জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- রাজ্যের সামগ্রিক বিকাশই বর্তমান সরকারের সর্বাধিক অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। রাজ্যের সর্বত্র উন্নয়নের কাজ ধারাবাহিকভাবে চলছে। জাতি, জনজাতি, মহিলা, শিশু, প্রবীণ ব্যক্তিদের কল্যাণে এই সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গদর্শনেই রাজ্যের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলছে বর্তমান সরকার ও প্রশাসন। বর্তমান রাজ্য সরকারের ২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ড.) মানিক সাহা একথা বলেন।
বর্তমান সরকারের দু’বছর পূর্তির অনুষ্ঠান মঞ্চে মন্ত্রিসভার সদস্য কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথ, অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায়, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, বনমন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা, সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, সাংসদ কৃতিদেবী দেববর্মণ এবং রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ জনকল্যাণমুখী রাজ্য সরকারের গত ২ বছরের সাফল্য সম্বলিত ১টি পুস্তিকা ও ফোল্ডারের আবরণ উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানের তাৎপর্য বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা, বর্তমান সরকারের গত দু’বছরের সফলতার জন্য সকলস্তরের জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক আধিকারিক ও সাধারণ জনগণকে অভিনন্দিত করেন। বর্তমান রাজ্য সরকারের সাফল্যের খতিয়ান সমগ্র রাজ্যবাসীর কাছে উত্থাপন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে, জিডিপি বেড়েছে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজ্যের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে হয়েছে ১,৭৭,৭২৩ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮২৮২ হাজার কোটি টাকা। সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’র ক্ষেত্রে ত্রিপুরা ফ্রন্ট রানার স্টেট হিসাবে এগিয়ে যাচ্ছে। গত ৭ বছরে রাজ্যে নতুন ২০-২২টি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। ৩০টি জনমুখী নীতি প্রণয়ন ও সংশোধন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, পিএম কিষাণ সম্মান নিধি, পিএম উজ্জ্বলা যোজনা, আয়ুষ্মান ভারতের মত কেন্দ্রীয় ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচিগুলির সঠিক ও সফল বাস্তবায়ণে রাজ্যের অনগ্রসর অঞ্চলগুলিতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং দায়বদ্ধতাকে প্রযুক্তি নির্ভর করে প্রশাসন পরিচালনার মাধ্যমে রাজ্যে নতুন যুগের সূচনা করেছে।
২০১৮-১৯ থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরে (জানুয়ারি, ২০২৫ পর্যন্ত) ১৬,৮৫১ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। ৫,৭৭১ জনকে আউটসোর্সিং ও চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছে। ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন সহ অন্যান্য মাধ্যমেও অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। বর্তমানে রাজ্যে বেকারত্বের হার জাতীয় গড় থেকে কম।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রশাসনিক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে চালু করা প্রতি ঘরে সুশাসন কার্যক্রমে রাজ্যের প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষ উপকৃত হয়েছেন। জনগণের অভাব অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ‘আমার সরকার’ পোর্টাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার প্রশংসা করেছে। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা অনেকটা উন্নত হয়েছে। ফলে রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ইনভেস্টারস মীটে ৭৮৭ জন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রায় ৩,৭০০ কোটি টাকার মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার জন উপকৃত হয়েছেন। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী জাতীয় সড়ক, জনজাতি কল্যাণ, পর্যটন, কৃষি, সামাজিক ভাতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাজ্যের মহিলাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সরকার মহিলাদের ক্ষমতায়ণে সর্বদা সচেষ্ট। মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বর্তমানে রাজ্যে ৫৩,৬২৩টি স্বসহায়ক দল রয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা ৪ লক্ষ ৮৪ হাজার। রাজ্যে বর্তমানে ৯১,৮৭১ জন লাখপতি দিদি রয়েছেন। ৩ লক্ষ ৮৭ হাজার স্ব-সহায়ক দলের সদস্যার প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা এবং ৩ লক্ষ ১৪ হাজার সদস্যা প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বীমা যোজনার সুফল পাচ্ছেন। তাছাড়া মহিলাদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩৩ শতাংশ, সরকারি স্টল বিতরণে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ, হোস্টেল নির্মাণ, পিঙ্ক টয়লেট নির্মাণ, উজ্জ্বলা যোজনায় ৩ লক্ষ ১২ হাজার গ্যাসের সংযোগ, প্রায় ১.২২লক্ষ নবম শ্রেণিতে পাঠরত ছাত্রীদের বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বর্তমান সরকার যেসকল রাজ্য প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্প, মুখ্যমন্ত্রী ক্রীড়া উন্নয়ন প্রকল্প, মুখ্যমন্ত্রী স্টেট ট্যালেন্ট সার্চ প্রোগ্রাম, মুখ্যমন্ত্রী প্রতিভাশালী পুরস্কার, মুখ্যমন্ত্রী প্রাণীসম্পদ বিকাশ যোজনা, মুখ্যমন্ত্রী মৎস্য বিকাশ যোজনা, মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক সহায়তা প্রকল্প ইত্যাদি। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলনে, এনইসি প্ল্যানারী বৈঠক, জি-২০ এর মত কর্মসূচির সফল আয়োজন করা হয়েছে। রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি থেকে কাটিয়ে উঠতে সরকার, প্রশাসন সর্বোপরি সাধারণ জনগণ মিশন মুডে কাজ করার ফলেই সামগ্রিক সফলতা এসেছে। উল্লেখ্য, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সরকারের উন্নয়নের রূপরেখা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রগতিশীল মার্গদর্শনে প্রশাসন কাজ করে চলেছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অনেকটা সহজতর করার ফলে রাজ্যে বর্তমানে বিনিয়োগ বেড়েছে। সরকার এবং প্রশাসন ঐক্যবদ্ধ মনোভাব নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করার ফলে রাজ্য ও রাজ্যবাসীর কল্যাণে দ্রুত অনেক সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভবপর হচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পিকে চক্রবর্তী।