জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- নয়া দিল্লিতে বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৃতীয় সংস্করণের ‘চাণক্য ডিফেন্স ডায়ালগ–২০২৫’-এর উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, সামরিক সংস্কার এবং শক্তির ভিত্তিতে শান্তির প্রতি দেশের অঙ্গীকারকে তুলে ধরেন।
কৌশলগত বিশারদ, গবেষক, শিল্প বিশেষজ্ঞ এবং সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব, দেশপ্রেম এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের অটল অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, প্রচলিত যুদ্ধ, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান কিংবা মানবিক ত্রাণ–সব ক্ষেত্রেই ভারতীয় সেনাবাহিনী সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার অসাধারণ সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।
সম্প্রতি পরিচালিত অপারেশন সিন্ধুর প্রসঙ্গ তুলে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই অভিযান ভারতের সন্ত্রাস দমন ও প্রতিরোধ কৌশলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর কথায়, “বিশ্ব শুধু ভারতের সামরিক সক্ষমতাই দেখেনি, দেখেছে শান্তির লক্ষ্যে দৃঢ় অথচ দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়ার ভারতের নৈতিক স্পষ্টতাও।”
নিরাপত্তা বজায় রাখার পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়নে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। সীমান্ত এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন, সংযোগ বৃদ্ধি, পর্যটন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান দেশের সার্বিক অগ্রগতিকে গতিশীল করেছে বলে তিনি জানান।
আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির দ্রুত পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত বিপ্লব, সাইবার, মহাকাশ, তথ্য ও কগনিটিভ যুদ্ধের মতো নতুন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারত ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর চেতনায় বিশ্বাসী। তিনি জানান, কূটনীতি, অর্থনীতি ও সশস্ত্র বাহিনী মিলেই আজ এমন এক ভারতকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরছে, যে শান্তি চায়, কিন্তু নিজের সীমানা ও নাগরিকদের রক্ষায় সর্বদা সক্ষম ও প্রস্তুত।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর চলমান “ডেকেড অব ট্রান্সফরমেশন”–এর প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সেনা গঠন পুনর্গঠন, নয়া নীতি নির্ধারণ এবং আধুনিকীকরণ—এই সব ক্ষেত্রের সংস্কার ভারতের প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
যুবসমাজের উন্নয়নে সেনাবাহিনীর উদ্যোগ, এনসিসি বিস্তার এবং ক্রীড়াচর্চা বৃদ্ধিতে তাদের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি জানান, নারী অফিসার ও সৈনিকদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে, যা সেনাবাহিনীতে আরও অন্তর্ভুক্তি আনে এবং আগামী দিনে আরও বেশি নারীকে সামরিক সেবায় উৎসাহিত করবে।
সংলাপের আলোচনাগুলো ভবিষ্যৎ জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় কাজ করে যাবে ২০৪৭ সালের মধ্যে “বিকসিত ভারত” নির্মাণের লক্ষ্যে।
শেষে রাষ্ট্রপতি অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের সাফল্য কামনা করেন এবং সশস্ত্র বাহিনীর উৎকর্ষ সাধনের প্রতি নিজের আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেন।

