জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির ফলে জীবনহানি সহ সম্পদ ক্ষয়ক্ষতির গভীরতা বিবেচনা করে রাজ্য সরকার সমগ্র রাজ্যকে ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রভাবিত এলাকা’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে এ সংবাদ জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, সোনামুড়ায় গোমতী নদীর জলস্তর ধীরে ধীরে কমলেও এখনও বন্যাস্তরের উপরে রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সর্বোচ্চস্তরে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে আজ বিকেল পর্যন্ত রাজ্যে ৩৪৬টি শরণার্থী শিবিরে ৫২ হাজার ৯০৬ জন মানুষ রয়েছেন। তাদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানীয়জল এবং স্বাস্থ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৩২ জন বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন, ২ জন আহত হয়েছেন এবং ১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান, ত্রাণ শিবিরগুলিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং জলবাহিত রোগ যাতে না হয় তারজন্য সুরক্ষা কর্মসূচি হিসাবে শৌচালয়গুলি নিয়ম মাফিক পরিষ্কার, জীবাণুনাশক ঔষধ স্প্রে ও ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ত্রাণ শিবিরগুলিতে চিকিৎসকগণ ১,২৭১ বার পরিদর্শন ও ৩৭ হাজার ৫৯৬ জনের চিকিৎসা করেছেন। এছাড়াও ১,৮৬৭টি স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করে ৪৩ হাজার ৮৮৭ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। পানীয়জল ও স্বাস্থ্যবিধান দপ্তর স্বচ্ছ ভারত মিশনের (গ্রামীণ) অধীনে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য জল ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ স্যানিটেশন অনুশীলন সম্পর্কিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) জারি করেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান, রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব বি সি যোশীর নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল (আইএমসিটি) গতকাল রাজ্যে এসে পৌঁছেছে। আগরতলায় পৌঁছেই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল গতকাল রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক করেন। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলটি আজ বন্যার ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়নের জন্য দক্ষিণ ত্রিপুরা ও গোমতী জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, বন্যার পরবর্তী পরিস্থিতিতে আজ পর্যন্ত ১৮টি বিদ্যুৎ বিভাগে ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। দক্ষিণ ত্রিপুরা, গোমতী এবং সিপাহীজলা জেলার বেশ কিছু স্থান জলমগ্ন থাকায় বাকি ৬টি বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রায় ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। জলস্তর কমলে এগুলিও দ্রুত পুনরুদ্ধারের কাজ শেষ করা হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান, বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত রাজ্যের ৪ হাজার ৭৩৪টি বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। ধলাই জেলা, সিপাহীজলা জেলা, গোমতী জেলা এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার ১৬৩টি বিদ্যালয় এখনও খোলা যায়নি। এছাড়াও গতকাল থেকে রাজ্যের ৯ হাজার ২৭৮টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পুনরায় চালু করা হয়েছে। রাজস্ব সচিব জানান, সাম্প্রতিক বন্যার ফলে রাজ্যের শ্রমিকদের জীবনজীবিকা ও আয় ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই শ্রম দপ্তর নথিবদ্ধ নির্মাণ শ্রমিকদের ৪ হাজার টাকা করে এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরফলে রাজ্য সরকারের ১৭ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের ৪২ হাজার ৯৮১ জন নথিভুক্ত নির্মাণ শ্রমিক উপকৃত হবেন। রাজস্ব সচিব জানান, বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন এবং এনজিও-র প্রদান করা ত্রাণ সামগ্রী সঠিকভাবে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে বিতরণের জন্য ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তর একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা প্রশান্ত বাদল নেগী। এই কমিটি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এনজিও-র সঙ্গে একটি সভাও করেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী দান করতে আগ্রহী ব্যক্তি, সংগঠন ও এনজিও-কে এই কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের অধিকর্তা জে ভি দোয়াতি এবং পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা প্রশান্ত বাদল নেগী।