জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- রাজ্যে গত দু’দিনে ভারী বর্ষণের ফলে বেশ কয়েকটি মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ভুত বন্যা পরিস্থিতিতে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে এখন পর্যন্ত ২০০টিরও বেশি টিমকে কাজে লাগানো হয়েছে। সারা রাজ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত মোট ১৮৩টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। আজ বিকেলে সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে একথা জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির কথা জানিয়ে রাজস্ব সচিব জানান, অতি বর্ষণজনিত কারণে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী রাজ্যের তিন জেলায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমস্ত ধরণের ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা রাজ্যের বাইরে থাকলেও তিনি নিয়মিতভাবে উদ্ভুত পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান, এখন পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতিজনিত কারণে খোয়াই জেলায় ১ জন, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ৫ জন এবং গোমতী জেলায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গোমতী ও খোয়াই জেলায় আরও দু’জনের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ রয়েছে বলে জানা গেছে। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্স, আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবী, অগ্নিনির্বাপক ও জরুরি পরিষেবা দপ্তর, বন দপ্তর ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ নিগম, পূর্ত দপ্তর, কৃষি দপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীগণ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয়ভাবে কাজ করছে। রাজস্ব সচিব আরও জানান, রাজ্যে যে সমস্ত ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে এরমধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ২৪টি, গোমতী জেলায় ৬৮টি, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ৩০টি ও খোয়াই জেলায় ৩৯টি শিবির খোলা হয়েছে। অবশিষ্ট শিবিরগুলি রাজ্যের বাকি ৪টি জেলায় খোলা হয়েছে।
এই সব ত্রাণ শিবিরে ৫ হাজার ৬০৭টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ শিবিরগুলিতে আশ্রয়কারীদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, পানীয়জল, শিশু খাদ্য, ঔষধপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। রাজ্যস্তরে মুখ্যসচিব সহ প্রত্যেক জেলার জেলাশাসকগণ পরিস্থিতির উপর নিয়মিত নজরদারি রেখে চলেছেন। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট মহকুমার মহকুমা শাসক, বিডিও এবং পূর্ত দপ্তর, বন দপ্তর, আরক্ষা প্রশাসন, অগ্নিনির্বাপক ও জরুরি পরিষেবা দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীগণ ২৪ ঘন্টা ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ সহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরলস কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, হাওড়া, ধলাই, মুহুরী এবং খোয়াই নদীর জলস্তর বিকাল ৪টায় বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে চলছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, অযথা উদ্বেগ বা আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান, বর্ষণজনিত কারণে বিভিন্ন এলাকায় ভূমিধসে গাছপালা পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে প্রশাসনের তরফ থেকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই বর্ষণের ফলে বাড়িঘর, গবাদি পশু এবং ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ শুরু হলেও চূড়ান্ত রিপোর্ট পেতে আরও কিছু সময় লাগবে। সচিব জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পরেই ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের গাইডলাইন অনুসারে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজস্ব দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব তমাল মজুমদার এবং ত্রাণ, পুনর্বাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের অধিকর্তা জে ভি দোয়াতি।