জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- তিয়ানজিনে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর শীর্ষ সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সোমবার ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বক্তব্যে তিনি সাম্প্রতিক পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং ভারতের পাশে দাঁড়ানো “বন্ধু দেশগুলিকে” ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে তিনি তীব্র আক্রমণ করেন সেইসব দেশকে, যারা প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে দ্বিচারিতা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সন্ত্রাসবাদ কেবল একটি দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ। কোনো দেশই নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারে না। তাই ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।”
তিন স্তম্ভে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি
মোদির ভাষণে স্পষ্ট হয়, এসসিও ফোরামে ভারতের অংশগ্রহণ তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে— নিরাপত্তা (Security), সংযোগ (Connectivity) এবং সুযোগ (Opportunity)।
তিনি জানান, গত ২৪ বছরে এসসিও ইউরেশিয়ার দেশগুলিকে একত্রিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এবং ভারত সবসময় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
পাহেলগাম হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির প্রসঙ্গ টেনে মোদি বলেন, “এটি কেবল ভারতের আত্মার ওপর আঘাত নয়, বরং মানবতাকে মান্য করে চলা প্রতিটি দেশের জন্য খোলা চ্যালেঞ্জ।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই পরিস্থিতিতে কি আমরা মেনে নেব কিছু দেশ প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করবে? সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে কোনো দ্বিচারিতা চলতে পারে না।”
তিনি এসসিও-র রিজিওনাল অ্যান্টি-টেররিস্ট স্ট্রাকচার (SCO-RATS)-এর ভূমিকা তুলে ধরে জানান, আল-কায়েদা-সহ অন্যান্য সংগঠনের বিরুদ্ধে যৌথ তথ্য অভিযান চালিয়ে ভারত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।
সংযোগ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা
সংযোগকে সহযোগিতার দ্বিতীয় স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করে মোদি বলেন, চাবাহার বন্দর এবং ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর ভারতের আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগসূত্র দৃঢ় করবে। তবে তিনি সতর্ক করে দেন, “যে সংযোগ সার্বভৌমত্বকে অগ্রাহ্য করে, তা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য হয় না।”
সংস্কৃতি ও উন্নয়নের প্রস্তাব
মোদি ‘সিভিলাইজেশনাল ডায়লগ ফোরাম’ গঠনের প্রস্তাব দেন, যাতে এসসিও দেশগুলির জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া ও সম্পর্ক আরও গভীর হয়।
তিনি ভারতের সংস্কারমুখী উন্নয়ন যাত্রার কথাও তুলে ধরে বৈশ্বিক অংশীদারদের এতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
শেষে প্রধানমন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-কে আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং কিরগিজস্তানকে পরবর্তী এসসিও সভাপতিত্ব গ্রহণের জন্য শুভেচ্ছা জানান।
সম্মেলনের শেষে সদস্য দেশগুলি ‘তিয়ানজিন ঘোষণা’ গ্রহণ করে।