জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- উন্নয়নের প্রধান শর্ত হচ্ছে শান্তি। শান্তি না থাকলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজ্যে শান্তির পরিবেশ থাকায় বিনিয়োগ যেমন বেড়েছে তেমনি পর্যটকদের আগমনও বৃদ্ধি পেয়েছে। জিএসডিপি বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পাশাপাশি সুস্থায়ী উন্নয়নের সূচকেও ত্রিপুরার অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরা বর্তমানে পর্যটনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে দেশ বিদেশের পর্যটকদের নজর কাড়ছে। বর্তমানে ত্রিপুরা উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্বারগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
রাজ্যের উন্নয়ন বা যে কোনও সমস্যা সমাধানের প্রশ্নে যখনই কোনও প্রয়োজন হয়েছে তখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উদার মানসিকতা নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সাম্প্রতিককালে রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার সহ রাজ্যের নাগরিকদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। ডাবল ইঞ্জিন সরকার থাকার ফলেই যে কোনও সমস্যার দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা রাজন্য আমল থেকে গণতান্ত্রিক ত্রিপুরার উত্তরণের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বলেছিলেন দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল যদি উন্নত না হয়, তবে ভারতের সার্বিক বিকাশ সম্ভব নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গিতেই প্রধানমন্ত্রী অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত হীরা কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজ্যের যোগাযোগ বিশেষ করে জাতীয় সড়ক, রেল, ইন্টারনেট সম্প্রসারণ ইত্যাদি ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন আগামীদিনে ভারতীয় অর্থনীতিতে উত্তর পূর্বাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অর্থনীতি ও সামাজিক বিকাশ ত্বরান্বিত করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্ট পলিসি, ত্রিপুরা স্টার্টআপ পলিসি, উন্নতি প্রকল্প, আইপ্যাট, ত্রিপুরা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পলিসি, চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনা, সুশাসন দপ্তর স্থাপন, মহিলাদের ক্ষমতায়নে রাজ্য নীতি, ত্রিপুরা আগর পলিসি, ত্রিপুরা স্যাটেলাইট ডেভেলপমেন্ট টাউনশিপ স্কিম, চা নিলাম কেন্দ্র, টাটা টেকনোলজিস লিমিটেডের সাথে ১৯টি আইটিআই-এর উন্নতিকরণে চুক্তি, শিল্পনগরীগুলিতে পরিকাঠামো উন্নয়ন গৃহীত পদক্ষেপগুলির মধ্যে অন্যতম।
ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায়, সমবায়মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, রাজ্য পুলিশের ডিজিপি (ইন্টিলিজেন্স) অনুরাগ ধ্যানকর উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অতিথিগণ ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য দিবসের একটি ফোন্ডারের আবরণ উন্মোচন করেন। তাছাড়াও একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রতীকের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে ৫টি নাগরিক পুরস্কার, ১০টি পূর্ণরাজ্য দিবস পুরস্কার সহ চিফ মিনিস্টার্স সিভিল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে ত্রিপুরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে। বর্তমান সময়ে স্কিল ডেভেলপমেন্ট অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। শিক্ষার্থী সহ যুবক যুবতীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে বিশেষভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বহিরাজ্যের শিল্প উদ্যোগীদের রাজ্যে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন শিল্প সহায়ক পদক্ষেপগুলির কথা মুখ্যসচিব উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন বলেন, বর্তমানে সর্বক্ষেত্রে ত্রিপুরার উন্নয়ন ও প্রগতির চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে। রাজ্যের উন্নয়ন, অগ্রগতি সহ শান্তি বজায় রাখতে রাজ্য পুলিশ দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে কাজ করছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী রাজন্য আমল থেকে ত্রিপুরার গণতান্ত্রিক উত্তরণের চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি বিকশিত ত্রিপুরা গড়ার সংকল্পে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন।