Site icon janatar kalam

মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যের সামগ্রিক চিন্তাধারা রাজ্য ও প্রজার কল্যাণে নিবিষ্ট ছিল: মুখ্যমন্ত্রী

জনতার কলম আগরতলা প্রতিনিধি :-মাণিক্য রাজ বংশের শেষ রাজা মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য ছিলেন সত্যিকারের স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর দূরদর্শী চিন্তাভাবনায় রাজ্যের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাজার, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু হওয়ার পাশাপাশি অভূতপূর্ব উন্নতিও ঘটেছিল। তাঁর সামগ্রিক চিন্তাধারা রাজ্য ও প্রজার কল্যাণে নিবিষ্ট ছিল। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর দেববর্মণের ১১৭তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনের রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শচীন কলইকে এবছরের মহারাজা বীরবিক্রম স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে তাকে স্মারক, মানপত্র এবং ১ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য তাঁর স্বল্প আয়ুষ্কালে রাজ্য ও রাজ্যবাসীর কল্যাণে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের উন্নয়নে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন তিনি। হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেও সর্বধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন তিনি। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা পরিকাঠামোর উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারও মহারাজার চিন্তাধারাকে পাথেয় করে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে ব্রতী হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত রাজ্য সরকারগুলির সময়ে ত্রিপুরার রাজাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলেই রাজ্যের একমাত্র বিমানবন্দরের নাম মহারাজা বীরবিক্রমের নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। তাঁর জন্মদিবস ১৯ আগস্টকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জন্মদিবসে কেবলমাত্র মহারাজার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেই হবে না, তাঁর আদর্শ ও চিন্তাধারা সম্পর্কে বর্তমান প্রজনন্মকে অবহিত করতে হবে। দেশভাগের সময় পূর্ব বাংলা থেকে আসা অগণিত মানুষকে তিনি উদারহস্তে খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যার মাধ্যমে মহারাজার মানবিক মূল্যবোধের চরিত্র ফুটে উঠে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে মাণিক্য রাজবংশের শেষ চার জন রাজার এক বিশেষ সম্পর্ক ছিল। মহারাজা বীর বিক্রমই কবিগুরুকে ভারত ভাস্কর উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার রাজ্যের পুরোনো কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ধারক ও বাহক করে রাজ্যের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস ও সবকা বিশ্বাস এটি শুধু স্লোগানই নয়, সাধারণ মানুষের প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দায়িত্ববোধকে প্রকাশিত করে। ভারতবর্ষ বহুবার বিদেশি শক্তির আক্রমণের শিকার হয়েছে। তারপরেও এদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আজও বিদ্যমান। যা ভারতীয় হিসেবে আমাদের গর্বের।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা লাভে এবং বর্তমানে তা রক্ষার কাজে যেসকল মহান ব্যক্তিরা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের জীবন ও দর্শন সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে ওয়াকিবহাল করার লক্ষ্যে এক অভূতপূর্ব কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। কারণ বীর শহীদদের বলিদানকে উপেক্ষা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, জনজাতি সকলেই এ দেশের সন্তান। সবার সার্বিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই মহান দেশ গঠন সম্ভব।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সমবায়মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া বলেন, বর্তমান সরকারের সময় রাজাদের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে। রাজ্য ও রাজ পরিবারের প্রতি এখনও রাজ্যের মানুষ শ্রদ্ধাশীল। অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংসদ কৃতী দেবী দেববর্মণ বলেন, ত্রিপুরার রাজা ও রাজ পরিবার সর্বদাই এ রাজ্যের জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে গেছে। প্রান্তিক এই রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নে জাতি, জনজাতি সকলকে ভ্রাতৃত্ববোধে আবিষ্ট হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি. কে. চক্রবর্তী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্যের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। তাছাড়া মহারাজার জীবন ও কর্মকান্ড নিয়ে অনুষ্ঠানে একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুরনিগমের মেয়র বিধায়ক দীপক মজুমদার, পদ্মশ্রী স্বামী চিত্তরঞ্জন মহারাজ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জগদীশ গণচৌধুরী, রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির সহ-সভাপতি সুব্রত চক্রবর্তী এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য।

এদিকে, সকালে কামান চৌমুহনিস্থিত জিরো পয়েন্টে স্থাপিত মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্যের মর্মর মূর্তিতে মাল্যদান করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার সহ কর্পোরেটরগণ।

Exit mobile version