জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- ভারতের ১৭৬ রান টপকানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার পথচলাটা ১৬৯ রানে থেমে গেল। তার জেরে ভারতের ১১ বছর পর আইসিসি ট্রফি খরা কাটল। গোটা টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকে এবারের টি-২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হল ভারত।
শনিবার ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রোটিয়াদের হয়ে ওপেন করতে নেমেছিলেন রেজা হেন্ড্রিক্স ও উইকেটরক্ষক ব্যাটার কুইন্টন ডি কক। প্রথম ওভারে আরশদীপ ৫ রান দেন। দ্বিতীয় ওভার করতে এসেই দক্ষিণ আফ্রিকার শিবিরে বুমরাহ আঘাত করেন। বুমরাহর বলে বোল্ড হয়ে ৫ বলে ৪ রান করে ফিরে যান হেন্ড্রিক্স। তাঁর পরে মাঠে নামেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। কিন্তু, আরশদীপ তাঁকে ফিরিয়ে দেন। ১টি চার-সহ ৫ বলে ৪ রান করে ঋষভ পন্থের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মার্করাম।
কুইন্টন ডি কক-কে ফেরান আরশদীপ সিং। তিনি ৩১ বলে ৩৯ রান করেন। ৪টি চার এবং ১টি ছয় মেরেছেন। এর আগে ককের সঙ্গে পার্টনারশিপে দক্ষিণ আফ্রিকার গতি অব্যাহত রেখেছিলেন হেনরিখ ক্লাসেন। ক্লাসেনের আগে এই দায়িত্বে ছিলেন স্টাবস। ২১ বলে ৩১ রান করেছেন ট্রিস্টান স্টাবস। মেরেছেন ৩টে চার ও ১টি ছয়। তাঁকে বোল্ড করেন অক্ষর প্যাটেল। হার্দিকের বলে ঋষভ পন্থের হাতে ধরা পড়েন হেনরিখ ক্লাসেন। ক্লাসেন ২টো চার ও ৫টা ছয় সহযোগে ২৬ বলে ৫২ রান করেছেন। এরপর মার্কো জানসেনকে ২ রানে বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন বুমরাহ। হার্দিক পান্ডিয়ার বলে কাগিসো রাবাদা ১টি চার সহযোগে তিন বলে চার রান করার পর সূর্যকুমার যাদবের হাতে ধরা পড়েন। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার ২০ ওভার ৮ উইকেটে তোলে ১৬৯ রান।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে ভারত। তার মধ্যে বিরাট কোহলি একাই করেন ৭৬ রান।গোটা টুর্নামেন্টে ঘারাবাহিকভাবে ব্যর্থ কিংবদন্তি ক্রিকেটার বিরাট কোহলি শনিবার বার্বাডোসে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে জ্বলে ওঠেন। মধ্যে কয়েকটা বল নষ্ট করলেও রীতিমতো ধরে খেলে অর্ধশতক পূর্ণ করতেই তিনি ফেরেন চেনা ছন্দে। ৬টি চার এবং ২টি ছয় মেরে ৫৯ বলে ৭৬ রান করেন। শেষে মার্কো জানসেনের বলে কাগিসো রাবাদার হাতে ধরা পড়েন কোহলি। যার জেরে ভারতের ৫ম উইকেটের পতন হয়। অক্ষর প্যাটেলও দুর্দান্ত খেলেছেন। ১টি চার আর ৪টি ছয় সহযোগে ৩১ বলে ৪৭ রানও করেন। কিন্তু, অর্ধশতকের মুখে কুইন্টন ডি কক রান আউট করে দেন অক্ষর প্যাটেলকে। শিবম দুবে ৩টি চার ও ১টি ছয় সহযোগে ১৬ বলে ২৭ রান করেছেন। এছা়ড়া ভারতের বাকিরা দুই অঙ্কের ঘরে প্রবেশ করেনি।
সেমিফাইনালের দুর্দান্ত ইনিংসের পুনরাবৃত্তি হল না। দক্ষিণ আফ্রিকার কেশব মহারাজের বলে ব্যক্তিগত ৯ রানে হেনরিখ ক্লাসেনের হাতে ধরা পড়লেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। দ্বিতীয় ওভারেই দলের ২৩ রানের মাথায় উইকেট হারাল ভারত। ঋষভ পন্থকেও শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন কেশব মহারাজ। দুই ওভারে ১৪ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন কেশব মহারাজ। কাগিসো রাবাদার বলে মাত্র ৩ রান করে ফিরে যান সূর্যকুমার যাদব। অ্যানরিচ নর্টজে ২ বলে ২ রান করা রবীন্দ্র জাদেজাকে ফিরিয়ে দেন। জাদেজার ক্য়াচ ধরেন কেশব মহারাজ। শিবম দুবের উইকেটও নর্টজেই নিয়েছেন। দুবের ক্যাচ ধরেন ডেভিড মিলার। হার্দিক পান্ডিয়া অপরাজিত থেকে যান।
শনিবার বার্বাডোসের ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে 2024 টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে এইডেন মার্করামের দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ভারতের হয়ে ওপেন করতে নেমেছিলেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংয়ের ওপেন করেছেন মার্কো জানসেন। শেষলগ্নে দক্ষিণ আফ্রিকার কফিনে পেরেক পুঁতে ডেভিড মিলারকে ফিরিয়ে দেন হার্দিক পান্ডিয়া। মিলার ১টি চার ও ১টি ছয় সহযোগে ১৭ বলে ২১ রান।
এই আইসিসি ইভেন্টে ১১ বছরের ট্রফি খরা কাটানোর লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল ভারত। আর দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে প্ৰথমবার কোনও আইসিসি ইভেন্ট জয়ের সুযোগ ছিল। ব্যাটে-বলে দাপুটে পারফরম্যান্সে অপরাজিত থেকে ভারত গ্রুপ পর্ব এবং সুপার-৮ পর্ব অতিক্রম করে। হারায় পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার মত শক্তিশালী দলকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন পিচ হোক বা ক্যারিবিয়ান স্লো সারফেস কোনও কিছুই ভারতকে ফাইনালে ওঠা থেকে আটকে রাখতে পারেনি। সেমিফাইনালে হারায় গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। এবার ফাইনালে হারাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা বারবার কঠিন সিচুয়েশনে পড়লেও আতঙ্কগ্রস্থ হয়নি। নকআউট পর্বে বারংবার ব্যর্থতার ভূত তাড়িয়েই প্রোটিয়ারা উঠেছিল ফাইনালে।
২০০৭-এ ভারতের শেষবার টি২০ বিশ্বকাপ জয়ী দলের একমাত্র সক্রিয় সদস্য রোহিত শর্মা। দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক আইডেন মার্করাম আবার সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন গোটা বিশ্বকাপ জুড়ে। গ্রুপ পর্বে নেপাল এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থা থেকেও দক্ষিণ আফ্রিকা জয় পেয়েছিল স্নায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে।