জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- প্রাইভেট টিউশন করতে গিয়ে সরকারি শিক্ষকদের রোশানলে মানহানির শিকার হয়েছিল প্রাইভেট টিউটর সাগর রায় | পরে থানা পুলিশের তদন্তে পর্দা ফাঁস হয় সরকারি শিক্ষকদের গভীর চক্রান্তের | বাড়তে থাকে সাগরের জনপ্রিয়তা |ছোটবেলা থেকেই অনেক অভাব অনটন দারিদ্রতার মধ্য দিয়েই বড় হয়ে উঠেছে সোনামুড়ার ঠাকুরমুড়া নজরুল পল্লীর সাগর রায় | বাবা মা দুজনেই উচ্চশিক্ষিত হলেও তৎকালীন সময়ে সরকারি চাকরি পায়নি | তাই টিউশন করেই সাগরকে বড় করেছিল | মেধাবী সাগরও বাবা-মায়ের এই দৈন্যদশা দেখে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে ওঠে | সাগর সোনামুড়ার কবি নজরুল মহাবিদ্যালয় থেকে ইংলিশে অনার্স করেছে | তারপর সরকারি লোনে বিএড কমপ্লিট করে | দুর্ভাগ্য সাগরের কপালেও জুটেনি সরকারি চাকরি | একপ্রকার বাধ্য হয়েই বাবা মায়ের মত প্রাইভেট টিউশনকেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে | তবে অভাবের সংসারে ক্লাস ইলেভেন থেকেই সাগর টিউশনি শুরু করেছিল | বর্তমানে সোনামুড়া মহকুমার একজন স্বনামধন্য প্রাইভেট টিউটর হিসেবে পরিচিত সাগর রায় | সরকারি নির্দেশে যখন সরকারি স্কুলে চাকরি করা শিক্ষকরা টিউশন করতে পারছেন না | তখন সোনামুড়ায় বেশ কয়েকজন সরকারি শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনে ব্যস্ত ছিলেন | সাগর ওই সমস্ত সরকারি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে | সাগরের তেজী আন্দোলন চোখে পড়েছিল তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী রতনলাল নাথের | মন্ত্রী রতন নাথ সাগরের এই আন্দোলন দেখে তাকে ডেকে পাঠিয়েছিল মন্ত্রীর কোয়াটারে | বাহবা জানিয়েছিল সাগরকে | রতন নাথ সোনামুড়ায় ছুটে গিয়ে সমস্ত সরকারি শিক্ষকদের টিউশন বন্ধের নির্দেশ জারি করে | এদিকে সরকারি শিক্ষকরা এক কাট্টা হয়ে সাগরের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হয় | সেই চক্রান্ত মোতাবেক একদিন সোনামুড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সংলগ্ন সাগরের টিউশন সেন্টারে সরকারি শিক্ষকদের মদতপুষ্ট বেশ কয়েকজন ছেলে গিয়ে অভিযোগ তুলেছিল সাগরের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির | ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছিল পুলিশ | পুলিশি তদন্তক্রমে নির্দোষ প্রমাণিত হয় সবার প্রিয় শিক্ষক সাগর রায় | যে মেয়েটির শ্লীলতাহানির অভিযোগ করা হয়েছিল, সে মেয়ে ও তার বাবা থানায় গিয়ে স্টেটমেন্ট দিয়েছে সাগরের পক্ষে | পরবর্তীকালে যে সমস্ত ছেলেরা এই ঘটনায় লিপ্ত হয়েছিল তারাও সাগরের কাছে এসে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে যায় | বলেছে সরকারি শিক্ষকদের প্রলোভনে পা দিয়ে এই ধরনের জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়েছিল তারা | শেষ পর্যন্ত নির্দোষ প্রমাণিত হয় সাগর | কিন্তু কথায় বলেনা? যে কোন ঘটনা একবার রটে গেলে, মানুষের মনে তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কিংবা প্রশ্ন থেকেই যায় | আর এই সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও প্রশ্ন দূর করার জন্যই সাগর জোর কদমে শুরু করে দিয়েছে তার প্রাইভেট টিউশন | বর্তমানে সোনামুড়ার ঠাকুর মুড়ায় এবং সোনামুড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সংলগ্ন স্থানে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্ন সাগরের টিউশন সেন্টারগুলি চলছে