জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- রাজ্য সরকার নতুন করে আরও ৫ হাজার ৪৫৮ জনকে সামাজিক ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক সহায়তা প্রকল্পে ভাতা প্রাপকগণ কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ভাতা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এবং ভাতা প্রাপকদের মৃত্যুজনিত কারণে শূন্যস্থান সৃষ্টি হওয়ায় আরও ৫ হাজার ৪৫৮ জনকে ভাতা প্রদান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে সমাজ কল্যাণ এবং সমাজ শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায় একথা জানান। তিনি সমাজকল্যাণ দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের সফল্যের তথ্য তুলে ধরেন।
সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী টিংকু রায় জানান, সমাজ কল্যাণ এবং সমাজ শিক্ষা দপ্তর রাজ্যের গরীব অংশের জনগণের জন্য ৩৪টি বিভিন্ন ধরণের সামাজিক ভাতা (৩টি কেন্দ্রীয় এবং ৩১টি রাজ্যস্তরের) প্রদান করে থাকে। বর্তমানে মোট ৩ লক্ষ ৯০ হাজার গরীব অংশের মানুষ ৩৪টি বিভিন্ন ধরণের সামাজিক ভাতা পাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, জাতীয় পারিবারিক সহায়তা প্রকল্পের (এনএফবিএস) মাধ্যমে অন্ত্যোদয় পরিবারে মূল উপার্জনকারী ব্যক্তির মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট পরিবারকে জাতীয় পারিবারিক সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা সহায়তা করা হয়। গত ১ বছরে এই প্রকল্পে ৩০৮টি পরিবার উপকৃত হয়েছে। তাদের মোট ৬১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী মাত্র বন্দনা যোজনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৮২৩ জন গর্ভবতী মহিলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তিনি জানান, এছাড়াও গত ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে যেসমস্ত সুবিধাভোগী আর্থিক সহায়তা পাননি তাদের মধ্য থেকে ২৭ হাজার ৪৭০ জনকে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এর জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ব্যয় হয়েছে ১৬ কোটি ৩১ লক্ষ ২৩০ টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২১ হাজার গর্ভবতী মহিলাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী মাতৃ পুষ্টি উপহার প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৬৬৪ জন গর্ভবতী মহিলাকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এর জন্য মোট ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ৭৩ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা। সাংবাদিক সম্মেলনে সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায় মিশন বাৎসল্য প্রকল্পের সাফল্যের চিত্রও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই প্রকল্পের আওতায় মোট ২ হাজার ৫৯ জন শিশুকে প্রতিমাসে ৪ হাজার টাকা করে স্পনসরশিপ প্রদান করা হয়েছে। এর জন্য ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৮৮ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩০১ জন শিশুকে এই স্পনসরশিপ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় শিশুরা তাদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এই অর্থ পাবে। সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি ও পোষণ মিশন ২.০ প্রকল্পের বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্যে ৫৬ টি আইসিডিএস প্রকল্প রয়েছে। ধলাই জেলার গঙ্গনগর ব্লকের নতুন একটি আই সি ডি এস প্রকল্প খোলার অনুমোদন পাওয়া গেছে। তিনি জানান, রাজ্যে আই সি ডি এস প্রকল্পের অধীনে ১০ হাজার ২২২টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৭৯ হাজার ৩৪০ জন শিশু (৬ মাস ৬ বছর) এবং ২৮ হাজার ২৯২ জন গর্ভবতী মহিলা ও প্রসূতি মা নথিভুক্ত রয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী জনজাতি আদিবাসী ন্যায় মহা অভিযান প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে জনজাতি বসতি এলাকায় ৭৭টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে জনজাতি বসতি এলাকার ৮৮টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাকাভবন নির্মাণের জন্য ১০ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা মঞ্জুরী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাকাভবনের নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে জনজাতি বসতি এলাকায় আরও ৫৩টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু করা হবে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিকে সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে উন্নীত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রালয় ধলাই জেলার ৪৭৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে উন্নীত করার অনুমোদন দিয়েছে। এই ৪৭৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৪ কোটি ৩৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তিনি জানান, এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাঙ্ক তাদের কর্পোরেট সোসিয়্যাল রেসপনসিবিলিটি’র অঙ্গ হিসাবে বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছে। যেমন এইচ ডি এফ সি ব্যাঙ্ক ১০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে এবং আরও ৩২ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছে। এস বি আই ব্যাঙ্ক ৪০ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সোলার লাইট বসানোর জন্য অর্থ প্রদান করেছে। এছাড়াও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫ হাজারটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপনের জন্য রাজ্য সরকারের বাজেটে অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। ২ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে স্মার্ট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আগরতলার পুরনিগম এলাকা সহ রাজ্যের পুর এলাকার অন্তর্গত ১০০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকেও আরও উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে সমাজকল্যাণমন্ত্রী জানান, সমাজ কল্যাণ এবং সমাজ শিক্ষা দপ্তর গরীব ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্যে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের জন্য সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরে সামাজিক ভাতা চালু রয়েছে। বর্তমানে ৩ হাজার ৪৭৬ জনকে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। আরও ১৩১ জনকে ভাতা দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরে সচিব তাপস রায়, অধিকর্তা তপন কুমার দাস।