জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :-
মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অন্যান্য দিনের মতো আজও মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা জনগণের নানাবিধ সমস্যা, অভাব ও অভিযোগ শুনেন। মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে আসা প্রত্যেককেই পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যার সুরাহা করে দেওয়ার পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী জমি সহ আইনি সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তিরও ব্যবস্থা করে দেন। আজ মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে কৃষ্ণনগর কদমতলির বাসিন্দা পাপড়ি সাহা তার ছেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তার ছেলে জন্মের পর থেকে বিরল রোগ প্রাডার উইলি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। এই জিনগত রোগ তার ছেলের স্থূলতা ও বুদ্ধির বিকাশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ছেলে ২০১৯ সাল থেকে নয়াদিল্লিস্থিত এইমসে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বর্তমানে তার ছেলের হরমোন থেরাপির জন্য ৯ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার আর্জি জানান। মুখ্যমন্ত্রী পাপড়ি সাহার সমস্যার কথা শুনে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে কিভাবে সাহায্য করা যেতে পারে তা নিয়ে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়ের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রতাপগড়ের সুমন পোদ্দার গত দুই বছর যাবৎ কিডনি রোগে ভুগছেন। রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণে তিনি বর্তমানে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ফলে অর্থের অভাবে সে তার চিকিৎসাও সঠিকভাবে করাতে পারছেন না। মুখ্যমন্ত্রী সুমন পোদ্দারের চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব ড. দেবাশিস বসুকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এয়ারপোর্ট থানাধীন দুর্গাবাড়ির লিটন দেব সরকারি সহায়তার আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। লিটন দেবের বাবাকে সন্ত্রাসবাদীরা ১৯৯২ সালের ২৭ অক্টোবর অপহরণ করে নিয়ে যায়। পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে দীর্ঘ তল্লাসীর পরও তার কোনও হদিশ না পাওয়ার ফলে প্রশাসন থেকে ২০০৯ সালে তার ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। কিন্তু এই ঘটনায় লিটন দেবের পরিবার কোনও ধরণের সরকারি সহায়তা পাননি। মুখ্যমন্ত্রী লিটন দেবের বাবার অপহরণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে সরকারি নিয়ম মেনে কিভাবে সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তীকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন। রামনগরের দুলাল চক্রবর্তীর স্ত্রী আল্পনা ভট্টাচার্য্য ক্যান্সার রোগে ভুগছেন। বর্তমানে তার স্ত্রী টাটা ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্ত্রীর চিকিৎসায় এখন অর্থের অভাব দেখা দিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আজ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এসেছিলেন প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আর্জি নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী তার স্ত্রীর চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে সঙ্গে সঙ্গেই অটল বিহারী বাজপেয়ী রিজিওন্যাল ক্যান্সার সেন্টারের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. এস দেববর্মাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ও চিকিৎসকদের উপর আস্থা রাখার জন্যও দুলাল চক্রবর্তীর প্রতি আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।
কুঞ্জবনের আবীর দাস একটি স্করপিও গাড়ির ধাক্কায় আহত হন এবং তাঁর ডান হাত ভেঙ্গে যায়। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হওয়ায় তার পরিবার বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। দুর্ঘটনার পর তিনি ঐ গাড়ির ড্রাইভারের বিরুদ্ধে এয়ারপোর্ট থানায় একটি মামলাও করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্তও সে কোনও ন্যায়বিচার পাননি। মুখ্যমন্ত্রী তার সমস্যার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেন এবং আবীর দাসকে ন্যায় পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন। মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে এছাড়াও যারা এসেছিলেন তাদের সমস্যা নিরসনে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। আজ মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, স্বাস্থ্য সচিব ড. দেবাশিস বসু, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডা. শঙ্কর চক্রবর্তী, ক্যান্সার হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডা. এস দেববর্মা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।