রমরমিয়ে | উপচে পড়া ভিড় ছাত্র-ছাত্রীদের | তবু শিক্ষিত যুবক সাগর কেমন যেন একটা হীনমন্যতায় ভুগছে | সরকারি শিক্ষকদের রোষানলে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও মানহানির শিকার হয়েছিল শিক্ষিত বেকার যুবক | এদিকে সাগরের আন্দোলনের সফলতা ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে চলে এসেছে | সোনামুড়ার প্রত্যন্ত এলাকার এক শিক্ষিত যুবকের আন্দোলনের রেশ পড়েছে রাজ্য প্রশাসনে | সম্প্রতি রাজ্য সরকার সমস্ত স্কুল কলেজের সরকারি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রাইভেট টিউশনের উপর ফতুয়া জারি করেছে | শুধু ফতোয়া জারি নয় এ যাত্রায় কারা কারা সরকারি শিক্ষকতা করা সত্ত্বেও প্রাইভেট টিউশন করছে তাদের নামের লিস্ট পর্যন্ত বের করতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার | ফলে আখেরে লাভবান হবে এ রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরাই | তবে এক সময় বেকার যুবক সাগরের নেতৃত্বে সরকারি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল সেটার বাস্তব ফল বর্তমানে ভোগ করবে সারা রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা | সরকার সরকারি শিক্ষকদের টিউশন বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে আরও কঠোর | যাতে করে সাগর রায়ের মতো যাতে আর কোন বেকার যুবককে সরকারি চাকরিরত শিক্ষকদের জঘন্য চক্রান্তের ফাঁদে না পড়তে হয় | সরকারি শিক্ষকরাও এ যাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে | নতুবা বেকার সাগররা ফের আন্দোলন শুরু করলে সরকারি নিয়মানুসারে চাকরিও খোয়াতে পারে সরকারি শিক্ষকরা | সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও নির্দেশিকা হাতে পেয়ে বর্তমানে অনেক সরকারি শিক্ষক গোপনে প্রাইভেট টিউশনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলেও বিভিন্ন জেলা মহকুমা থেকে খবর আসছে | এক্ষেত্রে কলেজ, বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানদের বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে | প্রতিটি স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন শিক্ষকদের ফতোয়া জারি করা হবে তখনই একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হবে তাদের দ্বারা প্রাইভেট টিউশন বন্ধ করা | প্রসঙ্গত সোনামুড়ার সাগর রায় যখন তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী রতনলাল নাথের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তখন এক সপ্তাহের মধ্যে রতনলাল নাথ সোনামুড়া এসে চারজন শিক্ষককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন | শাস্তি হিসেবে চারজনকে বদলি করে দিয়েছিলেন প্রত্যন্ত এলাকায় | রতনলাল নাথ তখন ওই যুবকদের নির্দেশ দিয়েছিল সোনামুড়ার বিভিন্ন এলাকায় যাতে তারা দুস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা পয়সায় টিউশনের ব্যবস্থা করে | তখন শিক্ষিত যুবক সাগর রায় মন্ত্রীর কথা শিরোধার্য করে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিনা পয়সায় দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পড়ানো শুরু করেছে | বর্তমানে ও তার এই প্রয়াস জারি রেখেছে | গোটা মহকুমা এখন সাগরের নাম ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অভিভাবকদের মুখে মুখে | আগামী দিনে দুস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্যে আরও কাজ করতে চায় বলে জানিয়েছে বেকার শিক্ষিত যুবক সাগর রায় |