Site icon janatar kalam

ব্যাংক বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে ত্রিপুরা ব্যাংক এমপ্লয়ীজ ফেডারেশন ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন

জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধিঃ- ত্রিপুরা ব্যাংক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন আগামী ২৮-২৯ মার্চ ২০২২ ব্যাঙ্ক ধর্মঘট সফল করার আহ্বানে ত্রিপুরা স্টুডেন্ট হেলথ হোমে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এদিনের সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জহর দে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন গত ১১ ই নভেম্বর , ২০২১ ইং নয়া দিল্লীর যন্তর মন্তরে অনুষ্ঠিত দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও শতাধিক স্বতন্ত্র ফেডারেশন / অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় শ্রমিক সম্মেলন থেকে কেন্দ্রের শ্রমিক বিরোধী তথা দেশবিরোধী স্বৈরাচারী পদক্ষেপের প্রতিবাদে আগামী ২৮-২৯ মার্চ ২০২২ ইং দুদিন ব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে । জাতীয় স্বার্থে ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা এই ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন । ভারতের অর্থ ব্যবস্থার কান্ডারী ভারতীয় ব্যাঙ্ক শিল্পকে বাঁচানোর সংগ্রামে সাধারণ মানুষ আজ রাস্তায় । ভারতের ব্যাঙ্কিং শিল্পের ইতিহাস ২৫০ বছরের । ব্যাঙ্ক শিল্পকে বাঁচানোর জন্য মানুষের লড়াই থেমে থাকেনি । গণআন্দোলনের চাপে তৎকালীন সরকারকে ১৯৬৯ ইং সালের ১৯ শে জুলাই ১৪ টি বেসরকারি ব্যাঙ্ককে জাতীয়করণ করা হয় । ১৯৫৫ সালে ইম্পিরিয়াল ব্যাঙ্ককে জাতীয়করণ করে সূচনা হয় স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার । ১৯৫১ সালে পূর্বতন রাজপরিবারের মালিকানাধীন ৭ টি বেসরকারি ব্যাঙ্ককে জাতীয়করণের মধ্যে দিয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের অ্যাসোসিয়েট ব্যাঙ্ক সৃষ্টি করা হয় । ১৯৭৬ সালে আর , আর , বি আইন পাশ করে সৃষ্টি হয় গ্রামীন ব্যাঙ্ক । ১৯৬৬ সালে সমবায় আইনের মাধ্যমে সমবায় ব্যাঙ্ক কৃষকের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় । রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ব্যাঙ্কিং শিল্প দ্রুত প্রসার লাভ করে । জনগণের গচ্ছিত আমানতের টাকায় দেশে কৃষি বিপ্লব , দুগ্ধ বিপ্লব , শিল্প বিপ্লব সংগঠিত করা হয় । রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের টাকায় আত্ম নির্ভর অর্থনীতির সূচনা হয় । ব্যাঙ্কে ৭ লক্ষাধিক বেকারের চাকুরি হয় । কৃষি , শিল্প ও বেকারদের প্রভুত পরিমান উন্নতি পরিলক্ষিত হয় । রাস্তা ঘাট , স্কুল কলেজ , হাসপাতাল , যোগাযোগ ব্যবস্থা এই যে উন্নতি তা সম্ভব হয়েছে ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রীয়করণের ফলে । ১৯৬৯ সালের আগে যেখানে ব্যাঙ্কের মোট শাখা ছিল ৮০০০ আজ তা পৌঁছেছে ১১৮০০০ এ । ব্যাঙ্কের মোট আমানত ছিল মাত্র ৫০০০ কোটি টাকা । এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি । মোট ঋণ দান ৩৫০০ কোটি টাকা থেকে বর্তমানে প্রায় ১১০ লক্ষ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে । ১৯৬৯ সালের পর বহু বেসরকারি ব্যাঙ্ক লাটে উঠেছে । কিন্তু গ্রাহকরা সর্বস্বান্ত হননি । কোনও না কোন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ঐগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে । রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যবস্থায় ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলো থাকার কারণেই ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার আঁচ আমাদের দেশে লাগেনি । এতসব অভিজ্ঞতা থাকা সত্বেও আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৬৯ সালের উল্টো পথে চলছে । ২০১৪ সালের মে মাসে এন ডি এ জোট কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে । তখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা ছিল ২৭ টি । ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এক ফতোয়ার মধ্য দিয়ে ব্যাঙ্কের সংখ্যা কমিয়ে করা হয়েছে ১২ টি । ১০ টি ব্যাঙ্ককে চারটি ব্যাঙ্কে পরিণত করা হয়েছে । এটা হচ্ছে বেসরকারিকরণের প্রথম ধাপ । খবরে প্রকাশ সরকার এরই মধ্যে দুটো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে বেঁচে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে । অজুহাত একটাই “ ব্যাঙ্কের অবস্থা খারাপ ” । অথচ গত অর্থ বছরেও ব্যাঙ্কগুলোর মোট বাণিজ্যিক লাভ হয়েছে প্রায় ১৯৭০০০ কোটি টাকা । এই লাভ সরকারের কোন কাজে আসছে না । কারণ বেশিরভাগ লাভটাই চলে যাচ্ছে ঋণ খেলাপিদের রক্ষা করার জন্য । লক্ষলক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরৎ দিচ্ছে না দেশের নামি দামি কর্পোরেটরা । আবার অন্যদিকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ঋণ মুকুব হয়ে যাচ্ছে বৃহৎ কর্পোরেটদের । দেউলিয়া আইনের মধ্য দিয়েও তারা ঋণের ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন । অথচ ক্ষুদ্র , মাঝারি কৃষক ও শিল্পের মালিকরা ঋণ মুকুব পাচ্ছেন না বললেই চলে । ব্যাঙ্কের টাকা লুট করে দেশের বাইরে চলে গেছে সরকার আশ্রিত ব্যাক্তিরা । তারাই আবার হতে চলছে ব্যাঙ্কের মালিক । লুটে নিয়ে যাওয়া ব্যাঙ্কের টাকা দিয়েই তারা আবার ব্যাঙ্ক কিনবে । সরকারের ব্যাঙ্ক বেসরকারীকরণ নীতি মূলত : সেই লক্ষ্যে । সরকার গ্রাহকদের উপর বিভিন্ন চার্জ বাড়িয়ে এবং সুদের হার কমিয়ে অর্থ আদায় করছেন । অন্যদিকে সেই টাকাই বিভিন্নভাবে কর্পোরেটদের হাতে তুলেদিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার । উদ্দেশ্য একটাই । ব্যাঙ্কগুলিকে দুর্বল আখ্যা দিয়ে বেসরকারিকরণ করা । অর্থ্যা ১৯৬৯ সালের আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাতে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা না থাকে । এর বিরুদ্ধে ২৮-২৯ মার্চ এই ধর্মঘট বলে জানান তিনি।

Exit mobile version