জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ বছরের শুরুর দিনটি উৎসবের মধ্য দিয়ে এই পার্বণের সূচনা। বাংলা বছরের শুরুর দিনটিতে ছোট বড় সব ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার হিসাব নিকাশ নতুন খাতাতে শুরু করেন। এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় হালখাতা অনুষ্ঠান। আর পুরনো বছরের হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলা হয় যে খাতায় সেটাই হালখাতা নামে পরিচিত। রাজধানী আগরতলায় পহেলা বৈশাখের দিন ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজার মাধ্যমে নতুন বছরের নতুন হালখাতা সূচনা করেন। অপরদিকে অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যবসায়ীরা দোকানে পূজার আয়োজন না করলেও, আগরতলার লক্ষী নারায়ন বাড়ী মন্দির সেন্ট্রাল রোড শিববাড়ি মন্দিরে পুরোহিতদের দিয়ে নতুন হালখাতার পুজোর মধ্য দিয়ে শুভ সূচনা করেন। পহেলা বৈশাখ হালখাতার উৎসবকে কেন্দ্র করে এখন রাজধানী আগরতলা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বইসহ অফিসের প্রয়োজনের সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলিতে নানা আকারের ও নানা ডিজাইনের হালখাতার ছড়াছড়ি। বিশেষ করে শহরের ওরিয়েন্ট চৌমুনি এলাকায় সবচেয়ে বড় বইয়ের দোকানগুলিতে এখন স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে নানা রকমের হালখাতা। আর তা কিনতে প্রতিটি দোকানেই লাল-মলাটের হালখাতা কেনাবেচার ভিড় এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার এমনটাই দোকান দেখা গেল আগরতলা শহরের বিভিন্ন দোকানগুলিতে। ক্ষুদ্র মাঝারি প্রত্যেক ব্যবসায়ী যেন অপেক্ষায় বসে থাকেন কবে পহেলা বৈশাখ আসবে এবং নতুন খাতায় ব্যবসার হিসাব নিকাশ শুরু করবেন। যুগ যুগ ধরে ধ্বংস পরম্পরায় এই রীতি চলে আসছে। অত্যাধুনিক ডটকমের যুগে অনলাইনের প্রচলন থাকলেও, এই হালখাতার রীতি এখনো ঐতিহ্য মেনে বজায় রয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, এক সময় সর্বজনীন উৎসব হিসেবে হালখাতা ছিল বাংলা নববর্ষের প্রাণ। সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তনের পর থেকেই হালখাতার প্রচলন হয়। অতীতের জমিদারকে খাজনা দেওয়ার অনুষ্ঠান হিসাবে পূণ্যাহ প্রচলিত ছিল। বছরের প্রথম দিন প্রজারা সাধ্যমত ভালো পোশাক পরে জমিদার বাড়িতে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করতেন। তাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ায় পুণ্যাহ বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু হালখাতা যেহেতু ব্যবসায়ীরা পালন করতেন তাই এটি আজও অক্ষুন্ন রয়েছে।