Site icon janatar kalam

বিহারে এনডিএ-র জয় নিশ্চিত দাবি মোদীর: “ফির একবার, এনডিএ সরকার”

জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- বৃহস্পতিবার বিহারের মুজফ্ফরপুর ও ছপড়ায় পরপর দুটি নির্বাচনী সভা করে কংগ্রেস ও আরজেডিকে (RJD) একহাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে জনসমর্থন জোরদার করতে গিয়ে মোদী বলেন, “বিহারের উন্নয়ন ছাড়া ভারতের উন্নয়ন অসম্ভব। কিন্তু কংগ্রেস–আরজেডি কখনোই বিহারকে এগিয়ে নিতে পারবে না। ওদের রাজনীতির ইতিহাস কাট্টা, ক্রুরতা, কুশাসন ও করাপশনে ভরা।”

মোদীর বক্তব্যে কংগ্রেস ও আরজেডির জোটের বিরুদ্ধে যেমন তীব্র সমালোচনা ছিল, তেমনি তিনি তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক উদ্যোগ ও নারী ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি।

ছপড়ার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নরেন্দ্র–নিতীশ মানুষের স্বপ্নপূরণে ব্যস্ত। আর কংগ্রেস–আরজেডি বিহার ও বিহারবাসীর অপমান করছে।” তিনি অভিযোগ করেন, “তেলেঙ্গানা ও কর্ণাটকে কংগ্রেস নেতারা বিহারিদের গালাগাল দেয়, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে নেতারা বিহারিদের নির্যাতন করে। অথচ কংগ্রেস সেই নেতাদেরই ভোটপ্রচারে এনেছে। এটা একটা পরিকল্পিত চক্রান্ত, যাতে রাজদের ক্ষতি হয়। কংগ্রেস–আরজেডির মধ্যে যে বিবাদ ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, সেটাই এর প্রমাণ।”

মোদীর কথায়, “যারা বিহারকে অপমান করেছে, তাদের কংগ্রেস সম্মানিত করছে। এটা বিহারের মানুষকে অপমান করার সমান।”

রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিগুলিকে “প্রতারণা” বলে আখ্যা দেন মোদী। তাঁর কথায়, “জঙ্গলরাজের নেতারা মানুষকে ভুল পথে চালাচ্ছে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। রাজদ ও কংগ্রেসের ঘোষণাপত্র কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নয়— সেটা আসলে ‘রেট লিস্ট’। প্রতিটি প্রতিশ্রুতির পেছনে আছে ঘুষ, লুট, চাঁদাবাজি আর দুর্নীতি।”

তিনি আরও বলেন, “যেখানে কাট্টা ও ক্রুরতার রাজ চলে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা থাকে না; যেখানে কুশাসন ও করাপশন আছে, সেখানে সমাজে ন্যায়বিচার আসবে কীভাবে? তাই এরা কখনোই বিহারের মঙ্গল করতে পারবে না।”

মুজফ্ফরপুরের সভায় মোদী বলেন, “আমাদের সরকার চেষ্টা করছে ছট মহাপর্বকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে। একদিকে আমি ছট মাইয়ার নাম বিশ্বমঞ্চে তুলতে চাইছি, আর অন্যদিকে কংগ্রেস–রাজদের নেতারা ছট মাইয়ার অপমান করছে। ভোট পাওয়ার জন্য কেউ কি ছট মাইয়ার অপমান করতে পারে?”

তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “বিহারের মা-বোনেরা যাঁরা ছটের দিন উপবাস করে মাইয়ার আরাধনা করেন, তাঁরা এই অপমান কখনো ভুলবেন না। এর জবাব বিহারের মানুষ ভোটের মাধ্যমে দেবে।”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে মোদী আসলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের জবাব দেন। রাহুল অভিযোগ করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছট উৎসবকে “ড্রামা” হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং যমুনায় নয়, “সুইমিং পুলে স্নান” করে অভিনয় করছেন। বিজেপি এখন এই মন্তব্যকে ছট মাইয়ার “অপমান” হিসেবে তুলে ধরে রাজনৈতিক প্রচার জোরদার করেছে।

আরজেডি শাসনের সময় ঘটে যাওয়া অপরাধ ও অপহরণের ঘটনাগুলি স্মরণ করিয়ে মোদী বলেন, “জঙ্গলরাজের সেই দিনগুলো মনে আছে তো? তখন ৩০ থেকে ৪০ হাজার অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। গাড়ির শোরুম লুট হয়ে যেত, মানুষের প্রাণ ছিল অনিরাপদ। গোলু অপহরণ কাণ্ডে একটি ছোট্ট শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল। এটাই ওদের পরিচয়— কাট্টা, ক্রুরতা, কটুতা, কুশাসন আর করাপশন।”

মোদীর মতে, “এরা উন্নয়নের কথা বললে তা হাস্যকর শোনায়, কারণ যারা রেল লুট করেছে, তারা সংযোগ বাড়াবে কীভাবে? যারা জমি দখল করেছে, তারা শিল্প আনবে কীভাবে?”

মুজফ্ফরপুরের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানকার লিচুর মতোই মিষ্টি এখানকার ভাষা। বিহারের পরিচয় লিচু, মগহি পান, মাখানা আর ছট উৎসব। আমাদের প্রচেষ্টা, এগুলোকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা।”

তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার ছট মহাপর্বকে মানবতার উৎসব হিসেবে ইউনেস্কোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে।

মোদী বলেন, “আমরা ঘর দিয়েছি, আর সেই ঘরের কাগজ দিয়েছি মহিলাদের নামে। এক কোটি ২০ লাখ বোনের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারে। আমরা এখানেই থামব না— নারীদের আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন উদ্যোগ আসছে।”

কংগ্রেস ও আরজেডি আক্রমণ করে মোদী বলেন, “একজন দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারের যুবরাজ, আরেকজন বিহারের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারের যুবরাজ। দু’জনই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতিতে জামিনে আছে। এরা আমাকে গালি না দিলে খেতে পারে না। নামদাররা এই কাজদারকে গালি দেবেই।”

বিহারের মহাগঠবন্ধন নিয়ে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই জোট আসলে তেল আর জলের মতো। একসঙ্গে থাকতে পারে না। ওদের একটাই লক্ষ্য— ক্ষমতায় এসে বিহারকে লুটে নেওয়া।”

বক্তৃতার শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকের এই বিশাল ভিড়ই বলে দিচ্ছে— বিহারে আবার সুশাসনের সরকার ফিরছে। বলুন— ‘ফির একবার, এনডিএ সরকার!’”

Exit mobile version