জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সোমবার ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে দশটায় শপথ নিলেন মহম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। শপথ গ্রহণের পর বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদ নতুন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চেয়ার বিনিময় করেন।হামিদ টানা ১০ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।ভারতের মতোই বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক প্রধান হলেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সীমিত। ক্ষমতা কুক্ষিগত সরকারের হাতে। তবে অতীতে সে দেশে রাজনৈতিক সংকটে একাধিক রাষ্ট্রপতি মধ্যস্থতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। আবার সরকারের বিরাগভাজন হওয়ার নজিরও রয়েছে।নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন এমন এক সময় শপথ নিলেন যখন সে দেশে জাতীয় সংসদের নির্বাচন ঘিরে রাজনীতি বেশ উত্তপ্ত। বিরোধী দলগুলি রাজপথে। তারমধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে রাজনৈতিক সংঘাত তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছে। তারা অন্তবর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেছে, যার সংস্থান বাংলাদেশের সংবিধানে নেই।অন্যদিকে, অতীতে দু’বার ভোট বয়কট করা বিএনপি-কে ভোটে শামিল করতে এবার আন্তর্জাতিক মহলের চাপ আছে। দেশেও চাপের মুখে হাসিনা সরকার। বিএনপিকে ছাড়া ভোট হলে সেই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বুঝে গিয়েছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে নতুন রাষ্ট্রপতিকেমধ্যস্থতার ভূমিকায় সরকার চাইবে কিনা বা তিনি নিজে এমন উদ্যোগ নেন কিনা তা নিয়ে কৌতুহল থাকবে।বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সদ্য প্রাক্তন আবদুল হামিদের মতোই একজন মুক্তিযোদ্ধা। তবে হামিদ ছিলেন পুরোমাত্রায় রাজনীতিক। সাতবারের সংসদ সদস্য, সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী উপদলনেতা।নতুন রাষ্ট্রপতি একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা। তবে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন সক্রিয়ভাবে। আবার চাকরি জীবনের শেষে আওয়ামী লিগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হন।চাকরি জীবনে জেলা বিচার বিভাগে সিংহভাগ সময় কাটানো সাহাবুদ্দিন একটা সময় বাংলাদেশের দুর্নীতিদমন কমিশনের কমিশনার ছিলেন। সেদিক থেকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিদের তুলনায় শিক্ষা, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক জীবন মোটেই তেমন আকর্ষণীয় এবং ওজনদার নয় ২২ তম রাষ্ট্রপতির। স্বভাবতই তিন মাস আগে শাসক দল আওয়ামী লিগ তাঁর নাম রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসাবে ঘোষণার সময় দলেরও অনেকেই এবাক হয়েছিলেন।রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, প্রশাসনিক জীবনে সাহাবুদ্দিনের আনুগত্যই তাঁকে সর্বোচ্চ পদে পৌঁছে দিল। আছে কিছু আরও কিছু বিশেষ কৃতিত্বও। সে দেশের গর্বের পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঋণ দিতে অস্বীকার করে প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্ব ব্যাঙ্ক। দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসাবে সাহাবুদ্দিন প্রমাণ করেছিলেন, বিশ্ব ব্যাঙ্কের অভিযোগ ভিত্তিহীন। পরে আন্তর্জাতিক আদালতেও গৃহীত হয় ওই রিপোর্ট।সাহাবুদ্দিনকে বেছে নেওয়ার আরও একটি কারণ শাসক দলের অন্দরে আলোচনায় আছে। ১৯৭৫-এর ১৫ অগাস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সেনারা সপরিবারে হত্যার পর গোটা দেশ ভয়ে মুখ বুজে ছিল। আওয়ামী লিগ নেতাও রা কাড়েননি। সেই সময় কলেজ ছাত্র সাহাবুদ্দিন প্রতিবাদ মিছিল করলে তিন বছর জেলে কাটাতে হয় তাঁকে।