Site icon janatar kalam

রক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ উদ্বোধন করলেন মহিলা অফিসারদের আন্তর্জাতিক সেলিং অভিযানের সূচনা

জনতার কলম ওয়েবডেস্ক:-  আজ বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া থেকে ভার্চুয়াল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের রক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সমুদ্র প্রদক্ষিণ’ অভিযান শুরু করেছেন। এটি বিশেষত্বপূর্ণ একটি অভিযান, কারণ এই বিশ্বব্যাপী প্রথম নৌযান পরিক্রমায় শুধুমাত্র থলসেনা, নৌসেনা ও বায়ুসেনার মহিলা অফিসাররাই অংশ নিচ্ছেন। রক্ষামন্ত্রী জানান, এই অভিযানের মধ্যে নিহিত রয়েছে নারীর শক্তি, তিন সেনাবাহিনীর ঐক্য, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এবং ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবনা। তিনি এটিকে শুধুমাত্র একটি যাত্রা নয়, বরং এক অনুশাসন ও ইচ্ছাশক্তির আধ্যাত্মিক সাধনা হিসেবে বর্ণনা করেন।

এই মহাযাত্রাটি প্রায় ৯ মাস ব্যাপী চলবে। যেখানে ১০ জন নারী অফিসার ভারতীয় সেনাবাহিনী নির্মিত ৫০ ফুট দীর্ঘ ইনডিয়ান আর্মি সেলিং ভেসেল (IASV) ‘ত্রিবেণী’-তে প্রায় ২৬,০০০ নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করবেন। দলটি পূর্বমার্গ ধরে যাত্রা শুরু করবে এবং ভূমধ্যরেখা দুইবার পেরিয়ে পৃথিবীর তিনটি প্রধান মিসিং কেপ — লিউভিন, হর্ন এবং গুড হোপ — পেরিয়ে দক্ষিণ মহাসাগর ও ড্রেক প্যাসেজের মত চ্যালেঞ্জিং জলধারা অতিক্রম করবে। পাশাপাশি তারা চারটি আন্তর্জাতিক বন্দর — ফ্রেমেন্টেল (অস্ট্রেলিয়া), লিটলটন (নিউজিল্যান্ড), পোর্ট স্ট্যানলি (ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ) এবং কেপটাউন (দক্ষিণ আফ্রিকা)-এও থামবে। এই অভিযান শেষ করে আগামী মে, ২০২৬ সালে মুম্বাই ফিরে আসবে।

রক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিশেষভাবে IASV ত্রিবেণীকে আত্মনির্ভর ভারতের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এটি ভারতের স্বদেশী প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে আত্মবিশ্বাসের পরিচায়ক। তিনি বলেন, “প্রতিটি নটিক্যাল মাইল আমাদের দেশের কৌশলগত স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতার দিকে এক দৃঢ় পদক্ষেপ।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই অভিযান ভারতের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরবে।

দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল অঞ্জনা বরুদকর এবং প্রধান সহায়ক হিসেবে স্কোয়াড্রন লিডার শ্রদ্ধা পি. রাজু দায়িত্বে রয়েছেন। দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন — মেজর করমজিৎ কৌর, মেজর ওমিতা দালভি, ক্যাপ্টেন প্রাজক্তা পি. নিকম, ক্যাপ্টেন দৌলি বুটোলা, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার প্রিয়াঙ্কা গুসাঁই, উইং কমান্ডার বিভা সিং, স্কোয়াড্রন লিডার অরুদি জয়রাম ও স্কোয়াড্রন লিডার বৈশালী ভান্ডারি।

গত তিন বছর ধরে এই দল কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বহু অফশোর অভিযান এবং চলতি বছরে মুম্বাই থেকে সেশেল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রা, যা তাদের এই বিশ্বজয়ী অভিযানের জন্য প্রস্তুত বলে প্রমাণ দেয়। পরিক্রমাটি ওয়ার্ল্ড সেলিং স্পিড রেকর্ড কাউন্সিল (WSSRC)-এর নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হবে, যেখানে শুধুমাত্র পাল (সেলিং) দ্বারা ২১,৬০০ নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করতে হবে এবং কোনোরকম ন্যার শর্টকাট বা ইঞ্জিনের সহায়তা গ্রহণ নিষিদ্ধ।

এই অভিযান চলাকালে দলটি জাতীয় সমুদ্র বিজ্ঞান সংস্থার সহযোগিতায় বৈজ্ঞানিক গবেষণাও পরিচালনা করবে। গবেষণার মধ্যে থাকবে মাইক্রোপ্লাস্টিক পর্যবেক্ষণ, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের দলিলায়ন এবং সামুদ্রিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি।

রক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ভারতীয় নাবিকদের অসাধারণ কীর্তিতেও স্মরণ করেন, যেমন — ক্যাপ্টেন দিলীপ ডন্ডে (প্রথম সলো পরিক্রমা, ২০০৯-১০), কমান্ডার অভিলাষ টমি (প্রথম সলো নন-স্টপ পরিক্রমা, ২০১২-১৩) এবং আইএনএসভি তারিণী নিয়ে মহিলাদের নাবিকা সাগর অভিযান। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, IASV ত্রিবেণী নতুন আন্তর্জাতিক মান স্থাপন করবে এবং ভারতের সামুদ্রিক যাত্রার ইতিহাসে একটি নতুন গৌরবময় অধ্যায় যুক্ত করবে।

এই ভার্চুয়াল ফ্ল্যাগ-অফ অনুষ্ঠানে প্রধান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জেনারেল অনিল চৌহান, থলসেনা, নৌসেনা ও বায়ুসেনার প্রধান এবং পশ্চিম নৌসেনা কমান্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “অভিযানের সময় এই সাহসী অফিসাররা বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন, তবে তাদের সংকল্প অন্ধকার কেটে আলোর দিকে এগিয়ে যাবে। তারা নিরাপদে ফিরে এসে পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দেবে যে ভারতীয় নারীদের সাহস অসীম।”

 

Exit mobile version