Site icon janatar kalam

মরণোত্তর ত্রিপুরা বিভূষণ সম্মান পেলেন প্রয়াত শিক্ষাবিদ সুশান্ত কুমার চৌধুরী

জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য দিবসে এবারের স্টেট সিভিল অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে মরণোত্তর ত্রিপুরা বিভূষণ সম্মান পেয়েছেন প্রয়াত শিক্ষাবিদ সুশান্ত কুমার চৌধুরী। রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এবার মরণোত্তর ত্রিপুরা বিভূষণ সম্মান পেয়েছেন মহারাজা বীরবিক্রম মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ প্রয়াত সুশান্ত কুমার চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা প্রয়াত শিক্ষাবিদ সুশান্ত কুমার চৌধুরীর পুত্র শুভেন্দু চৌধুরীর হাতে এই সম্মান তুলে দেন। সম্মাননা হিসেবে স্মারক, উত্তরীয়, মানপত্র ও ৫ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়। স্টেট সিভিল অ্যাওয়ার্ডে এবার ৫টি সম্মাননা এবং ১০টি স্টেটহুড অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা বিভূষণ ছাড়াও সম্মাননাগুলির মধ্যে রয়েছে ত্রিপুরা ভূষণ সম্মান, শচীন দেববর্মণ স্মৃতি রাজ্য সম্মান, মহারাণী কাঞ্চনপ্রভা দেবী রাজ্য সম্মান এবং বিজ্ঞান ও পরিবেশ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য রাজ্য পুরস্কার।

তাছাড়া অনুষ্ঠানে উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের জন্য রাজ্য প্রশাসন থেকে চিফ মিনিস্টার্স সিভিল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ দেওয়া হয়েছে। এই অ্যাওয়ার্ডে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে তথ্য প্রযুক্তি দপ্তর। দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তর। যুগ্মভাবে তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন ও রাজস্ব দপ্তর। পুরস্কার হিসেবে দপ্তরগুলিকে শংসাপত্র ও ট্রফি দেওয়া হয়।

স্টেট সিভিল অ্যাওয়ার্ডে এবার ত্রিপুরা ভূষণ সম্মান পেয়েছেন পন্ডিত সুবল বিশ্বাস। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মাননা হিসেবে স্মারক, উত্তরীয়, মানপত্র ও ২ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়। শচীন দেববর্মণ স্মৃতি রাজ্য সম্মান পেয়েছেন বিশিষ্ট তবলা শিল্পী জওহর ব্যানার্জি। উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে কলকাতার বঙ্গীয় সংগীত পরিষদ থেকে জওহর ব্যানার্জি ‘সংগীত রত্ন’ উপাধি পেয়েছিলেন ও পরবর্তীকালে অন্যান্য পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন।

সম্মাননা হিসেবে স্মারক, উত্তরীয়, মানপত্র ও ১ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়। মহিলা ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদানের জন্য মহারাণী কাঞ্চনপ্রভা দেবী স্মৃতি সম্মান দেওয়া হয়েছে কুমারী জোৎস্না আক্তারকে। সম্মাননা হিসেবে স্মারক, উত্তরীয়, মানপত্র ও ১ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়। বিজ্ঞান ও পরিবেশ রক্ষায় রাজ্য পুরস্কার পেয়েছেন স্মিতা দত্ত চৌধুরী। সম্মাননা হিসেবে স্মারক, উত্তরীয়, মানপত্র ও ১ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিগণ পুরস্কার প্রাপকদের হাতে এই সম্মাননাগুলি তুলে দেন। ১০টি স্টেটহুড অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে মরণোত্তর সুনাগরিক পুরস্কার পেয়েছেন আগরতলার ইন্দ্রনগরের প্রয়াত চিরঞ্জীত দে। গত আগস্ট মাসের বন্যায় মানুষের জীবন রক্ষায় তিনি প্রাণ দিয়েছিলেন। প্রয়াত চিরঞ্জীতের মা মীনা দের হাতে পুরস্কারটি তুলে দেওয়া হয়। তাছাড়া শিল্প মহলে বিশেষ কর্মদক্ষতার জন্য শ্রেষ্ঠ স্টার্টআপ উদ্যোগের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে নাগিছড়ার রিপন দাসকে।

কৃষি উদ্যান পালনে বিশেষ কর্মদক্ষতার জন্য শ্রেষ্ঠ উদ্যোগের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে চড়িলামের কমল দেববর্মাকে। মৎস্যচাষে বিশেষ কর্মদক্ষতার জন্য শ্রেষ্ঠ উদ্যোগের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে কামালঘাটের শ্রীচরণ দাসকে। প্রাণীপালনে বিশেষ কর্মদক্ষতার জন্য শ্রেষ্ঠ উদ্যোগের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদয়পুর পিত্রার পিয়াংকি দেবশর্মাকে। গ্রামীণ শিল্প ও হস্তকারু শিল্পে বিশেষ দক্ষতার জন্য শ্রেষ্ঠ উদ্যোগের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে দশদার পিংকু কুমার নাথকে। শিল্পক্ষেত্রে বিশেষ কর্মদক্ষতার জন্য শ্রেষ্ঠ উদ্যোগের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে কমলপুর কুচাইনালার বিমল সিংহকে।

শ্রেষ্ঠ মোবাইল অ্যাপ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি দপ্তরকে। সমবায় ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতার জন্য শ্রেষ্ঠ উদ্যোগের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে টাকারজলা ল্যাম্পসকে। শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে পল্লীমঙ্গল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল সুশান্ত চক্রবর্তীকে। পুরস্কার হিসেবে স্মারক, উত্তরীয়, মানপত্র ও ৫০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। পূর্ণরাজ্য দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে আজ রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিফ মিনিস্টার্স সিভিল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডও প্রদান করা হয়েছে। এবার জেলাস্তরে বেস্ট পারফরমিং ডিস্ট্রিক্টের প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে ধলাই জেলা ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা।

বেস্ট পারফরমিং ব্লকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে যথাক্রমে সালেমা, বক্সনগর ও পুরাতন আগরতলা ব্লক। পুরস্কার হিসেবে শংসাপত্র ও ট্রফি দেওয়া হয়। তাছাড়া চিফ মিনিস্টার্স সিভিল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড বিভাগে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের জন্য প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা সাজু বাহিদ এ। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বালিকা মঞ্চ গড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছেন কুমারঘাট ব্লকে বিডিও ডা. সুদীপ ভৌমিক।

গ্রামীণ বিদ্যুতায়নে সৌরশক্তি ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন আইএফএস সুমিত দেব। সোনামুড়া, বক্সনগর ও কাঁঠালিয়া সীমান্ত এলাকায় সীমান্তরক্ষী, পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনীর সাথে সমন্বয়ে যৌথ অভিযানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেওয়ায় তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে শংসাপত্র, ট্রফি ও ২৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। তাছাড়া নন-গ্যাজেটেড আধিকারিকদের মধ্যে সমবায় আধিকারিক বাবলু নমশূদ্র, ফিসারি ইনস্পেক্টর বিশ্বেশ্বর পাল এবং আইসিডিএস সুপারভাইজার গোপা দে-কে চিফ মিনিস্টার্স সিভিল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে শংসাপত্র, ট্রফি ও ১০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। তাছাড়াও অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রতীক তৈরি করার জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের কর্মী চিত্রশিল্পী পুস্পল দেবকে পুরস্কৃত করা হয়।

Exit mobile version