Site icon janatar kalam

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নানাভাবে আক্রমণ হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে আমাদের সবার প্রতিবাদ করা উচিত : মুখ্যমন্ত্রী 

জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- রাজ্যের ক্লাবগুলি বিভিন্ন জনহিতকর কর্মসূচির আয়োজন করছে। সমাজের প্রতি ক্লাবগুলির দায়বদ্ধতা অনেক বেড়েছে। এতে ক্লাবগুলির প্রতি এলাকাবাসীর আস্থা অনেক বেড়েছে। ক্লাবের বিভিন্ন কর্মসূচিতে মহিলাগণ ব্যাপকভাবে অংশ নিচ্ছেন। তাতেই বোঝা যায় এলাকার পরিবেশ সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আগামীদিনেও এই পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। আজ সন্ধ্যায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে শারদ সম্মান-২০২৪ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে এবছর মায়ের গমন এবং শারদ উৎসবে উৎকর্ষতার জন্য বিভিন্ন বিভাগে রাজ্যের ৪৭টি ক্লাব ও পুজো কমিটিগুলিকে আজ পুরস্কৃত করা হয়।

 

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে শারদ উৎসব আয়োজন করার জন্য ক্লাবগুলিকে পুরস্কৃত করায় আগামীদিনে অন্য ক্লাব এবং পুজো উদ্যোক্তারাও অনুপ্রাণিত হবে। রাজ্যের বিভিন্ন ক্লাবের মধ্যে বর্তমানে স্বাস্থ্যসম্মত প্রতিযোগিতা হচ্ছে। ক্লাবগুলি রক্তদান, বস্ত্রদান, স্বচ্ছতা অভিযানের মতো বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করছে। প্রসঙ্গক্রমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নানাভাবে আক্রমণ হচ্ছে। এই ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় আমাদের সেনা জওয়ানদের আত্মত্যাগের পাশাপাশি ত্রিপুরার সাধারণ মানুষের অবদানও কম নয়। একথা ভুলে গেলে চলবে না। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঘটনায় আমাদের সবার প্রতিবাদ করা উচিত।

 

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, এবারের শারদোৎসবে সারা রাজ্যেই বিভিন্ন ক্লাব এবং পুজো কমিটিগুলি সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে শারদোৎসবের আয়োজন করেছে। ক্লাবগুলিকে উৎসাহিত করতেই শারদ সম্মানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজ্য সরকার এবং ক্লাবগুলির সহযোগিতার জন্যই কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া এবছর শারদোৎসব অতিবাহিত হয়েছে। রাজ্যের বিধ্বংসী বন্যায় বিভিন্ন ক্লাব রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। অনুষ্ঠানে আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে শারদোৎসবের আয়োজন করায় ক্লাব এবং পুজো উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আগের তুলনায় দুর্গাপূজার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা ভালো বলেই আরও বেশি করে মানুষ শারদোৎসবে অংশ নিয়েছেন। আগামীদিনেও এই পরিবেশ আমাদের বজায় রাখতে হবে।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানান তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্ট াচার্য। তিনি বলেন, শারদোৎসবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎকর্ষতার জন্য পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার ১৫টি ক্লাবকে এবং রাজ্যের অন্য ৭টি জেলার ২৮টি ক্লাবকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। মায়ের গমনে অংশ নেওয়া ৪৬টি ক্লাবের মধ্যে ৪টি ক্লাবকে আজ পুরস্কৃত করা হচ্ছে তাদের সুন্দর উপস্থাপনার জন্য। এরমধ্যে দুটি ক্লাব যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হয়েছে।

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী। উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের শিল্পীবৃন্দ। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর আয়োজিত শারদ সম্মান ২০২৪ অনুষ্ঠানে এবারের মায়ের গমন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিজয়ী ক্লাব ও পুজো কমিটিগুলিকে পুরস্কৃত করা হয়। এবারের মায়ের গমনে প্রথম হয়েছে আগরতলার ব্লাডমাউথ ক্লাব। যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হয়েছে আগরতলার শতদল সংঘ এবং আগরতলা পৌর পূজা কমিটি। তৃতীয় হয়েছে আগরতলার মৌচাক ক্লাব। মায়ের গমনে বিজয়ী দলগুলিকে সুদৃশ্য ট্রফি, শংসাপত্র ছাড়াও আর্থিক পুরস্কার হিসেবে প্রথম স্থানাধিকারীকে ৫০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীকে যথাক্রমে ৩০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

