জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধিঃ- “বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস”, সারা বিশ্বের প্রাণীসেবায় কর্মরত ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য একটি বিশেষ দিন। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার সারা বিশ্বে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় এই দিবসটি। এই উপলক্ষে শনিবার “ত্রিপুরা ভেটেরিনারি কাউন্সিল” এর উদ্যোগে রাজধানীর নজরুল কলাক্ষেত্রে প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী ভগবান চন্দ্র দাস এর উপস্থিতিতে “ওয়ার্ল্ড ভ্যাটেনারি ডে-২০২২” উপলক্ষে আয়োজিত একটি মহতী স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, প্রানীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী ভগবান দাস। অংশগ্রহণ করি। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে এদিনের অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী ভগবান দাস। এদিন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন প্রতি বছর ভেটেরিনারি পেশা সর্ম্পকে সাধারণ মানুষকে অবগত করণসহ উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে “ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি ডে” মর্যাদার সংগে আমাদের রাজ্যেও পালন করা হয়। আমাদের রাজ্যেও ভেটেরিনারি শিক্ষা ও পেশার সঙ্গে জড়িতরা দিবসটি উদযাপন করছেন। এবারের আন্তর্জাতিক ভেটেরিনারি দিবস এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘’Strengthening Veterinary Resilience” অর্থাৎ “পশুচিকিৎসা স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালীকরণ”। প্রাণীস্বাস্থ্য ও সুরক্ষা এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি ভেটেরিনারি পেশাকে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া এবং প্রাণী ও মানুষের উন্নয়নে কাজ করা, পরিবেশের উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রাণী পরিবহন ও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরনে ভূমিকা রাখাই আজকের দিনটির মূল লক্ষ্য।পাশাপাশি মানুষের সুস্থ থাকার জন্য এখন প্রানীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখাটা বেশী জরুরী। পৃথিবীর প্রাণীকুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত না থাকলে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে না। যার প্রমান অতীত ও বর্তমানের “কোভিড-১৯” মহামারি দেখলেই বোঝা যায়। প্রানীর স্বাস্থ্য সেবা, খাদ্য, চিকিৎসা, লালন পালনে একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য ভেটেরিনারিয়ানদের। একজন ভেটেরিনারিয়ানই পারেন বিশ্বের প্রাণীকুলকে প্রকৃত সেবা দিতে। ভেটেরিনারিয়ানরা অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ভাইরাস যেমন- ইবোলা, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, র্যাবিস , ফুট এন্ড মাউন্ড ডিজিস (এফ এম ডি) এর মত জুনেটিক ডিজিস ( যে রোগ প্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায়) নিয়ে কাজ করছেন। ভাইরাস নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা অনেক বেশী ভেটেরিনারি ডাক্তারদের।বৈশ্বিক মহামারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সনাক্তকরণে টেকনিক্যাল সাপোর্ট ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে যাচ্ছেন ভেটেরিনারিয়ানরা। শুধু তাই নয়,মানুষে করোনা টিকা প্রদানের জন্য ভেটেরিনারিয়ানদের সহযোগিতা নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। আমাদের দেশে করোনা টেস্ট ল্যাব স্থাপন এবং বিভিন্ন সরকারী ও বেসসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক ভেটেরিনারিয়ান করোনা মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া আমাদের ভেটেরিনারিয়ানরা করোনার জেনম সিকোয়েন্সিং ও ভ্যারিয়েন্ট সনাক্তকরণে কাজ করে যাচ্ছেন। বেসরকারি উদ্যোগে অনেক ভেটেরিনারিয়ান কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের প্রাণীসম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের পুষ্টি ও দেশের অর্থনীতিতেতে অবদান রাখছেন। প্রলম্বিত কোভিড-১৯ মহামারী মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবনকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করছে বিশ্বব্যাপী মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবনযাত্রাকে। তবুও এই চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে ভেটেরিনারিয়ানরা পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে তাদের সেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রযুক্তির সমন্বয়ে তাঁরা প্রাণীর স্বাস্থ্য ও কল্যাণ এবং নিরাপদ প্রোটিন সরবরাহের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যে তাদের ভূমিকা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান তিনি। তাছাড়া এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রানীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী ভগবান দাস বলেন পশু চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়ন সাধনে নিয়ে আসা হচ্ছে ১২টি ভ্যাটেনারী মোবাইল ভ্যান, যার দ্বারা ২০ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি এদিন তিনি আরো বলেন ইতিমধ্যে কতগুলো কি কি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে আমরা জানি, একটা ব্যক্তি বা মানুষ সে অসুস্থ হয়। আমরা কিন্তু সে সময় পার্শ্ববর্তী চিকিৎসাকেন্দ্রে যায় চিকিৎসার জন্য এবং চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলি যত তারাতারি সুস্থ হওয়া যায় কিনা তার জন্যে, এবং পশুরা নিজেদের সুবিধা অসুবিধার কথা এক্সপ্রেস করতে পারেনা কিন্তু তাদেরও চিকিৎসা পরিষেবার প্রয়োজন রয়েছে তাই এক্ষেত্রে ভেটেনারি চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিসীম, কেননা আগে আমরা একটি গৃহপালিত পশু কি ধরনের বাচ্চা প্রসব করবে তা আমরা পূর্বে আন্দাজ করতে পারিনা কিন্তু এখন আমরা সে দিক দিয়ে অধিকাংশ সফলতা অর্জন করতে পেরেছি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।আজকের এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধিকর্তা দিলীপ কুমার চাকমা, অর্গানাইজিং কমিটির আহবায়ক ডক্টর অনাদি শঙ্কর ভট্টাচার্য্য, ত্রিপুরা ভেটেরিনারি কাউন্সিল এর সভাপতি ডক্টর চিন্টু দেববর্মা, রেজিস্ট্রার ডক্টর সুব্রত শুক্লদাস সহ ত্রিপুরা ভেটেরিনারি কাউন্সিলের অন্যান্য কর্মকর্তা ও সদস্য-সদস্যারা।