যের মোট ভৌগোলিক আয়তনের ২৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২ লক্ষ ৫৫ হাজার হেক্টর হচ্ছে কৃষিযোগ্য জমি। এবছর আমন খন্দে ধানচাষের জন্য প্রায় ১ লক্ষ ৪৮ হাজার হেক্টর এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এরজন্য কৃষকদের বিভিন্ন উৎপাদন সামগ্রী দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমন ধানের বীজতলা তৈরি করার উদ্যোগ নিচ্ছে কৃষকরা। তিনি জানান, এ বছর আমন ধানের উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সুসংহত পদ্ধতিতে ধানচাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দপ্তর থেকে ধানচাষীদের উৎসাহ দিতে বীজ, সার সহ বিভিন্ন সহায়তা কৃষকদের দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ৬১৮ মেট্রিকটন আমন ধানের বীজ কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ৩৪ হাজার ৩৪৪ মেট্রিকটন সার উপলব্ধ রয়েছে বলে কৃষি সচিব জানান। সচিব জানান, কৃষি হচ্ছে রাজ্যের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। রাজ্যের মোট জিএসডিপি-র ৪৩ শতাংশ প্রাইমারি সেক্টর থেকে আসে। এরমধ্যে ৩৬ শতাংশ আসে কৃষি ও কৃষি সহযোগী ক্ষেত্রগুলি থেকে। সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি সচিব আরও জানান, রাজ্যে বর্তমানে ৩২টি কৃষি মহকুমায় কৃষকবন্ধু কেন্দ্র চালু রয়েছে। কৃষকবন্ধু কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন পরামর্শ কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, সরকার কৃষকদের জমি এবং উৎপাদিত ফসল সম্বন্ধীয় বিস্তৃত বিবরণ সংগ্রহ করে ফার্মার ডাটাবেস তৈরি করার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এই ফার্মার ডাটাবেসে কৃষকদের বিস্তৃত বিবরণ নথিভুক্ত করার জন্য রাজ্যের সমস্ত উপযুক্ত কৃষকদের প্রতি কৃষি সচিব আহ্বান জানিয়েছেন। সচিব জানান, এই ফার্মার ডাটাবেসটির কাজ সম্পন্ন হলে কৃষকদের সুবিধার্থে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারণ করা যাবে। এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৪২২ জন কৃষক তাদের বিস্তৃত বিবরণ নথিভুক্ত করেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি সচিব উদ্যান পালন দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলিও বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, চলতি অর্থবর্ষে দপ্তর ১ হাজার ৩৩০ হেক্টর এলাকায় ফল চাষ, ২,৫০০ হেক্টর এলাকায় সব্জি চাষ, ৪০০ হেক্টর এলাকায় মশলার চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুরোনো ফল বাগানের সংস্কার করা হবে ৫৫২ হেক্টর। ৩ হাজার হেক্টর জমিতে কেমিক্যাল স্টেগারিং-এর মাধ্যমে অসময়ের আনারস চাষ করা, ৩০০টি ভার্মি কমপোস্ট ইউনিট তৈরি করা, ২৫০টি জলাধার নির্মাণ, সরকারিভাবে ১ লক্ষ ২০ হাজার মাশরুম বীজ উৎপাদন, ৫৩০ হেক্টর এলাকায় পাম অয়েল চাষ করার জন্য মোট ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। নতুন ২টি নার্সারিতে ২ লক্ষ চারা লাগানো হবে বলে সচিব জানান। কৃষি সচিব আরও জানান, কৃষি কাজে দক্ষতা বাড়াতে মোট ৫,৩৬৯ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ধলাই জেলার আমবাসাতে ১টি ইন্টিগ্রেটেড প্যাক হাউস স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৪৪টি সরকারি বাগানে নর্থ ইস্ট কাউন্সিলের সহায়তায় সৌরশক্তিচালিত জল উত্তোলক মেশিন বসানো হবে বলে কৃষি সচিব জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় ২০২৩-২৪ সালে মোট ১ লক্ষ কৃষক পরিবারের মধ্যে ১৫ লক্ষ ফলের চারা ও ১ লক্ষ সব্জি বীজের প্যাকেট বিতরণের তথ্য কৃষি সচিব জানিয়েছেন। চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যের নিজস্ব পরিকল্পনায় শহর এলাকায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মোট ৫,০০০ পরিবারকে সব্জি, ফল ও ফুলের চারা বিতরণ করা হবে। কুল, পেয়ারা, লিচু, জাম ইত্যাদি ফলের উৎপাদন বাড়াতে ২০০ হেক্টর এলাকায় বাগান তৈরি করা হবে। এছাড়াও রুদ্রসাগরের চারিদিকের খালি জায়গায় নারিকেল, সুপারি, লেবু, আম, কলা ইত্যাদি ফলের গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান কৃষি সচিব। সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষি কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শরদিন্দু দাস এবং উদ্যানপালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা ড. ফণীভূষণ জমাতিয়া উপস্থিত ছিলেন।

Exit mobile version