Site icon janatar kalam

শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা গেলেই আগামীদিনে একটি সুন্দর ও উন্নত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে: মুখ্যমন্ত্রী

জনতার কলম আগরতলা প্রতিনিধি :-শিশুরা হলো সমাজের ভবিষ্যৎ। শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত রাখা শুধুমাত্র সরকারের দায়িত্ব নয়। শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত রাখা সবার দায়িত্ব। পারিবারিক, সম্প্রদায়গত, সামাজিকভাবে সবাই মিলে এই দায়িত্ব নিতে হবে। আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের উদ্যোগে এবং রাজ্য সরকারের সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সহযোগিতায় আয়োজিত শিশু অধিকার শীর্ষক উত্তর পূর্বাঞ্চলভিত্তিক কনভেনশনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার শিশু সুরক্ষাকে সঠিকভাবে বজায় রাখতে নানা আইন প্রণয়ন করেছে। শিশুদের সঠিক পরিচর্যা করে গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে তুলতে পারলে আমরা একটা সুন্দর দেশ ও পৃথিবী গড়তে পারবো।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা গেলেই আগামীদিনে একটি সুন্দর ও উন্নত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। দেশের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হলো শিশু। অতএব শিশুদের সঠিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমরা গাফিলতি করলে সেটা হবে সমাজ ও দেশকে অবহেলা করা। তিনি বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকলে শিশুদের ক্ষেত্রেও সমান সুযোগ থাকা দরকার। সামাজিক ক্ষেত্রে তারা আলাদা নয়। ভারতে প্রতিদিনে গড়ে ৬৩ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে। শিশুদের সঠিক সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিশু শ্রম, বাল্যবিবাহ দূর করে একটা সুন্দর সমাজ তথা দেশ গড়ে তুলতে হবে। রাজ্য সরকার শিশু অধিকার সুরক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় শিশুদের নিরাপত্তা ও সার্বিক কল্যাণে মোট চারটি চাইন্ড কেয়ার ইনস্টিটিউশন চালু রয়েছে। এই চাইন্ড কেয়ার ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে ৯৪৭ জন শিশুকে লালন পালন করা হচ্ছে। জুভেনাইল জাস্টিস মেকানিজমের ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য রাজ্যে ৮টি জেলাতে জাস্টিস বোর্ড গঠন করা হয়েছে এবং ৮টি জেলাতে অভাবী বা অনাথ শিশুদের যত্ন, সুরক্ষা ও পুনর্বাসনে চাইন্ড কেয়ার কমিটিগুলি কাজ করছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্পনসরশিপ কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যের ৪ হাজার ২৩৪টি শিশুর শিক্ষা, চিকিৎসা ও সঠিক পরিচর্যার জন্য পারিবারিকভাবে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একজন সচেতন ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে সমাজে শিশুদের যত্ন ও সুরক্ষার প্রতি আমাদের সঠিক লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্তমানে রাজ্যে ৮টি জেলাতেই শিশু সুরক্ষায় বিশেষ জুভেনাইল পুলিশ ইউনিট চালু করা হয়েছে। শিশু বান্ধব ও শিশু সংক্রান্ত বিষয় সময়মতো হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।

তিনি বলেন, রাজ্যে প্রতিটি জেলাতেই শিশুদের জন্য ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু করা হয়েছে। নতুন আরও ২টি ওয়ান স্টপ সেন্টার করা হবে। রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের গুণগত শিক্ষার উপর রাজ্য সরকার জোর দিয়েছে। রাজ্যে কয়েক বছরে ২ লক্ষ ২৯ হাজার শিশুকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও পোষণ অভিযানের মাধ্যমে নানা পরিষেবার আওতায় আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর পূর্বাঞ্চলকে শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটা মডেল শিশু সুরক্ষা অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন। রাজ্য সরকারও চায় কোনও শিশুই যেন শিক্ষা স্বাস্থ্য সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বঞ্চিত না হয়। সেই দিশাতেই কাজ হচ্ছে।

কনভেনশনে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, প্রতিটি শিশুকে সঠিক শিক্ষা প্রদান এবং তাদের যত্ন সহকারে বড় করে তোলা আমাদের লক্ষ্য। রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে তা করা হচ্ছে। শিশুদের সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী মাত্রুপুষ্টি প্রকল্পে ৫ হাজার টাকা মাসে ও মুখ্যমন্ত্রী মাত্রপুষ্টি প্রকল্পে ২ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে বিদ্যালয়স্তরে ছাত্রীদের সুবিধার জন্য সাইকেল দেওয়া হচ্ছে। মহাবিদ্যালয়স্তরে স্কুটি দেওয়া হয়েছে। খেলাধুলার জন্য প্যারাগেমস চালু করা হয়েছে। ২ হাজার ছাত্রছাত্রীকে ৫ হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন ও কেন্দ্রীয় সরকারের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তৃপ্তি গোরহা বলেন, ভারত সরকার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বাল্যবিবাহ, শিশু শ্রম সম্পূর্ণ রূপে দূর করতে এবং শিশুদের সঠিক সুরক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছে। পকসো আইন সহ শিশুদের সুরক্ষায় নানা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা তপন কুমার দাস। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মণিপুরের এস.সি.পি.সি.আর-এর চেয়ারপার্সন কৈশ্যাম প্রদীপ কুমার, আসাম এসসি.পি.সি.আর-এর চেয়ারপার্সন শ্যামল প্রসাদ সইকিয়া ও ত্রিপুরা চাইন্ড প্রটেকশন চাইন্ড কেয়ার টি.সি.পি.সি.আর.-এর চেয়ারপার্সন জয়ন্তী দেববর্মা প্রমুখ।

Exit mobile version