 

পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় শ্রেষ্ঠ থিম বিভাগে প্রথম হয়েছে যোগেন্দ্রনগরের অগ্রদূত ক্লাব। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে আগরতলার প্যারাডাইস সামাজিক সংস্থা ও কসমোপলিটন ক্লাব। শ্রেষ্ঠ পরিবেশবান্ধব পুজোয় প্রথম হয়েছে রাণীরবাজারের আপনজন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে আগরতলার শতদল সংঘ ও আপনজন ক্লাব। শ্রেষ্ঠ মন্ডপ সজ্জায় প্রথম হয়েছে আগরতলার চলমান সংঘ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে রাণীরবাজারের নেতাজি সুভাষ সংঘ ও আগরতলার মৌচাক ক্লাব। শ্রেষ্ঠ প্রতিমা বিভাগে প্রথম হয়েছে আগরতলার জুয়েলস অ্যাসোসিয়েশন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে চন্দ্রপুরের তুষার সংঘ ও আগরতলার গ্রিন অ্যারো ক্লাব। বড়বাজেটের পুজোর মধ্যে প্রথম হয়েছে আগরতলার ফ্লাওয়ার্স ক্লাব। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে আগরতলার ছাত্রবন্ধু ক্লাব ও যুবসমাজ। রাজ্যের অন্যান্য জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ থিম বিভাগে ধলাই জেলার কমলপুরের আপনজন ক্লাব,ঊনকোটি জেলার কৈলাসহরের শ্রীরামপুর সংহতি ক্লাব, উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধর্মনগরের আপনজন ক্লাব, খোয়াই জেলার সিঙ্গিছড়ার দ্বীপ জেলে যাই সংঘ, সিপাহীজলা জেলার বিশালগড়ের বিশ্বপ্রিয় ক্লাব, গোমতী জেলার উদয়পুরের রবীন্দ্রপল্লি এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনীয়ার ওরিয়েন্টাল ক্লাব। শ্রেষ্ঠ পরিবেশবান্ধব বিভাগে ধলাই জেলার লংতরাইভ্যালির ইয়ং রাইজিং স্টার, ঊনকোটি জেলার কৈলাসহরের রামকৃষ্ণ মিশন, উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরের নিউ সংহতি ক্লাব, খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়ার বুলেট ক্লাব, সিপাহীজলা জেলার জম্পুইজলার সপ্তম ব্যাটেলিয়ন টিএসআর, গোমতী জেলার অম্পির এগিয়ে এলো সংঘ এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাব্রমের ভারত সংঘ। শ্রেষ্ঠ মন্ডপসজ্জা বিভাগে ধলাই জেলার কমলপুরের নবজাগরণ সংঘ, উনকোটি জেলার কুমারঘাটের চিত্তরঞ্জন ক্লাব, উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধর্মনগরের পদ্মপুর ক্লাব, খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়ার প্রোগ্রেসিভ ইয়ুথ ক্লাব, সিপাহীজলা জেলার বিশালগড়ের তরুণ সংঘ, গোমতী জেলার উদয়পুরের সুব্রত ক্লাব এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনীয়ার ব্লাড মাউথ। শ্রেষ্ঠ প্রতিমা বিভাগে ধলাই জেলার আমবাসার রামকৃষ্ণ সেবা সদন, ঊনকোটি জেলার কাঞ্চনবাড়ির ইন্ডিয়া ক্লাব, উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধর্মনগরের কনসেনসাস ক্লাব, খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়ার সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত, সিপাহীজলা জেলার বিশালগড়ের রাউৎখলা যুব সংঘ, গোমতী জেলার উদয়পুরের এসি মিলান ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বাইখোড়ার কসমোপলিটন ক্লাব। অনুষ্ঠানে অতিথিগণ বিজয়ী ক্লাব ও পুজো কমিটিগুলির প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। শারদ সম্মানে বিভিন্ন বিভাগে বিজয়ী ক্লাবগুলিকেও সুদৃশ্য ট্রফি, শংসাপত্র ছাড়াও প্রথম স্থানাধিকারীকে ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্থানাধিকারীকে ৭ হাজার টাকা ও তৃতীয় স্থানাধিকারীকে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

 

 

Exit mobile version