জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :-
সংবিধান প্রণেতা ড. আম্বেদকর সারা জীবন দেশের দলিত, অস্পৃশ্য, গরীব ও অসহায়দের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। বর্তমান প্রজন্মকে তাঁর মত ও পথ অনুসরণ করতে হবে। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং প্রেক্ষাগৃহে ড. বি আর আম্বেদকরের ১৩৩তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান ও আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে তপশিলি জাতি কল্যাণমন্ত্রী সুধাংশু দাস একথা বলেন। উল্লেখ্য, আলোচনাচক্রের বিষয় ছিল ‘ড. বি আর আম্বেদকরের রাষ্ট্রভাবনা’। আলোচনাচক্রে তপশিলি জাতি কল্যাণমন্ত্রী ছাত্র সমাজকে ড. আম্বেদকরের আদর্শ, মত ও পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা মহৎ ব্যক্তিদের জন্ম নয়, তাঁদের কর্মের জন্য স্মরণ করি। ড. আম্বেদকর শুধু সংবিধান প্রণেতা নন, তিনি ছিলেন একজন পন্ডিত, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ। আলোচনাচক্রে তপশিলি জাতি কল্যাণমন্ত্রী আরও বলেন, ড. আম্বেদকর দেশকে এক নতুন রূপে গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি বলতেন, শিক্ষা হচ্ছে অন্ধকার থেকে আলোয় আসার একমাত্র পথ। শিক্ষার মূল কথা হলো সৎ কথা বলা, সৎ চিন্তা ও সদভাবনা। তাঁর এই চিন্তাধারা বর্তমান প্রজন্মকে গ্রহণ করতে হবে। তিনি উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যারা ইতিহাস ভুলে যায় তারা ইতিহাস রচনা করতে পারে না। এই দেশের বরেণ্য মনীষীদের জীবন অধ্যয়ন করতে হবে। তবেই এই অনুষ্ঠান সার্থক হয়ে উঠবে। তিনি সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমাদের মৌলিক দায়িত্বও যথাযথভাবে পালন করতে হবে। তবেই সমাজ, রাজ্য ও দেশ এগিয়ে যাবে। সম্মানিত অতিথির ভাষণে বিধায়ক অন্তরা সরকার দেব বলেন, ড. আম্বেদকর সারা জীবন মানবজাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তাই ড. আম্বেদকরের চিন্তাধারায় বর্তমান প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে হবে। সম্মানিত অতিথির ভাষণে আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার বলেন, ড. বি আর আম্বেদকর তাঁর দেশপ্রেমের জন্য ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার তাঁর জীবন ও আদর্শ আরও বেশি করে মূল্যায়ন করার জন্য দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আলোচনাচক্রে বিশেষ বক্তা হিসেবে ড. বি আর আম্বেদকরের রাষ্ট্রভাবনা নিয়ে আলোকপাত করেন তেলিয়ামুড়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপিকা মৌসুমী বাসফোর ও রামঠাকুর মহাবিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক শ্যামসুন্দর সরকার। সহকারি অধ্যাপিকা শ্রীমতি বাসফোর ড. আম্বেদকরের তিনমন্ত্র ‘শিক্ষিত হও, সংগঠিত হও এবং সংঘর্ষ করো’ বাস্তবায়নে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সহকারি অধ্যাপক শ্যামসুন্দর সরকার দেশ গঠনে মহাত্মা গান্ধী ও ড. আম্বেদকরের ভূমিকা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। আলোচনাচক্রে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পশ্চিম জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক রজত পন্থ। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে অতিথিগণ ড. আম্বেদকরের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিধায়ক মিনা রাণী সরকার, রাজ্য বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ রেবতী মোহন দাস, আগরতলা পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র মণিকা দাস দত্ত, তপশিলি জাতি কল্যাণ দপ্তরের বিশেষ সচিব অভিষেক চন্দ্রা, ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা নির্মল অধিকারী, বিশিষ্ট সমাজসেবী টুটন দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ড. বি আর আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘সামাজিক আন্দোলনে ড. বি আর আম্বেদকরের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় ১ম, ২য় এবং যুগ্মভাবে ৩য় স্থানাধিকারী যথাক্রমে আগরতলা কুঞ্জবনের সিদ্ধার্থ সরকার, রামঠাকুর মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী সংগীতা ত্রিপুরা, উদয়পুর ছনবনের বিশাল ভৌমিক এবং প্রতাপগড়ের সুমন বণিককে পুরস্কৃত করা হয়। তাদের দেওয়া হয় ২৫০০ টাকা, ১৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার চেক, শংসাপত্র ও ড. আম্বেদকরের বই। তাছাড়াও ১৪ বছরের অনূর্ধ্ব এবং ১৭ বছরের অনূর্ধ্ব যোগা প্রতিযোগিতায় বালক বিভাগে ১ম, ২য় এবং ৩য় এবং বালিকা বিভাগে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থানাধিকারীকে, ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন ভগৎ সিং প্লে সেন্টারকে, রানার্স আইজিএম হরিজন কলোনীকে, ভলিবলে চ্যাম্পিয়ন অরবিন্দ সংঘ, রানার্স বেলাবর ভলিবল কোচিং সেন্টার, কাবাড়ি মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন উমাকান্ত একাডেমি কোচিং সেন্টার, রানার্স ভোলাগিরি কোচিং সেন্টার এবং মিউজিক্যালের মহিলা বিভাগে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থানাধিকারীকে অতিথিগণ ট্রফি দিয়ে পুরস্কৃত করেন। এছাড়া পশ্চিম জেলাভিত্তিক বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর বিজয়ী ৫ জন ছাত্রছাত্রীকে, চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীর বিজয়ী ৫ জন ছাত্রছাত্রীকে এবং সপ্তম থেকে নবম শ্রেণীর বিজয়ী ৫ জন ছাত্রছাত্রীকে মোমেন্টো ও শংসাপত্র দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন সারেগামা মিউজিক একাডেমির শিল্পীগণ। সভাপতিত্ব করেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি হরিদুলাল আচার্য।