জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- ঈদের খুশিতে মেতে উঠেছে হিন্দু মুসলিম সমস্ত সম্প্রদায়ের লোক। একে অপরকে আপন করে নিয়েছে আলিঙ্গনের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয়ভাবে ঈদ উল আযহা পালিত হয় গেদু মিয়ার মসজিদে।ঈদের সামাজিক অর্থ উৎসব আর আভিধানিক অর্থ পুনরাগমন বা বারবার ফিরে আসা। তাই প্রতি বছরই মুসলমানদের জীবনে ফিরে আসে ঈদ। প্রথমটি উদযাপিত হয় দীর্ঘ ১ মাস রোজা রাখার পর। যাকে বলা হয় ঈদ-উল- ফিতর বা রোজার ঈদ, আর অন্যটি আত্মত্যাগের কোরবানীর ঈদ বা ঈদ-উল-আজহা। এই দুইটি ঈদই হল মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।গোটা পৃথিবীতেই মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা এই দিন খুবই আনন্দের সঙ্গে পালন করেন। সবাই এ দিন সাধ্যামতো ভালো পোশাক পরে। ঘরে ঘরে ভোজের আয়োজন হয়। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরাও এই আনন্দের অংশীদার হয়। দরিদ্ররাও এ দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদা আনন্দের সাথে পালন করে। মুসলমানেরা এ দিন ঈদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই কোলাকুলি-সহ সালাম ও শুভেচ্ছার হাত বাড়িয়ে দেয়।বর্তমানে ঈদকার্ড বিনিময় একটি জনপিয় প্রথায় পরিণত হয়েছে। আর তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সোশ্যাল মিডিয়াতেও আনন্দ-খুশি ও ঈদের আবেগ ভাগাভাগি করে থাকে। সমাজের ধনী ও সক্ষম ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট হারে গরিবদের ফিতরা বা শর্তহীন অনুদান বিতরণ করে থাকে যা ধর্মীয় দিক থেকে ধনীদের জন্য যা বাধ্যতামূলক।এই ঈদ উৎসবের কী ভাবে প্রচলন হয়েছে তার ইতিহাস ও তথ্য সঠিকভাবে আজও জানা যায়নি। নানা ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সূত্র ও তথ্য থেকে রোজাপালন এবং ঈদ-উল-ফিতর বা ঈদ-উল-আজহা উদযাপনের যে ইতিহাস জানা যায় তাতে ১২০৪ খৃস্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে এলেও নমাজ, রোজা ও ঈদোৎসবের প্রচলন হয়েছে তার বেশ আগে থেকেই। বঙ্গদেশ যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুসলিম অধিকারে আসার বহু আগে থেকেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ ও সাধকরা ধর্ম-প্রচারের লক্ষ্যে উত্তর ভারত হয়ে পূর্ব-বাংলায় আসেন।অন্যদিকে আরবীয় এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকেরা চট্টগ্রাম নৌবন্দরের মাধ্যমেও বাংলার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এভাবেই একটা মুসলিম সাংস্কৃতিক তথা ধর্মীয় প্রভাব যে পূর্ব-বাংলায় পড়েছিল। তবে মুঘল যুগে ঈদের দিন যে হইচই বা আনন্দ হতো তা মুঘল ও বনেদি পরিবারের উচ্চপদস্থ এবং ধনাঢ্য মুসলমানদের মধ্যে কিছুটা হলেও সীমাবদ্ধ ছিল। তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের ব্যবধান না থাকলেও কিছু দূরত্ব ছিল।আগরতলায় গেদু মিয়ার মসজিদে পবিত্র ঈদ নামাজে উপস্থিত থেকে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী শুক্লা চরণ নোয়াতিয়া। ঈদের এই কুরবানী প্রসঙ্গে যতদূর জানা গেছে মুসলমানদের প্রিয় নবী আব্রাহামের এর কাছে আল্লাহতালা তার প্রিয় ছেলেকে কুরবানী চেয়েছিল। নবী যখন একমাত্র ছেলেকে কোরবানির জন্য তৈরি করেছিল তখন আল্লাহতালা খুশি হয়ে একটি দুম্বা পাঠিয়েছিল। এই দুম্বা কুরবানী দিয়েই খুশি করিয়েছিল আল্লাহকে। আর তারপর থেকেই ত্যাগের প্রতীক হিসেবে মুসলমান ধর্মালম্বীরা পবিত্র ঈদে বিভিন্ন পশু কুরবানী দিয়ে থাকে। জানিয়েছেন জনৈক ইমাম। এবছর ঈদে বাংলাদেশ থেকেও অনেক মুসলমান ধর্মালম্বী ত্রিপুরায় এসেছে ঈদ উল আযহা পালনের উদ্দেশ্যে। এরকম এক বাংলাদেশী নাগরিকের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে গেদু মিয়ার মসজিদে। এদিকে বৃহস্পতিবার সোনামুড়া কুলোবাড়ি ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮ টা নাগাদ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক শামসুল হক। মুসলিম ধর্মালম্বীদের এই কুরবানী ঈদের নামাজ আদায়ে সোনামুড়া মহাকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন কুলোবাড়ি ঈদ গ্রাহ ময়দানে। এদিন নামাজ আদায় শেষে সিপিআইএম বিধায়ক শামসুল হক বলেন, সোনামুড়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুরা এখনও রয়েছে বর্ডার ফেন্সিং এর বাইরে। পরিতাপের বিষয় হল অন্যান্য বৎসর যারা বর্ডার ফেন্সিং এর বাহিরে রয়েছে সেই সংখ্যালঘুদের জন্য কুরবানী ঈদের সময় গবাদিপশু ক্রয় বিক্রয় করার জন্য তাহাদেরকে পারমিট এর ব্যবস্থা করা হত। কিন্তু এই বৎসর সরকারের পক্ষ থেকে পারমিট দেওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বর্ডারও সিল করে দেওয়া হয়। ফলে কাঁটাতারের বাহিরে যে সংখ্যালঘুরা রয়েছে তারা কুরবানী ঈদের গবাদি পশু ক্রয় বিক্রয় করতে পারছেন না।অভিযোগ বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মহকুমা শাসককেও অবগত করা হয়েছিল।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।তবে যাই হোক ঈদকে কেন্দ্র করে কুরবানী নিয়ে রাজ্যের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।নির্বিঘ্নেই চলছে ঈদের আনন্দ উৎসব ও কুরবানী।